• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কীভাবে বাংলাকে বিশ্বভাষা করা সম্ভব?

  রহমান মৃধা

২৯ নভেম্বর ২০২০, ১৯:০০
অধিকার
ছবি : সংগৃহীত

বাংলা আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা। এ ভাষা রক্ষার জন্য আমরা প্রাণ দিয়েছি। আমাদের স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জন এবং চলছে এখন সারাবিশ্বে তার প্রচলন। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে চলে বাংলাদেশে গ্রন্থমেলা।

১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

এবারের মেলায় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিজয় বায়ান্ন থেকে একাত্তর’। সেই সঙ্গে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন যাত্রাও শুরু হবে এ মেলা থেকে। বাংলা ভাষায় কথা বলে এখন গোটা বিশ্বে প্রায় ৩২ কোটি কিন্তু শুদ্ধ বানানে কত মানুষ এই ভাষা লিখতে পারে? বানান নিয়ে অনেক পণ্ডিতের রয়েছে নানা পরামর্শও।

ভাষা হচ্ছে নদীর মতো। এর মুখে বাঁধ দিলে তা হ্রদে পরিণত হয়, বহমানতা থাকে না। বাংলা ভাষা সংস্কৃতের গর্ভ থেকে উৎপত্তি লাভ করে বহু বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে।

ভাষা বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯) বলেছিলেন তার সময়ে, ‘পাঁচ কোটি বাঙালির অধিকাংশই বানান ভুল করে।’ সেই আমল থেকে এখন পৃথিবীতে আমাদের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। বর্তমানে আমরা পৃথিবীর মধ্যে এক বৃহত্তম নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী। আমাদের সংখ্যা বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩২ কোটি হলেও আমরা কিন্তু আমাদের ভাষার শব্দগুলোর বানান সম্পর্কে এখনও একমত হতে পারিনি।

ইংরেজি ভাষার বর্ণমালা মাত্র ২৬টা। সেগুলো দিয়েই ইংরেজিতে সবকিছু লেখা যায়। সেই তুলনায় বাংলা ভাষার বর্ণমালা বেশ বড়। স্বরবর্ণ ১১টা, ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টা, মোট ৫০টা। এরপর আছে কার চিহ্ন, যুক্তবর্ণ ইত্যাদি নানা বিষয়।

আমরা এখনও ভাষার লিখিত রূপ বা বানান নিয়ে বিভ্রান্ত। ই, ঈ, হ্রস্ব-ইকার, দীর্ঘ-ঈ-কার উ, ঊ, হ্রস্ব-উ-কার, দীর্ঘ-ঊ-কার, ন, ণ, স, শ, ষ, জ, য ইত্যাদি বর্ণ, কার চিহ্ন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে বহু মানুষ। অনেকে বানান ভুলের আশঙ্কায় বাংলা লেখে না। অনেকে ইংরেজি হরফে বাংলা ভাষা লিখে মনের ভাব প্রকাশ করে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ও বাংলা ভাষাকে গণমানুষের ভাষা হিসেবে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলা ভাষার লৈখিক রূপের কিছু পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।

বাংলা ভাষার লেখ্য রূপ যদি বাঙালিদের কাছেই স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ না হয় তাহলে বিদেশিদের কাছে তা কিভাবে জনপ্রিয়তা পাবে? স, শ, ষ এর যে কোনো একটা; ই, ঈ এর মধ্যে যে কোনো একটা; হ্রস্ব-ইকার, দীর্ঘ-ঈ-কার এর মধ্যে যে কোনো একটা; উ, ঊ এর যে কোনো একটা; হ্রস্ব-উ-কার, দীর্ঘ-ঊ-কার এর যে কোনো একটা; ন, ণ, এর যে কোনো একটা; জ, য এর মধ্যে একটা; ত, ৎ এর মধ্যে একটা হলে কী ক্ষতি?

একটু উদার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমরা নিশ্চিতভাবে বাংলা ভাষাকে আরও সহজভাবে লেখার ব্যবস্থা করতে পারি বৈকি। ভাষার লিখিত রূপ সহজ সরল করতে পারলে আমরা সহজে বিশ্ব দরবারে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব এবং সম্ভব হবে, ব্যবসা, বাণিজ্যসহ সকল বিষয়ে যোগাযোগ সহজতর করা।

নিচের দুটো বাক্য লক্ষ্য করা যেতে পারে: ১। আমরা একটি মহান জাতি। ২। আমরা জাতি দিয়ে সুপারি কাটি।

ওপরের বাক্য দুটোতে ‘জাতি’ শব্দটা একই বানানে দুটো ভিন্ন অর্থ বহন করে। ‘যাতি’ এর স্থলে ‘জাতি’ দৃষ্টিকটূ হলেও বুঝতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না কিন্তু। আমরা উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভাষার লিখিত রূপ সংস্কারের জন্য উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করি, বাঙালির প্রাণের ভাষায় বাঙালি পৌঁছে যাক বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে স্বাচ্ছন্দে।

নানাভাবে বাংলাভাষাকে মজবুত করা দরকার। ডিজিটাল করতে হবে বাংলা ভাষাকে। দেশে বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যদ্রব্য কেনা বেচার ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সহজভাবে বাংলায় বিবরণ থাকতে হবে। দেশের প্রতিটি স্তরে বাংলার ব্যবহার মজবুত করতে হবে। আমি কোনো এক সময় যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক ব্রিটিশকে ভিক্ষা করতে দেখেছি সুন্দর ইংরেজি ভাষা জানা সত্ত্বেও।

সেখান থেকে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় ইংরেজি জানাটা বিরাট কিছু নয় বরং নিজ ভাষায় যদি সবকিছু সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারি তার মতো ভালো কিছু হতে পারে না। আল কুরআনকেও আমাদের বাংলাভাষায় সঠিকভাবে অনুবাদ করে বুঝে পড়তে হবে, আল্লাহ পাক রাব্বুল আল-আমিনের সান্নিধ্য পেতে, তার মহব্বত পেতে। নিজ ভাষায় আল্লাহকে স্মরণ করার মধ্যে আত্মতৃপ্তি রয়েছে।

মোদের গরব, মোদের আশা, আ’মরি বাংলা ভাষা।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।
চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড