ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
বাক সংযম করা খুব সহজ কাজ নয়। বলা হয়ে থাকে, লৌহ তরবারির আঘাত ও তীরবিদ্ধ জখমের উপশম আছে, কিন্তু বাকতরবারির ও কথার তীরের আঘাতের কোনো উপশম নেই। তরবারির ক্ষতস্থানের ব্যান্ডেজ আছে, কিন্তু জিহ্বার আঘাতের কোনো ব্যান্ডেজ নেই। তরবারি আঘাত করে বাহ্যিক অঙ্গে আর জিহ্বা আঘাত করে অন্তরের মর্মমূলে। এজন্য কিয়ামতের মাঠে অনেক মানুষ জাহান্নামি হবে তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার প্রতি খাস রহমত করেছেন, তার জন্য খুবই সহজ। উপরন্তু সে পরকালে সফলকাম হবে।
মহান আল্লাহ কুরআনুল কারিমের অসংখ্য জায়গায় মুমিনদের বাকসংযমের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন:
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ
الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
অর্থ: অবশ্যই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনম্র, যারা অসার ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে। (সুরা আল মুমিনুন :১-৩)
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا
অর্থ: এবং যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়। (সুরা ফুরকান :৭২)
مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
অর্থ: মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী একজন ফেরেশতা তাদের নিকটে রয়েছে। (সুরা ক্বাফ :১৮)
وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولـئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولاً
অর্থ: যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই সে বিষয়ে অনুমান করে কথা বলো না। কেননা- কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় ওদের প্রত্যেকের বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সুরা: বনি ইসরাঈল :৩৬)
يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থ: সে দিন তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, হাত ও পা তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে। (সুরা নুর :২৪)
জিহ্বা সংযত রাখার ব্যাপারে মহানবির (সা.) নির্দেশনা
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে নয়তো বা চুপ থাকে।’ (সহিহ বুখারি :৬০১৮)
‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও গুপ্তাঙ্গের জামিন হবে আমি তার জন্য বেহেশতের জামিন হব।’ (সহিহ বুখারি :৬৪৭৪)
জিহ্বা সংযত রাখার পদ্ধতি
(ক) মুমিন যখনই কোনো কথা বলার ইচ্ছা করবে তখন তার দ্বারা দীনি উপকার ও কল্যাণ আশা করবে। (খ) মুমিন যখনই কোনো বাক্য উচ্চারণের ইচ্ছা করবে তখন তার চিন্তা করা উচিত যে, তার উক্ত কথাতে কোনো উপকার আছে কি না। থাকলে বলবে নয়তো বা বলবে না। কেননা, জ্ঞানীর জিহ্বা থাকে তার হৃদয়ের পশ্চাতে। তাই যখন সে কিছু বলার ইচ্ছা করে তখন সে হৃদয়ের নিকট পরামর্শ গ্রহণ করে। যদি তা বলা উপকারী হয় তাহলে বলে, নচেৎ বলে না। পক্ষান্তরে মুর্খের হৃদয় থাকে জিহ্বার আগে, সে বলার পূর্বে হৃদয় ভাবে না। ফলে মুখে যা আসে তাই বলে ফেলে। অতঃপর বলার পর লজ্জিত হয়ে আফসোস করে।
জিহ্বা সংযত রাখার উপকারিতা
(ক) আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা অর্জিত হয়। (খ) জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি লাভ হয়। (গ) জান্নাতের সুসংবাদ অর্জিত হয়। (ঘ) গুনাহ কম সংঘটিত হয়। (ঙ) চরিত্র ও ব্যবহার সুন্দর হয়। (চ) তিরস্কার, লাঞ্ছনা ও অশান্তি থেকে নিষ্কৃতি লাভ হয়। (ছ) সর্বদা অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়। (জ) ইবাদতের সওয়াব অর্জিত হয়; নীরব থাকাও বিনা কষ্টের এক ইবাদত। (ঝ) বাক তরবারির আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড