• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সেদিনের সেই খোলা চিঠি!

  রহমান মৃধা

২৭ জুন ২০২৩, ১৩:২৫
সেদিনের সেই খোলা চিঠি!
খোলা চিঠি ও ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

বাংলাদেশকে ছেড়ে বহু বছর দেশের বাইরে। বাবা-মা মারা গেছেন সেই ২০০৬ সালে, তারপর দেশে একবার গিয়েছিলাম। সেই দেখা বাংলাদেশ আমাকে, আমার হৃদয়কে বড্ড কষ্ট দিয়েছিল যখন দেখেছিলাম দুর্নীতির ঝড়। সুইডেনে ফিরে এসে ধরেছিলাম কোনো এক সময় কলম এবং আমি লিখতে শুরু করি।

বিভিন্ন পত্রিকার সঙ্গে একটু সম্পর্ক হতে থাকে। হঠাৎ নিচের লিখাটি যখন প্রকাশ করতে বিভিন্ন যায়গায় দেই, সরে গেল সবাই, সরে গেল অনেক পরিচিত মুখ ভয়ে। কারণ যদি তারা বিপদে পড়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগে থাকলে।

আমার এই লিখাটির গুরুত্ব যদি সেদিন দেওয়া হতো এবং সত্যিই যদি লিখাটি শেখ হাসিনার নজরে পড়ত এবং যদি তিনি বিষয়গুলো জানার একটি সুযোগ পেতেন তাহলে আজকের পরিস্থিতি এরকম হতো না এ বিশ্বাস আমি আজও করি। নিয়তির পরিহাস পৌঁছেনি আমার এই খোলা চিঠি তার কাছে তখন। আমি নতুন করে সেই পুরনো কাহিনী জাতিকে আবারও জানাতে চাই।

গণতন্ত্র মানে বাক স্বাধীনতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, সৃজনশীল নাগরিক হিসাবে নিরাপদে ও গর্বের সাথে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করা। মতামতের ভিন্নতা এবং খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে যখন ঐক্যের সমন্বয় ঘটে ঠিক তখন জাতি স্বাধীনতার সুফল লাভ করে। পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, রাজনীতিবিদ বা সমাজের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে তখন সেখানে গণতন্ত্র জাতির জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায় বিধায় অপ্রিয় সত্য কথা বা সামাজিক আলোচনার বিষয়সূচি থেকে বঞ্চিত হয় জাতি।

সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ব্যক্তিসত্তা ও সুসম্পর্ক যেমন নষ্ট হয় তেমন হারাতে বসে মনুষ্যত্ব, বিলীন হয় গণতন্ত্র, আর ঠিক তখনই সৃষ্টি হয় দেশে অরাজকতার।

স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছর পরেও গণতন্ত্রের সর্বোত্তম চর্চা আমাদের সমাজে হয়নি। আজ অন্ধকারে থাকা কিছু সত্যকে আলোকের সম্মুখে তুলে ধরতে চাই দেশ ও জাতির সার্বিক মঙ্গলের জন্য। একটি উন্নয়নশীল জাতির বাজেটের বড় অংশ ব্যয় করা হচ্ছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য।

সশস্ত্র বাহিনীকে সঠিকভাবে কাজে না লাগিয়ে ব্যারাকে রাখা হয়েছে অনেকটা “স্লিপিং টাইগারের মত”। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, পার করছেন তারা তাদের চাকরির মেয়াদ আর মাঝে মধ্যে অকেশনালি সরকারের বা দেশের কিছু কিছু কাজে সাহায্য করা, নিজেদের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ন্ত্রণ করা, বিভিন্ন মিশনে যাওয়া এবং ডিজিএফআইকে কাজে লাগানো (সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কারণে, অকারণে এবং তাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারের সুবিধানুযায়ী) —এই ভাবেই চলছে দিন।

তারা বছরে কয়েকবার যেমন বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসে “সো আপ” করেন দেশ ও জাতিকে সান্ত্বনা দেবার জন্য যে আমরা আছি। “আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি, তোমার ভয় নেই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি”।

এমনটি যদি তাঁদের কমিটমেন্ট হয় তবে জাতির কাছে আমার শুধু এতটুকু বলার আছে তা হলো, কেন সশস্ত্র বাহিনীকে ঢাকার ভিতরে বা দেশের বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে (যেখানে কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল গড়ে উঠার কথা) রাখা হয়েছে? তাদেরকে কেন দেশের অন্যান্য এলাকাতে রাখা হয়নি? কিন্তু যদি সত্যিকারে তাদেরকে সোনার বাংলা গড়ার এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর থেকে দেশকে মুক্ত রাখার জন্য বেতন দেওয়া হয় দেশের মেহনতি মানুষের উপার্জিত অর্থ থেকে তবে তাঁদেরকে অবশ্যই সক্রিয় ভাবে কাজে লাগাতে হবে। আর দেরি নয়, সময় এসেছে ভাবার এবং কিছু করার।

সাধারণত আমরা এই পরিস্থিতিতে বলতে পারি বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বহিঃশত্রুর আক্রমণ হবে না। হবে হয়তবা সেদিন, যেদিন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সুশিক্ষা এবং দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারবে দেশবাসীর সাথে একত্রিত হয়ে। জনগণের প্রতিনিধির কাছে দেশকে হস্তান্তর করতে পারবে, ঠিক তখন থেকে শুরু হবে বহিঃশত্রু থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার কাজ। কারণ তখন সবার নজর পড়বে সোনার বাংলার উপর। সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যারাকে বন্দি করে না রেখে সোনার বাংলা গড়তে সরাসরি কাজে লাগানো হোক।

আফসোস! গণতন্ত্র মানে যদি ঘুষ, দুর্নীতি, অরাজকতা, নকল, অবিচার এসব হয় তাহলে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামলে গণতন্ত্রের অবমাননা কেন হবে? এটা কি জাতির জন্য ‘জোকস’? না কি অন্য কিছু! গণতন্ত্র কাগজে, কলমে বা মুখে বললেই কি হবে? এর জন্য দরকার সর্বোত্তম প্রাকটিস এবং কথার সাথে কাজের মিল থাকতে হবে।

অনেকটা নামে মুসলমান আর কাজে বেঈমান হলেতো চলবে না, লোক দেখানো কাজ আর কতদিন এসব চলবে? ৫২ বছর কি যথেষ্ট নয়? আর কতদিন চলবে এসব ধান্দাবাজি? সময় এসেছে সবাইকে একসাথে কাজে লাগানোর। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে কতজন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য রিটারমেন্টে গিয়েছেন অথচ যে কাজের জন্য তারা চাকরিতে ঢুকেছিলেন তা করার সুযোগ তাদেরকে দেয়া হয়নি।

ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে হয়, ইংল্যান্ডের প্রিন্স চার্লস তার জন্ম হয়েছিল রাজা হবেন ইংল্যান্ডের, কিন্তু তা হবার আগেই তিনি রিটারমেন্টে গেলেন। কারণ তার মা বেঁচে থাকার কারণে। তবে হ্যাঁ তিনি রিটারমেন্টের পরে সে দায়িত্ব পালন করবেন হয়তবা যদি তার মা মারা যান তাঁর আগে, তাছাড়া তিনি রাজপরিবারের সদস্য, তাদের এসব মানায়।

তিনি বর্তমান সময় পার করছেন চ্যারিটি কাজের মধ্য দিয়ে, (এখন তিনি রাজা হয়েছেন, তার মার মৃত্যুর পরে) তেমনটি তো হতে পারে না বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ক্ষেত্রে! তারা মিশন করে বেড়াচ্ছেন, এ দিকে তাদের নিজের দেশের অভ্যন্তরীণ হাজারো সমস্যা অথচ তাদেরকে সেই কাজে না লাগিয়ে পাঠানো হচ্ছে বাইরের মিশনে।

আমার কাছে এটা নিছক কিছুটা ফ্যানি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। বর্তমান রাজনীতির অবস্থা হয়েছে আরও জঘন্য। বাবা-মা বা দাদা দেশের মন্ত্রী ছিলেন এখন বংশের চোদ্দ গুষ্টি সেটা ভোগ করছেন। তারা ভুলে গেছেন বাংলাদেশে ১৭ কোটি লোকের বাস এবং তাদেরও একটা অধিকার রয়েছে তাদের জন্মভূমির উপর।

এটা কি গণতন্ত্র? নাকি রাজতন্ত্র? নাকি ভণ্ডামি তন্ত্র? নাকি ভোগতন্ত্র? কবে না শুনি যে বর্তমান যারা জেনারেল, সচিব বা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা আছেন তাঁদের ছেলে/মেয়ে পরে সেই পোস্ট দখল করছেন জন্মসূত্রে। কী হচ্ছে দেশে? আর কতদিন চলবে এসব অরাজকতা? এই অত্যাধুনিক যুগে, যুদ্ধ যদি শুরু হয়, তবে ছোটখাটো অস্ত্রের দরকার হবে কি, যেখানে রাসায়নিক ও পারমাণবিক অস্ত্র বা একটি কেমিক্যাল গ্যাস ছাড়লে শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা পৃথিবী ধ্বংস হবে, সেখানে বহির্বিশ্বের আক্রমণের কথা চিন্তা না করে, আপাতত দেশের ভিতরের যুদ্ধে জয় লাভ করা হোক বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মিশন এবং ভিশন।

একই সাথে সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি থেকে নিজেদের এবং দেশের অরাজকতা দূর করতে জাতির পিতার কন্যাকে সরাসরি সাহায্য করুন। রাজনীতিবিদের বিষয় কিছু না লিখলে পুরো সত্যকে তুলে ধরা হবে না। তারা নিজেরাও জানেন না তারা কী করছেন, তারা দেশকে ধ্বংস এবং অন্ধকারে ফেলে নিজেরা লুটপাট করছেন।

বিএনপির সবাই এখন জেল হাজতে দুর্নীতির কারণে, যারা ক্ষমতায় বর্তমান তারাও কিন্তু সেই একই কাজগুলো করছেন। পরে ক্ষমতাচ্যুত হলে তারাও জেল হাজতে যাবেন। জাতির পিতার কন্যার কাছে অনুরোধ, আপনার বাবার স্বপ্ন ছিল সত্যিকারে সোনার বাংলা গড়ার। আপনি দায়িত্বে যখন আছেন দয়া করে দুর্নীতিগ্রস্ত সবাইকে নিজের হাতে জেল হাজতে ঢুকিয়ে কিছু ভালো কাজ করুন।

ভালো মানুষের সাথে হাতে হাত রেখে মৃত বাবার স্বপ্নকে কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন করে যান। প্রায় এক যুগের বেশি সময় দেশ বিদেশের গণ্যমান্য লোকদের সাথে উঠাবসা করে ভালো যা কিছু শিখেছেন তাতে আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে।

একজন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসাবে সত্য কথাগুলো লিখলাম ইচ্ছাকৃতভাবে, আশা করি বিষয়গুলো বিতর্ক তৈরি করবে। একই সাথে দেখি বাংলাদেশে আদৌ গণতন্ত্র আছে কি? নাকি এই অপ্রিয় সত্য কথা লেখার কারণে দেশে আসা বন্ধ হয়ে যাবে আমারও? এটা কি লজ্জার নয় যে একটি স্বাধীন দেশকে বহির্বিশ্ব চাপ সৃষ্টি করেছে? দেশের জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে শেষে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ওপর অর্পিত করে এখন আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন গুনছে!

জনগণকে ডাকুন দরকারে ক্ষমা চান এবং নতুন করে দেশটিকে গড়তে সকলের সাহায্য কামনা করুণ আর দুর্নীতিবাজদের জেলে ভরুন। এখনো কিছু লোক আছে যারা সত্যিকারের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, তাদের নেতৃত্বে দেশের সবাইকে একত্রে কাজে লাগিয়ে সুশিক্ষার মধ্য দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাগজের টাকা মুক্ত সোনার বাংলা গড়াই হোক জাতির পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়ন।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

(মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা একান্ত লেখকের মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।)

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড