• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শুভ জন্মদিন হুমায়ুন স্যার

  মাহবুব নাহিদ

১৩ নভেম্বর ২০২০, ১৯:৪৩
মাহবুব নাহিদ
মাহবুব নাহিদ

দিতে পারো একশো ফানুস এনে?

আজন্ম সলজ্জ সাধ- একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই।

নেত্রোকোনা জেলার মোহনগঞ্জ অভিমুখে একটি ট্রেন চলাচল করে। সেই ট্রেনটি হয়তো শুধু কিছু যাত্রী নিয়ে চলাচল করে কিন্তু সেখানে একজন মানুষের জন্ম হয়েছে যে কিনা নিজেই লাখো তরুণের স্বপ্নের। যাকে নিয়ে হাজার হাজার স্বপ্ন দেখে বেড়ায় স্বপ্নবাজরা। যার লেখা পড়ে দেউলিয়া, দিওয়ানা হয়ে গেছে লাখো মানুষ। যার লেখনীর যাদুতে উন্মাদ হয়ে গেছে বাংলাদেশের বইপ্রেমী মানুষেরা। যার বই পড়ে অনেকেই বই পড়তে শিখেছে। কেউ একটু বাউণ্ডুলে হয়ে গেছে হিমুর মতো, কেউ মিসির আলীর মতো রহস্য সমাধান করতে শুরু করেছে। তিনি আর কেউই নন, তিনি হচ্ছেন আমাদের মস্তিষ্কের মগজে আলপিন দিয়ে গুজে রাখা একটি নাম হুমায়ুন আহমেদ।

জননন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের আজ জন্মদিন। আজ তিনি আমাদের থেকে অনেক দূরে। তাকে আমরা আর কখনোই খুঁজে পাব না। কিন্তু তার অমর সৃষ্টি আমাদের সামনে ঘুরে বেড়ায়, আমাদের লোভ দেখায়। হুমায়ুন আহমেদ এখনো কতটা প্রাসঙ্গিক তা বলে শেষ করা যাবে না। আর তিনি আরো কতদিন যে প্রাসঙ্গিক থাকবেন তা বলে শেষ করা যাবে না। এখনো বইমেলায় গিয়ে মানুষ উন্মত্ত হয়ে হুমায়ুন আহমেদের বই খোঁজে। আসলে এই জাতিকে বইপাগল বানিয়েছেন এই মানুষটা। আমাদের আফসোস আর কিছুদিন থেকে যেতে পারলেন না তিনি। আর কিছুদিন থাকলে আর কয়টা বই হয়তো পেতাম আমরা। আসলে আমাদের চাওয়া পাওয়ার কোনো শেষ নেই। হুমায়ুন আহমেদের যেন প্রতিদিন নতুন একটা বই বের হয় এমন আশাই করবেন সবাই। আমরা যখন বই পড়তে বসি তখন হয়তো সামনে অনেক বই আসে। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের বউ সামনে এসে গেলে সেই লোভ সামলিয়ে অন্য কোথাও যাওয়া খুবই মুশকিলের ব্যাপার। তিনি যেভাবে গল্প বলেছেন তা যেন একদম আমাদের চোখের সামনে ভাসে। তার গল্পগুলো দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, অনুভব করা যায়। তার গল্পের বাঁকে বাঁকে হারিয়ে যাওয়া যায়। তার গল্পে চড়ে স্বপ্নে চলে যাওয়া যায়, গল্পে পাড়ি জমানো যায় আকাশে বাতাসে কিংবা পাতালে।

হুমায়ুন আহমেদ আমাদের কাছে শুধু একটা ভ্রম কিংবা ভালোবাসার নাম নয়। হুমায়ুন আহমেদ আমাদের জন্য বড়ো একটা রোগের নাম। আমরা যখন কেউ লিখতে বসি তখন সাধারণত আমরা যার লেখা বেশি পড়ি তার একটা ভাব চলে আসে। আমাদের প্রজন্মের অধিকাংশই হুমায়ুন আহমেদ পড়ে অভ্যস্ত। তাই লেখার মাঝে হুমায়ুনীয় প্রভাব চলে খুব বেশি স্বাভাবিক। আবার কেউ হুমায়ুন আহমেদের মতো না লিখলেও আমাদের তাঁর মতোই মনে হয়। কেউ একটু ভালো লিখলে আমাদের মনে হয় যেন হুমায়ুন আহমেদের মতো লিখছে। এটা আমাদের জন্য বড়ো একটা সমস্যার নাম। কারণ তিনি আমাদের মাথায় এমনভাবে ঢুকে বসে আছে যে আমরা ভালো বলতেই যেন তাকে বুঝি। আর তার সবচেয়ে বড় অপরাধ তিনি এত বেশি লিখেছেন যে একবার তাঁকে পড়া শুরু করলে শেষ করে অন্যকিছু ধরার সময়ই থাকবে না।

অনেকে এখন হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন রাজনীতিও করে। কেউ হুমায়ুন আহমেদকে অনুকরণ করে, কেউ আবার অনুকরণ না করেও গালি খায়। অনেকে আবার বেশি উত্তেজিত হয়ে তাকে নিয়ে নানান কথা বলে। অনেক কটু কথা শুনিয়ে দেয়। এটাকে অবশ্য বর্তমান সময়ে মার্কেটিংয়ের একটা কৌশল হিসেবে নেয় অনেকেই। একটু বড়ো মাপের কাউকে নিয়ে কিছু বলতে পারলে নিজেই একটু পরিচিত হওয়া যাবে। তাই বলে দুই কলম লিখেই যদি হুমায়ুন আহমেদের মতো মানুষকে নিয়ে কথা বলার সাহস করে ফেলে তাহলে মোটেও সুখকর নয়।

হুমায়ুন আহমেদ আমাদের সাহিত্য অঙ্গনকে যা দিয়েছেন তা অতুলনীয়। তিনি যা দিয়েছেন তার প্রতিদান হয়তো দেয়া সম্ভব না। তবে তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সবচেয়ে বড় যে পুরস্কার পেয়েছেন তা হলো মনের রাজ্যের রাজার পুরস্কার। আমাদের সকলের মন জয় করে চলে গেছেন তিনি। রেখে গেছেন তার সৃষ্টিকর্ম। তার সৃষ্টিকর্মে দীক্ষিত হবার সুযোগ পাচ্ছে আমাদের স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা। তাদের পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে হুমায়ুন আহমেদের বহু সাহিত্য। তবে এসবের কোনো কিছুই যেনো তার অভাব পুরণ করতে পারবে না। যে মানুষটা এই জাতিকে বইপাগল বানালো তাকে এ জাতি প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহুর্তে খুঁজে বেড়াবে।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড