• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা

  রহমান মৃধা

১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩২
বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধার ‘আমার বাংলাদেশ’ ও ‘জাগো বাংলাদেশ’ বইয়ের প্রচ্ছদ (ছবি : সংগৃহীত)

ইংরেজি বছরের মতো নতুন করে পহেলা বৈশাখ প্রত্যেক বছরই আসে! এসেছে এবারও ঘুরে ফিরে কিছুটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, ফিরে এসেছে কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে নতুন করে সেই দিন পঞ্জিকাটিতে। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষের উৎসব।

এসো হে বৈশাখ এসো এসো।

পুরাতনের বিদায়, নতুনের আগমনে আশা ভরসা ভালোবাসার স্বপ্ন ঘুরঘুর করছে চারপাশে। মনে হচ্ছে পরিবর্তন হবে, কিন্তু কিসের? ভাগ্যের! খুশিতে চোখে জল আসছে।

ভাবি, এ কিসের জল? নতুন কিছু পাওয়ার? নাকি হারাবার! নতুন বছর মানেই সবার কাছে নতুন দিনের প্রেরণা, নতুনভাবে জেগে ওঠার কল্পনা। অচেনা অজানার বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াই করার স্বপ্ন দেখা। তাই পুরনো দিনের গ্লানি ভুলে নতুনভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদেই এ দিনটিকে আপন করে নিতে এত আয়োজন।

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উদযাপন বাঙালির প্রাচীনতম ঐতিহ্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশে এই নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে সর্বজনীন উৎসবে। আবহমানকাল ধরে বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হচ্ছে বর্ষবরণের উৎসব।

হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান তথা বাঙালি জাতির একান্ত এ উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে সবাই।

বাংলার কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজে নতুন ফসলকে কেন্দ্র করে যে উৎসবের সূচনা, কালক্রমে সেটাই পরিণত হয়েছে নববর্ষ বরণ উৎসবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়েছে, বহুবার বদল হয়েছে শাসকের, কিন্তু বৈশাখ চিরন্তন উৎসবের রূপে জড়িয়ে রেখেছে বাংলার জনপদকে।

শহরে পহেলা বৈশাখ যে ব্যাপক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে গ্রামীণ জীবনে তার আমেজ ভিন্ন। নগর জীবনে এ দিন যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুন কাপড় পরার আয়োজনও। অতীতে গ্রাম বাংলায় সকালবেলা দই-চিড়া দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করার রেওয়াজ ছিল, এখন মনে হয় না সেটা আছে!

ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানাতো। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরানো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে, আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবের।

আমার ছোটবেলার দিনগুলোতে ঘোড় দৌড়ের প্রতিযোগিতা ছিল এক অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ বিনোদন। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হতো নববর্ষের উৎসব। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করতেন।

এদিন সাধারণত সব শ্রেণির এবং সব বয়সের মানুষ ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পোশাক পরিধান করে।

নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তরুণীরা লালপেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, খোপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা, কপালে টিপ পরে, আর ছেলেরা পরে পাজামা ও পাঞ্জাবি। কেউ কেউ ধুতি-পাঞ্জাবিও পরে।

ভাবনাতে ঢুকেছে সেই ফেলে আসা ছোটবেলার দিনগুলোর কথা, সেই হালখাতার কথা। একই সঙ্গে বড় ইচ্ছে করছে ভাবতে বাংলাদেশেকে যদি স্পেন বা সুইডেনের মত করে গড়তে পারতাম। যেখানে রয়েছে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস যা সহজে ভঙ্গ হয় না।যেখানে রয়েছে সাগরের ঢেউ যা এদের মনকে উদার করেছে। যেখানে রয়েছে সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের নিরাপত্তা। যেখানে রয়েছে গণতন্ত্রের পরিকাঠামো মজবুত যা সহজে নড়চড় হয় না।

এখানেও নতুন বছর প্রতি বছরের মতো নতুন বছর আসে এবং তা মধুময় স্মৃতি হয়ে ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী হয়ে থাকে। আমার ভাবনায় ঠিক এমন একটি পহেলা বৈশাখ দেখার ইচ্ছে জেগেছে।

বাংলাদেশে কবে আসবে এমন একটি পহেলা বৈশাখ? কবে সম্ভব হবে তা বাস্তবে রূপ দেবার? কবে গাইবে গান সেই রমনা পার্কের বটতলায় সবাই মিলে, যেখানে থাকবে না দিনের আলোয় এক অন্ধকার ভরা পহেলা বৈশাখ।

নতুন বছর মানেই সবার কাছে নতুনত্বের প্রেরণা, নতুনভাবে জেগে ওঠার কল্পনা। অচেনা অজানার বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াই করার স্বপ্ন দেখা। তাই পুরনো দিনের গ্লানি ভুলে নতুনভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদেই এ দিনটিকে আপন করে নিতে এত আয়োজন।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এবং আমরা বাঙালি জাতি। আমাদের একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সংস্কৃতি রয়েছে সেটাকে হঠাৎ করে নিষিদ্ধ করতে চেষ্টা করা, গ্রহণযোগ্য বা পালনযোগ্য না ভাবা, বৈশ্বিক চাপ বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কারণে- সেটা মনে হয় না বিজ্ঞতার চিন্তা! আমরা যেন ভুলবশত আত্মপ্রতারক না হয়ে পড়ি সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সমাজে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে শুধু মাত্র নিজের গোপন অসৎ উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য যদি কিছু করতে চেষ্টা করা হয় সেটা কখনো সুন্দর হতে পারে না।

পহেলা বৈশাখ (১৪ই এপ্রিল) সারা বিশ্বের বাঙালিদের জন্য একটি বিশেষ দিন। এই দিনটি নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী সকল জাতিগোষ্ঠী গর্বের সঙ্গে প্রতি বছরই পালন করে। এখানে ধর্মে বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী বলে কথা নেই, এখানে জাতিগত পরিচয়কে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ এবং সেটাকে পালন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। বাঙালির নৃতাত্ত্বিক ও আত্মিক পরিচয় বাংলা নববর্ষ/১লা বৈশাখ, আমরা যেন ভুলেও এমন কিছু না করি যা ব্যক্তিগত ও সম্প্রদায়গত বিশ্বাসকে জাতিগত পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক করে। তাহলে আমরা বিশ্বে একটি বড় দুর্ভাগা জাতিতে পরিণত হব। দূর হোক কুসংস্কার জয় হোক মানবতার, গড়ে উঠুক বাঙালির বাঙালিয়ান চর্চা মনে প্রাণে এবং ধ্যানে। এবারের পহেলা বৈশাখ হতে পারে কি ভবিষ্যৎ নির্মাণের চাবিকাঠি যা সবার জন্য বয়ে আনবে ভালোবাসা। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হলো ‘শুভ নববর্ষ’। সবাইকে নববর্ষের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

(মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা একান্ত লেখকের মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।)

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড