• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুহাম্মদ (সা.) এর অলৌকিক নিদর্শন বা মোজেজা (৩য় পর্ব)

  অধিকার ডেস্ক    ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৭

রাসূল
ছবি : প্রতীকী

১১. হত্যার প্রচেষ্টা-

ইবনে ইসহাক বলেছেন, নবী (সা.) কে দুনিয়া হতে সরানোর জন্য একের পর এক হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছিল। একবার আবু জেহেল বলেছিল, হে কুরাইশগণ! তোমরা লক্ষ্য করেছ যে, মুহাম্মদ আমাদের ধর্মের কুৎসা রটানো এবং আমাদের দেব-দেবীদের নিন্দা করা হতে বিরত হচ্ছে না, তা ছাড়া দাদা-পরদাদাকে অনবরত দোষারোপ করে যাচ্ছে। এই কারণে আমি আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছি যে, আমি একটি ভারী পাথর দিয়ে তাঁর মাথা চুর্ণ-বিচুর্ণ করে ফেলব, তাঁর পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমি তাঁর জন্য প্রস্তুত।

পরদিন সকালে আবু জেহেল একটি ভারী পাথর নিয়ে রাসূল (সা.) এর অপেক্ষায় বসে রইল। কুরাইশ অধিপতিরাও একে একে সকলেই আবু জেহেলের কর্মকান্ড দেখার অপেক্ষায় রইল। এদিকে মুহাম্মদ (সা.) যথা সময়ে কা’বার সামনে উপস্থিত হয়ে নামাজ আদায় করতে শুরু করলেন। যখন তিনি সিজদায় চলে গেলেন তখন আবু জেহেল পাথরটি নিয়ে তাঁর দিকে অগ্রসর হলে তৎক্ষনাৎ ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় পিছু হটে আসল, তখন কতিপয় কুরাইশ অধিপতি তার পেছন ফিরে চলে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করল,কী হলো আবুল হাকাম (আবু জেহেল)?

আবু জেহেল বলল, আমি আমার প্রতিশ্রুতি পালন করতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু মুহাম্মদ এর কাছে যাওয়া মাত্র দেখি যে, আমার এবং তাঁর মাঝে একটি বিরাট উট এসে দাঁড়াল। আল্লাহর কসম! আমি কখনও এত বড়, এত লম্বা ঘাড় এবং এত বড় দাঁত বিশিষ্ট উট কখনও দেখিনি। উটটি আমার উপর হামলা করতে উদ্যত হয়েছিল।

রাসূল (সা.) বলেন, উটের বেশে ফেরেশতা জিবরাঈল আঃ. এসেছিলেন। আবু জেহেল আমার আরও কাছে আসলে উটরূপী জিবরাঈল আঃ. তাকে পাকড়াও করতেন। (ইবনে হিশাল-১/২৮৯-৯০)

ওকবা ইবনে আবু মুঈত বিখ্যাত পৌত্তলিক ছিল। একবার এই দুরাচার নামাজে সিজদাহ দেওয়ার সময় রাসুল (সা.) এর গলা চাদর দিয়ে এমনভাবে পেঁচিয়ে ধরলেন যে, যেন তাঁর চক্ষুদ্বয় বের হয়ে যাবে। এমন সময় আবু বকর রাঃ. এসে ওকবার দুই কাঁধ ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললেন, তোমরা কি এমন ব্যক্তিকে হত্যা করতে চাও যে বলে আমার প্রভু আল্লাহ, তখন তারা মুহাম্মদ (সা.) কে ছেড়ে দিয়ে আবু বকর রাঃ. এর উপর ঝাপিয়ে পড়ে। (মুখতাসারুস সীরাত- ১১৩পৃ)

১২. রাসুল (সা.) এর দু’আ-

মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি কাফির কুরাইশদের নির্যাতন নিপীড়নের প্রতিকুল পরিবেশে আরও একটি অনূকুল ঘটনা ঘটল। রাসুল (সা.) দু’আ করেছিলেন, হে আল্লাহ! ওমর ইবনে খাত্তাব এবং আবু জেহেলের মধ্যে যাকে তুমি ইচ্ছা কর তাকে ইসলাম গ্রহণে সুযোগ দান করে ইসলামকে মজবুত কর ও মর্যাদাময় কর। নবুঅতের ষষ্ট বছরের জিলহজ মাসে হযরত আমীর হামজা রাঃ. এর ইসলাম গ্রহণের তিনদিন পর হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাঃ. ইসলাম গ্রহণ করেন। (তিরমিযী- ৩৬৮১)

১৩. চাঁদ দু’ টুকরো হলো-

মক্কার কাফিররা রাসূল (সা.) এর কাছে অসম্ভব ও অবাস্তব আবদার করত। একবার কোনো পূর্ণিমা রাতে দাবী করে বসলেন যে, আপনি যদি আকাশের চাঁদকে দু’টুকরো করে দেখাতে পারেন তাহলে আমরা আপনার ধর্ম গ্রহন করব। রাসুল (সা.) তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলী দ্বারা চাঁদের প্রতি ইশারা করলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় ইশারা করার সাথে সাথে চাঁদ দু’টুকরো হয়ে আবু কুবাইশ ও কাইকাআন নামের দুটি পাহাড়ে অবস্থান করলো।

আগের পর্ব পড়তে : মুহাম্মদ (সা.) এর অলৌকিক নিদর্শন বা মোজেজা (২য় পর্ব)

মক্কার কাফেররা এই বিষ্ময়কর ঘটনা দেখে ঈমান আনা তো দূরের কথা তারা বলাবলি করল, মুহাম্মদ (সা.) আমাদের চোখের উপর জাদু করেছে। কেউ কেউ বলতে লাগলো হায়রে! মুহাম্মদের জাদু আকাশেও চলে। (তাফসীর ইবনে কাছীর- ১৭/১৮২ পৃঃ)

১৪. শুকনো ওলান দুধে ভরে গেল-

মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় রাসূল (সা.) উম্মে মা’বাদ নামে এক মহিলার বাড়িতে কিছুক্ষণের জন্য যাত্রা বিরতি করেন। যার আতিথ্যিয়্যের জন্য মদীনার আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলে অপেক্ষায় আছেন। আজ তিনি উম্মে মা’বাদের বাড়িতে স্বেচ্ছায় অতিথি হয়েছেন। এ ভাগ্যবতী মহিলার চেয়ে সৌভাগ্যবতী আর কে আছে?

দীর্ঘ মরুপথ অতিক্রম করে আল্লাহর রাসূল (সা.) ক্লান্ত-শ্রান্ত, উপরন্তু তিনি ভীষণ ক্ষুধার্তও ছিলেন। রাসূল (সা.) তাঁর বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার কাছে কোনো খাবার আছে কি? মহিলা উত্তরে বললেন, যদি কিছু থাকতো তাহলে আপনাদের মেহমানদারী করতে মোটেও অপেক্ষা করতাম না, বকরীগুলোও মাঠে।

রাসূল (সা.) বলেন, এ বকরী এখানে কেন? মহিলা উত্তর দিলেন, এটা খুবই দুর্বল, হাঁটতে পারে না, তাই মাঠে পাঠানো হয়নি। রাসূল (সা.) বললেন, যদি অনুমতি দেন, তাহলে এর দুধ দোহন করি? মহিলা বললেন, হ্যাঁ, যদি দুধ পান তাহলে দোহন করতে পারেন। দুর্বলতার কারণে মুলত তার ওলান শুকিয়ে পেটের সাথে লেগে গিয়েছে এবং তার স্তনে কোনো দুধই ছিল না।

কিন্তু রহমত বরকত ও কল্যাাণের নবী ঐ বকরীটির কাছে গেলেন এবং বরকতপূর্ণ হাতখানা ওলানে বোলালেন ও আল্লাহর নাম নিয়ে দুআ করলেন। কুদরতে এলাহীর অপার মহিমায় সাথে সাথে বকরীর ওলান দুধে ভরে গেলো, আর বকরীটি তার পেছনের পা দুটি ফাঁক করে দাঁড়ালো।

নবী (সা.) একটি বড় পাত্র নিয়ে দুধ দোহন করলেন। অতপর সাথীদের নিয়ে তিনি নিজে খেলেন এবং উম্মে মা’বাদকে পান করালেন। এরপর আবার দোহন করে পাত্রটি ভরে উম্মে মা’বাদ এর হাতে দিয়ে বিদায় নিলেন।

উম্মে মা’বাদ বলেছেন, রাসূল (সা.) এর বরকতের পরশে বরকতমণ্ডিত এই বকরীটি হযরত ওমর রাঃ. এর শাসনকাল পর্যন্ত জীবিত ছিল। আমরা প্রতিদিন বিকেল বেলা বকরীর ওলান দোহন করে দুধ পান করতাম, অথচ খড়া ও দুর্ভিক্ষের সময়ে কারো বকরী দুধ দিত না। (শাওয়াহীদুন নবুঅত- ৯৭পৃ)

চলবে...

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড