• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা এখন বাংলাদেশে

  জোবায়ের আহমেদ

০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৩৮
প্রতীকী
ছবি : প্রতীকী

সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য সুচিকিৎসার প্রয়োজন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটা মানুষের মেডিকেল চেক আপ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু নানাবিধ সমস্যার কারণে এসব সেবা গ্রহণে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষত, বাংলাদেশের মানুষ যখন দেশের বাইরে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে যাচ্ছে তখন তাদের নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

বিষয়টি খুব স্বাভাবিক নয় কি? নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গা। পরিচিত মানুষও নেই। চিকিৎসা সেবা প্রার্থীদের যেন এসব ঝামেলায় পড়তে না হয় অর্থাৎ তাঁরা যেন সুন্দর স্বাভাবিক এবং নির্মল পরিবেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারেন, সে লক্ষ্যেই নিরলসভাবে কাজ করছে একদল লোক। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখন বাংলাদেশেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উন্নত মানের চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে।

গন্তব্য: বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি রোগীদের পছন্দের তালিকার প্রথমেই রয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলো। ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা নিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই যান ভারতে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে মোট দুই লাখ ২১ হাজার ৭৫১ জন বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারত গেছেন।

ভারতের কমার্শিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকসের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সেবা রপ্তানির বিষয়ে পরিচালিত এক জরিপ বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬০ হাজার জন বিদেশি রোগী ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের মধ্যে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৬৫ হাজার।

জরিপে আরও জানানো হয়, ভারতে বিদেশি রোগীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই বাংলাদেশি এবং দেশটির মেডিক্যাল ট্যুরিজম খাতের অর্ধেক আয় আসে বাংলাদেশি রোগীদের কাছ থেকে। যা ভারতের মেডিক্যাল অ্যান্ড হেলথ ট্যুরিজম খাতের সবচেয়ে বড় অবদানকারী।

পরিসংখ্যান কী বলে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানের ওপর সর্বশেষ যে র‌্যাংকিং প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম। সার্ক ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উপরে রয়েছে কেবল শ্রীলঙ্কা৷ তাদের অবস্থান ৭৬তম। ভারত ১১২ এবং পাকিস্তান রয়েছে ১২২তম অবস্থানে। অন্যদিকে ভুটান ১২৪, মালদ্বীপ ১৪৭, নেপাল ১৫০ এবং সবথেকে পিছনে রয়েছে আফগানিস্তান ১৭৩তম অবস্থানে৷ রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভারতের চেয়ে ভালো বলে এই র‌্যাংকিংয়ে প্রতীয়মান হয়েছে।

দেশের বাইরে চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে রোগীদের যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়-

ভাষা: মানুষের মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। ভাষা গত সমস্যা থাকলে মানুষে মানুষে ফলপ্রসূ যোগাযোগ সম্ভবপর হয় না। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চিকিৎসা সেবা গ্রহণে বিদেশে যায়। ভাষা গত সমস্যার কারণে রোগীরা নানান ক্ষেত্রে তাদের মনের ভাব চিকিৎসকের কাছে প্রকাশ করতে পারেন না।

খাবার: প্রতিটি দেশের সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্নতা। খাবার সংস্কৃতির অংশ। তাই প্রতিটি দেশের খাবারেও রয়েছে ভিন্নতা। বাংলাদেশ থেকে যেসব সেবা প্রার্থী বিদেশে যান তারা খাবার নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েন। পছন্দের খাবার খুঁজে পেতেও একটা দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়।

আবাসন ব্যবস্থা: বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে যাওয়ার পর প্রথম যে সমস্যা বেশি প্রকট হয় সেটি আবাসন বা থাকার ব্যবস্থা। কারণ চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে দীর্ঘ সময় সে দেশে অবস্থান করতে হয়। এক্ষেত্রে তাদের হয়তো হোটেল বা বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। অনেক সময় সুবিধা মতো জায়গাও খুঁজে পাওয়া যায় না। পছন্দসই জায়গায় থাকতে হলে গুণতে হয় বাড়তি খরচ।

ভ্রমণ: দেশের বাইরে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রোগীদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় দীর্ঘ ভ্রমণ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। বয়ো:বৃদ্ধ এবং সংকটাপন্ন রোগীদের এক্ষেত্রে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যারা বিভিন্ন বাহনে ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না তাদেরও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

সময়সীমা: একেকটি রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ধরন একেক রকম। জটিল রোগের চিকিৎসা দীর্ঘসময় ধরে করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে যেসব চিকিৎসা প্রার্থীরা বিদেশে যান তাদের চিকিৎসা বাবদ বিপুল অংকের টাকা খরচ হয়। এবং এর পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হয়।

ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া: বিদেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে যাওয়া বাংলাদেশিদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো ভালো ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া। ভালো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সঠিক চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর।

দালালের দৌরাত্ম্য: বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের ক্ষেত্র বিশেষে দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। এতে করে সেবা প্রার্থীরা তথ্যগত এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

ভিসা প্রসেসিং: সঠিক সময়ে ভিসা না পাওয়ার কারণে অনেক সময় বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া রোগীদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আগে থেকেই যেখানে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করবে সেখানে ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে শুরু করে থাকার জায়গা ফরমাশ দেওয়া থাকে। সঠিক সময়ে ভিসা না পেলে চিকিৎসাসেবা প্রার্থীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা এখন বাংলাদেশে: বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে দেশটি। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও দেশটি বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশেই এখন অভিনব পদ্ধতির উন্নত সেবা পাওয়া যাচ্ছে, যা রোগীদের বিদেশমুখীতা বহুলাংশে কমিয়েছে।

সর্বাধুনিক প্রযুক্তি: বাংলাদেশের রোগীদের এসব ঝামেলার কথা বিবেচনা করে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উন্নত মানের সেবা দিচ্ছে বেশ কিছু হাসপাতাল। বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে এসব হাসপাতালগুলো।

অভিনব পদ্ধতি: দেশের বেশ কিছু হাসপাতাল এখন অভিনব পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে। এসব হাসপাতালে রিজেনারেটিভ পদ্ধতিতে রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করছে। এছাড়াও, এসব হাসপাতালগুলো স্ট্যাম্প সেল থেরাপির মাধ্যমেও রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।

অত্যাধুনিক ল্যাব: বাংলাদেশের বেশ কিছু হাসপাতাল অত্যাধুনিক মলিকুলার ল্যাবের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করছে। এসব ল্যাবে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়। এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে পারে।

খ্যাতি সম্পন্ন ডাক্তার: বাংলাদেশের বেশ কিছু হাসপাতালে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডাক্তারদের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ঝামেলা বিহীন চিকিৎসা সেবা: বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে এখন ঝামেলা বিহীন চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ ওয়ান-স্টপ-সার্ভিসের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে হাসপাতালগুলো।

চিকিৎসা সেবা প্রদানে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। চলতি বছরের মার্চে দক্ষিণ এশিয়ার একজন প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন দেশের চিকিৎসকদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। দেশের এই অত্যাধুনিক হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করলে রোগীদের বিদেশ গিয়ে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না। এতে করে তাদের টাকা-পয়সা ও সময় বাঁচবে। এর ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

লেখক : সাংবাদিক

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড