• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অসুস্থ পৃথিবী

  মইশান শাওন

২৭ জুন ২০২৩, ১৫:২৯
অসুস্থ পৃথিবী
মইশান শাওন (ফাইল ছবি)

পৃথিবীটা নাকি ভ্রূণের জন্য অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। রেডিয়েশন আর কেমিক্যালের মতো হাজারো ভারী শব্দে পৃথিবী চাপা পরে হাহাকারে মত্ত। পৃথিবীতে একটা প্রজন্মের শৈশবের দৃশ্য বদলে গেলো কত সহজে। আহারে...!

পিঠ ব্যথা, আর গায়ের রঙের জন্য কত কমার্শিয়াল ডায়াগ্রাম। রাজনীতি চলে গেল ব্যবসায়ীদের হাতে, ব্যবসা চলে গেল মজুদদারের হাতে, আর পৃথিবীটা চলে গেল গুটিকয়েক মানুষের হাতে। জোনাকি পোকা কমে গেলো চারপাশে; একটা প্রজন্মের চোখ নিচে কালি পরে গেল কেবল প্রেমের শোকে।

আমজনতার প্রয়োজনগুলোকে গুলি করে হত্যা করা হলো। একটা স্বাধীন দেশ পুনরায় পরাধীন হওয়া কতটা নিদারুণ এই পৃথিবী দেখিয়ে দিল বারবার। ধর্মের মুখে থু দেয়া হলো কতবার করে। এক কোপে কাটা হলো মুক্ত চিন্তার মস্তিষ্কগুলোকে।

ডাক্তার বিক্রি হলো, শিক্ষক বিক্রি হলো, সাংবাদিক বিক্রি হলো দলে দলে। গাছ কাটা হলো নির্বিচারে। শিল্পীদের দাম দেয়া হলো না কোথাও; কিংবা একটি হাতে আঁকা ছবিরও। সকাল-বিকাল খেঁক শিয়ালের মতো পায়ে কামড়ে ধরল ঔষধ শিল্প। মায়া বিক্রি হলো, প্রেম বিক্রি হলো কতবার করে।

বিশ্বাস ভাঙল। মানুষ বিক্রি হলো ধাপে ধাপে; কেউ মস্তিষ্ক কিনে নিয়ে গেল অপটিক্যাল ফাইবারে পেঁচিয়ে; কেউ নিল শরীর, কাদামাটির মতো ওজন করে। কোর্টকাছারি হয়ে গেল কাক মরে পরে থাকা একটা পরিত্যক্ত কুয়া। পারমাণবিক ঝনঝনানি বাড়লো। সীমান্তরক্ষীর চোখ চিড়ে বের হয়ে গেল মাদকের চোরাচালান।

কবর বিক্রি হলো; কত নিদারুণ গল্প তৈরি হলো। দখল হলো, বেদখল হলো কতকিছু। হিসেব কষলে আমরা কখনোই অন্ধকার গুহা, আর কাঁচা মাংস খাওয়া ছাড়তে পারলাম না! ক্রমশ যান্ত্রিক হলাম। ইটের শহরে আবেগ খুঁজে পেলাম। পাহাড় সমুদ্রকে দূরে ঠেলে দিয়ে হাহাকার শুরু করলাম।

একই গল্পের পুনরাবৃত্তি হলো ইংলিশে, উর্দুতে, স্প্যানিশ কিংবা ল্যাটিনে; আলাদা ভূগোলে। জলজ্যান্ত আন্দোলনগুলো ভাস্কর্য হয়ে দাড়িয়ে রইলো আজীবন। জ্ঞানকে সংকীর্ণ করে পুরে দিলাম বইতে; অতঃপর বই খোলাই বন্ধ হলো। ট্রয় নগরী নিয়ে আফসোস করতে করতে মানুষের বিবেকই ধ্বংস হয়ে গেলো একটা সময়। ধর্মের ঠোঙ্গায় রাজনীতি কিংবা রাজনীতির ঠোঙ্গায় ধর্ম ভরে বেচা-বিক্রি শুরু হলো দেশ-বিদেশে। শরণার্থীর মৃত্যু হলো।

ডায়নাসোরের মায়া কান্না শেষ হতে না হতেই শকুন পাখি হারিয়ে গেলো চিরতরে। জগতের সাত আসমান ছেঁদা করে কালো ধোঁয়া-ধোঁয়া গন্ধ স্বর্গ অবধি পৌঁছাল। বরফ গলে গেল হরহর করে, তাপমাত্রায় বেঁকে গেলো রেললাইন, মানুষের নৈতিকতার মতো। ছোট্ট দেশগুলো হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছে দিন মজুরের মতো।

শুনানির তারিখ পেছাল; ফাইলগুলোর বয়স হলো কয়েক হাজার বছর। গোয়েন্দা তৎপরতায় নিজের জীবন গিলে খেলো কত রাষ্ট্র। বারুদের গন্ধে বুকে শুকনা কাশি নিয়ে মরে যাচ্ছে কত জনপদ। মিউটেশন আসলো, জেনেটিক্স আসলো, রোবটিক্স আসলো, জাতিসংঘ আসলো, ক্রস পলিনেশনে পৃথিবী ভরে গেল; পৃথিবীটা আর সুস্থ হলো না একটুও। পৃথিবীটা ক্রমশ হয়ে উঠছে অনাগত ভ্রূণগুলোর জন্য এক টুকরা দোযখ!

লেখক, মইশান শাওন, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, নোবিপ্রবি।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড