• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে সচেতনতা জরুরি

  ড. জান্নাতুল ফেরদৌস

২৬ জুন ২০২৩, ১২:৪৬
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে সচেতনতা জরুরি
ফাঁসির দড়ির সামনে নারী ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস (ফাইল ছবি)

আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বিবেচনা করা হয় পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে। তরুণদের প্রচেষ্টায় নির্ধারিত হয় আগামী দিনে দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি কেমন হবে। তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে।

এমনকি প্রতি বছর এই প্রবণতা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এখনই এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা উঠেছে।

বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়- ২০২০ সালে দেশে ৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। যেখানে ২০২১ সালে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। অর্থাৎ এ সংখ্যাটি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। ২০২২ সালেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ১০০ এর উপরে। বিষয়টি সচেতন প্রতিটি অভিভাবকের জন্য উদ্বেগের।

যদিও সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যেসব কারণে আত্মহত্যা করছেন তার অন্যতম কারণ সম্পর্কের অবনতি। আত্মহত্যা করাদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের অবনতির কারণে করেছে। এরপর রয়েছে পারিবারিক সমস্যার কারণে, যা ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এছাড়া মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, পড়াশোনা সংক্রান্ত কারণে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যায় ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মাদকাসক্ত হয়ে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

কিন্তু আত্মহত্যার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যার নেপথ্যে রয়েছে সম্পর্কে অবনতির। বিশেষত প্রিয়জনকে না পাওয়া কিংবা ছেড়ে চলে যাবার মতো বিষয়টি গুরুতর। এছাড়াও এ সংখ্যায় পারিবারিক জটিলতা, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট আত্মহত্যার মূল কারণ উল্লেখযোগ্য।

সম্প্রতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চালানো এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বিভিন্ন কারণে প্রায় ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী জীবনের কোনো না কোনো সময় আত্মহত্যার চিন্তা করেছেন। উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রায় ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

তবে অন্য সকল কারণ বিবেচনায় থাকলেও যেসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আত্মহনন করছেন তার মধ্যে সম্পর্কের অবনতিকে প্রধান হিসেবে নির্ণয় করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের প্রতি চারজনের একজন সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় আত্মহননের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

যদিও এ ক্ষেত্রে আরও বেশকিছু কারণ উল্লেখযোগ্য। যেমন র্যাগিং, পরিবার থেকে দূরে, মাদকদ্রব্য সেবন, অর্থনৈতিক চাপ, প্রেমে ব্যর্থতা, সামাজিক চাপ, বেকারত্ব।

আত্মহত্যার প্রবণতা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ার আগে আমাদের ভূমিকা নিতে হবে। এ প্রবণতা কমাতে হলে নীতিনির্ধারকদের প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখিত কারণ সমূহের প্রতিকার বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক এবং অন্যান্য সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখা আবশ্যক। পাশাপাশি গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে আরও বেশি করে সমন্বিত প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক হতাশার নেপথ্যে যে উল্লেখযোগ্য বেকারত্ব দায়ী রয়েছে বিষয়টি অনুমেয়। কাজেই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি ও কর্ম নিশ্চয়তা প্রদান। ক্রমবর্ধমান অসমতা দূরীকরণ ও সেই সাথে দরকার সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি। আরেকটি বিষয় হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরামর্শক নিয়োগ একটি ভালো উপায় হতে পারে।

কারণ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, সময়ক্ষেপণ না করে এখনই পদক্ষেপ নিতে না পারলে পরে আমাদের অনুশোচনা করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় দায়িত্বশীলদের অবদান রাখার সঠিক সময় এখনই।

আত্মহত্যা রোধ করা প্রায়শই সম্ভব এবং এর প্রতিরোধে আমি, আপনি সবাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি। কারও জীবনের কঠিনতম সময়ে আমাদের কর্মের মাধ্যমে-সমাজের সদস্য হিসেবে, বাবা-মা হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে, বন্ধু হিসেবে, সহকর্মী বা প্রতিবেশী হিসেবে অবদান রাখতে পারি।

যারা আত্মঘাতী হওয়ার মতো সংকটে ভুগছেন বা যারা কারও আত্মহত্যায় শোকাহত তাদের সহায়তায় আমরা সবাই ভূমিকা রাখতে পারি। তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ জীবনের জন্য যা অপরিহার্য। অন্যথায় এ মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

লেখক : ড. জান্নাতুল ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

(মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা একান্ত লেখকের মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।)

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড