• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ছারাকে আমার মনে পড়েছে

  রহমান মৃধা

০৭ আগস্ট ২০২৩, ১৩:২০
ছারাকে আমার মনে পড়েছে
সমুদ্রের ধারে সূর্যাস্ত উপভোগ করছেন তরুণী ও ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

ছারা আমার দুই ক্লাস উপরে পড়ে, পরে জেনেছিলাম। বয়স বা চেহারায় বুঝতে পারিনি যে সে আমার বড়। তাছাড়া সিনিয়র বা বড় হলেও বা কী আসে যায়? বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝে মধ্যে পার্টির আয়োজন করা হয়।

বাদ্যযন্ত্রের সাথে চলে নাচগান। শুক্রবার রাতে ছাত্রজীবনে যদি কেউ তা উপভোগ না করে থাকে ধরে নিতে পারেন তার ছাত্রজীবন বৃথা ইউরোপ বা আমেরিকাতে। হতে পারে সে পড়ুয়া শিক্ষার্থী তার মানে এই নয় যে সে প্রকৃত জীবনের পুরো সময়টি বিসর্জন দিবে শুধু পুঁথিগত বিদ্যার কারণে।

জীবনের প্রতিটি স্তরের সময়গুলোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে নানা ধরনের কার্যক্রমের ওপর। প্রেম-ভালোবাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটাকে এড়িয়ে গেলে জীবনের পরিপূর্ণতা পাওয়া যাবে না। ছারা আমাকে বেশ কিছুক্ষণ ফলো করছে। আমারও চোখ পড়েছে তার দিকে কিন্তু কথাবার্তা হয়নি।

আমি সেদিন আমার দুই আমেরিকান বন্ধুর সাথে আড্ডায় জমে আছি। তারপরও পরস্পর পরস্পরকে ফলো করছি। কোনো এক পর্যায়ে ছারা আমার কাছে এসে বললো নাচবে? আমি বেশ আনন্দের সঙ্গে বললাম, "হ্যাঁ!"

The bengal's eternal flame- Close your eyes, give me your hand, darling

Do you feel my heart beating?

Do you understand?

Do you feel the same?

Am I only dreaming?

Is this burning an eternal flame?

সময়টি হবে ১৯৮৮-র দিকে। ছারা বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মনের আনন্দে গান গেয়ে চলছে। আমার বুকের ভেতর খানিকটা ধড়পড় শুরু হয়েছে। আমি প্রথম দিকে কিছুটা হাল্কা-পাতলা ভাবে ধরেছিলাম পরে ধরাধরি নিয়ে ভাবনা মাথায় কাজ করছে না।

আমি ছারার হৃদয়ের স্পন্দনে ঢুকে গেছি। হঠাৎ গানটি শেষ হয়ে গেল ছারা আস্তে করে আমাকে ছেড়ে শুধু বলে গেল আমার সঙ্গে নাচার জন্য ধন্যবাদ।

নাচ শেষে বন্ধুদের মাঝে ফিরে এলাম, আমি সীমিত সময়ের জন্য কিছুটা অন্যমনস্ক হলেও পরে সবকিছু বেশ স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল। সেদিন রাতের বিষয়টি আবেগের স্পর্শ পেলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি। এক মাস পরে আবারও ছারার সঙ্গে দেখা।

ভেবেছিলাম হাই হ্যালো কিছু একটা বলবে কিন্তু দেখে মনে হলো আমাকে সে কোনোদিন দেখেই নি। তবুও আমি তাকে হাই বললে সেও শুধু হাই বলে পাশ কেটে চলে গেল।

এখন আমি মোটামুটি নিশ্চিত হলাম এখানের মেলামেশা বা এক সঙ্গে নাচগান করা এটা নেহায়েত অতি সাধারণ ঘটনা এবং আমাকে সেইভাবেই তৈরি হতে হবে, মানসিক দিক দিয়ে।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের মতো (আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি, আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি) ভাবলে আমার বারোটা বাজবে। অতএব শক্ত হতে হবে। যে কথা সেই কাজ এমনটি ভাবখানা নিয়ে নতুন জীবন শুরু। কিন্তু প্রতিনিয়তই ছারার সঙ্গে দেখা হয়, হাই এন্ড বাই ছাড়া আর কিছু হয় না। তারপরও মনের মধ্যে দুর্বলতা বাসা বেঁধেছে। কী করা! সাহস করে একদিন বলে ফেললাম তোমাকে আমি ভালোবাসি।

ছারা কিছুটা রসিকতার ছলে বললো, কোথায় ভালোবাসো? আমি তো কিছুই অনুভব করতে পারছি নে, আমার মনে বা ধ্যানে ধরা বা ছোঁয়ার কোনো আভাস পাচ্ছি না অথচ তুমি বলছো আমাকে ভালোবাসো। কথাগুলো মুখের উপরে বলে চলে গল। ভাবলো না আমার মনটার কথা, ভাবলো না আমার হৃদয়ে ব্যথা! মনটা সেদিন বেশ ভেঙ্গে গিয়েছিল, তবে ছারাকে বুঝতে দেইনি।

ঘটনাটির ইতি এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু না, হবে কী করে? শুরুই তো হয়নি। বেশ কিছুদিন পর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেস্টুরেন্টে জানালার পাশে একটা টেবিলে একা একা বসে লাঞ্চ করছি। হঠাৎ ছারা এসে বললো রহমান আমি কি বসতে পারি তোমার টেবিলে?

উত্তরের অপেক্ষা না করেই বসে পড়ল। আমি বললাম প্লিজ। ছারা নিজ থেকে সেদিনের সেই পুরনো কথা তুলে বলতে শুরু করলো, আমি তোমার অনুভূতিটা সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম তবে তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো নাকি শুধু সুইডিশ রমণী, কিছুটা একজোটিক তাই মুখের বুলিটা সেদিন আমাকে ছুঁড়ে দিয়েছিলে কি-না--- সেটা যাচাই করতে একটু কড়া করে তোমাকে ওইভাবে বলেছিলাম। আমি সেদিনের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।

আমাদের সুইডেনে সাধারণত এভাবে কেউ ভালোবাসি কথাটি শুরুতে বলে না। কারণ ভালোবাসা পরীক্ষিত হতে হয় প্রথমে, তার পরেই না প্রকাশিত হবে। ফুল যখন ফোটে সে ফুল শুধু ফুটেই ক্ষান্ত হয় না, সে তার শোভা এবং গন্ধ ছড়ায় তারপরই না কোনো এক সময় ফলে পরিণত হয়। আমি শুধু শুনছি ছারার যুক্তিযুক্ত কথাগুলো।

কোনো এক প্রসঙ্গে ছারা বললো, যদি বলি আমি তোমার একজন ভালো বন্ধু হতে চাই নিতে পারবে আমাকে আপন করে? আমি বললাম দেখো ভালো লেগেছিল সেদিন তাই সরাসরি বলেছিলাম তবে বন্ধু না সঙ্গিনী সে অবধি যাবার সুযোগ তো তুমি দাওনি সেদিন? একটু মুচকি হেসে হঠাৎ বললো তাহলে এখন আর ভালোবাসো না?

আমি কথা না বলে হাতটি মুখের পাশ দিয়ে একটু স্পর্শ করে দিলাম মাত্র। তখন বললো আমার নাম ছারা, আমি ইতোমধ্যে তোমার সম্পর্কে তোমার ক্লাসের বান্ধবী সাবিনার থেকে সব জেনেছি, এ কথা বলে ছারা আমার হাতটি ধরে বেশ সোহাগ এবং আদর করতে লাগলো। এতক্ষণে টের পেলাম আমি ভালোবাসা অনুভব করছি, স্পর্শ করছি এবং সেটা ধরা-ছোঁয়ার মতো একটি অনুভূতি যা হৃদয় দিয়েই অনুভব করা যায়। ছারার সঙ্গে বেশ মিশেছি, আমরা এক সঙ্গে ঘুরেছি, পরস্পরকে ভালোবেসেছি। ফুল ফুটেছিল তবে ফলে পরিণত হয়নি।

ছারার আচরণ আমাকে কষ্ট দিয়েছিল ঠিকই সেদিন, যেদিন আমার ভালোবাসাকে সে কিছুটা হেয় প্রতিপন্ন করেছিল, কিন্তু তার সঙ্গে আমার যেটুকু সময় কেটেছে এবং যা ঘটেছে বা যতটুকু আমি আমার লেখায় তুলে ধরেছি, কী মনে হয়? যাই মনে হোক না কেন আমি বলতে চাই ভালোবেসে, ছারা, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখেছিল--- তার মনের মন্দিরে।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড