• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জাতীয় ফল কাঁঠালই বলে দিবে আমরা কেমন জাতি!

  রহমান মৃধা

০২ জুলাই ২০২৩, ২৩:১৯
জাতীয় ফল কাঁঠালই বলে দিবে আমরা কেমন জাতি!
কাঁঠাল ও ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

আম, জাম, কলা, লিচু, তরমুজ, পেঁপে, আনারস সবকিছু ফেলে কাঁঠাল, যার মধ্যে রয়েছে হাজার বিচি এবং সেই বিচি ঢাকা পড়েছে এক অমৃত স্বাদের রসে ভরা স্বর্গীয় নিয়ামত। কিন্তু সেই নিয়ামত অতি আনন্দ এবং তৃপ্তির সঙ্গে খাবার সুযোগ হাজার টাকা দিলেও পাওয়া যাবে না যদি সেটা দুর্নীতিযুক্ত হয়। কাঁঠালও কি তাহলে দুর্নীতির কবলে পড়েছে?

কাঁঠাল মূলত একটি অত্যন্ত উপকারী ও রসালো মৌসুমী ফল। এই ফলের পুষ্টিগুণও অনেক। তারপরও কাঁঠাল কিছু কিছু মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এই ফলে নানা ধরনের খনিজ, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভান্ডার রয়েছে। তাই নিয়মিত কাঁঠাল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ভালো। তবে জানলে অবাক হবেন কাঁঠাল অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে দেহে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া যাদের এলার্জি রয়েছে তারা কাঁঠাল খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি।

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অদ্ভুত ব্যবহারের কারণে অনেকেই অ্যালার্জিতে ভোগেন। আসলে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তির ইমিউনিটি নিরীহ কিছু উপাদানের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করে,,ফলে শরীরে একাধিক লক্ষণ দেখা দেয়। আর এমন অ্যালার্জি কিন্তু কাঁঠাল খেয়েও হতে পারে। আসলে কাঁঠালে রয়েছে পোলেন এবং ল্যাটেক্স আর এই দুই উপাদানের কারণে অনেকের শরীরে অ্যালার্জি দেখা দেয়। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্যও কাঁঠাল ক্ষতিকর সেক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে কাঁঠাল খেলেই অসুস্থ হবেন।

কেননা, এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেকটাই বেশি। ফলে ব্লাড সুগার বৃদ্ধি পায় দ্রুত গতিতে। আবার সার্জারির পর কাঁঠাল খেলেই সমস্যা। কারণ সার্জারির পরপর রোগীকে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। আর সেই ওষুধের সঙ্গে বিক্রিয়া করতে পারে কাঁঠাল। এছাড়া সার্জারির আগেও কাঁঠাল খেলে সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। যে কোনো সুস্থ ব্যক্তি, অর্থাৎ যাদের ডায়াবেটিস, প্রেশার, কোলেস্টেরল বা অন্যান্য ক্রনিক রোগ নেই, তারা প্রতিদিনই কাঁঠাল খেতে পারেন।

আমি দেশ ছেড়েছি সেই চল্লিশ বছর আগে। এখনও সেই ছোটবেলার কাঁঠালের স্বাদ জিহ্বায় লেগে আছে। কাঠাল আমাদের জাতীয় ফল। স্বাভাবিকভাবেই কাঁঠাল খেতে মন চায় কিন্তু কেন দেশ থেকে ভালো কাঁঠাল বিদেশে পাঠানো হয় না, কারণ কী? জাতি কতটা ভালো বা মন্দ সেটা কিন্তু একটি কাঁঠাল বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে পারে।

জাতির দুর্নীতির মাত্রা কত বেশি, জানতে হলে একটি জাতীয় ফল কাঁঠাল কিনতে হবে, ব্যাস হয়ে গেল জানা। আমি সেই চল্লিশ বছর ধরে চেষ্টা করে চলেছি কবে একটি ভালো কাঁঠাল কিনতে পারব! সুইডেনে বাংলাদেশের মাছ, শাক-সবজি এবং ফল পাওয়া যায়, বিশেষ করে গ্রীষ্মে। আম, লিচু এবং কাঁঠাল গ্রীষ্মে আসে কিন্তু দুঃখের বিষয় সেগুলো খাবার উপযোগী না।

আমি লন্ডনেও গিয়েছি কিন্তু ভালো আম, কাঁঠাল বা মাছ কিনতে পারিনি এ পর্যন্ত। জাতির চরিত্র এত খারাপ হতে পারে এটা জানতে দেশে যাবার দরকার নেই। কাঁঠালসহ সবকিছু নিয়ে লিখতে গেলে লেখা শেষ করতে পারব না বরং কাঁঠাল নিয়ে থাকি। সুইডেনে কাঁঠাল কেজি দরে বিক্রি হয়। গতকাল পাঁচ কেজি ওজনের একটি কাঁঠাল কিনেছি, স্টকহোমের অদূরে একটি বাঙালি দোকান থেকে।

এবছর কাঁঠালের কেজি ৬৫ সুইডিশ ক্রোনার (১ ক্রোনার =১০ টাকা)। কাঠাল বাড়িতে এনে ভেঙ্গেছি কিন্তু কাঠাল মেলেনি, এমনকি বিচিগুলিও বড় হতে পারেনি। জানিনে কোন কেমিক্যাল ঢুকিয়ে এত কচি কাঁঠাল নরম করেছে বাঙালি জাতি। পুরো কাঁঠালটি শেষে ফেলে দিতে হয়েছে। আমের অবস্থাও ঠিক একই। সুইডেনে যারা এ ব্যবসা করে তারা বলে ঠিক এইভাবে---আমরা ভেতরের দায়িত্ব নিতে পারব না। দেশ থেকে যা পাঠিয়েছে আমরা সেটাই বিক্রি করছি, এখন আপনার ভাগ্য ভালো হলে ভালো না হলে আমাদের কিছু করার নেই।

সুইডিশ কর্তৃপক্ষ কিছু করবে না কারণ তারা তো জানেই না কাঁঠাল খেতে কেমন। দেশের মানুষ মনে করে তারা ব্যবসা করে হালাল রোজগার করছে। আসলে কি তাই? দেশের একটি জাতীয় ফল, তার প্রতি এত অত্যাচার এবং অবিচার? আজ প্রথম মাথায় চিন্তা এসেছে কেন এতদিনেও একটি ফল এক্সরে মেশিন তৈরি করিনি? তাহলে দুষ্ট লোকদের থেকে রেহাই পেতাম। যে জাতি ভোট চুরি করে তারা সব ধরনের খারাপ কাজ করতে পারে সে বিষয় আমি নিশ্চিত। তারপরও মনে হচ্ছে এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করা উচিত তাই অতি অপ্রিয় সত্য কথাগুলো লিখতে বাধ্য হলাম। আমার মনে হচ্ছে ব্যবসা করে যারা, দুর্নীতি বেশি করে তারা। দেশের সবকিছু পেতে চাই, খেতে চাই, চড়া দামে কিনতে চাই কিন্তু খাবার ভালো হোক সেটাই কিন্তু আশা করি। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ কী?

কিভাবে এ ধরনের খাবার দেশ থেকে আসতে পারে? কোটি কোটি টাকা পাচার হয় কেউ জানে না। পঁচা এবং জঘন্য খাবার বিদেশে পাঠানো হয় প্রশাসন জানে না। তারা কী জানে? আর কী করে? সরকার কী তাদের বেতন দেয় না? কী পরিমাণ দুর্নীতি এর পেছনে জড়িত? লজ্জা এবং ঘৃণাই শুধু বেড়ে চলেছে দেশের অসৎ এবং দুর্নীতিবাজদের প্রতি। দূরে আছি কেন? সবাই জানতে চেয়েছে। উত্তর দিলাম শেষে ফলের ঘটনার মাঝে। কাঁঠাল যখন জাতীয় ফল, জাতির চরিত্র কেমন বলো? জানতে যদি চাও, বাংলাদেশের একটি কাঁঠাল সুইডেনে কিনে খাও তাহলে বুঝবে কত ধানে কত চাল।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

(মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা একান্ত লেখকের মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।)

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড