নিজস্ব প্রতিবেদক
আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে এসেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। তবে শিক্ষার্থীদের নজর এড়াতে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের গেইট দিয়ে প্রবেশ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে চারটায় তিনি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে ভিসির একান্ত সচিব (পিএস) কামরুল হাসান জানান, ভিসি স্যার অফিসে আছে। ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বিকাল সাড়ে চারটায় বৈঠক শুরু হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা আট দফা দাবি পেশ করেন। তাদের পেশ করা দাবির মধ্যে উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হবার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি তা তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে আজ বিকাল ৫টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে। একই সাথে ডিএসডব্লিউ স্যার কেন ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করেছেন তা উনাকে আজ বিকাল ৫টার মধ্যে সবার সামনে জবাবদিহি করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবিগুলো হলো- ক্যাম্পাসে নোংরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ; খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ; ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিশ্চিতভাবে শনাক্তকৃত খুনিদের সকলের ছাত্রত্ব আজীবন বহিষ্কার; দায়েরকৃত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি; বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হবার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি তার জবাব সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে আজ বিকাল ৫টার মধ্যে দিতে হবে এবং ডিএসডব্লিউ স্যার কেন ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করেছেন তার কারণ বিকাল ৫টার মধ্যে তাকে দিতে হবে; আবাসিক হলগুলোতে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সকল প্রকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনকে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।
একই সঙ্গে আহসানউল্লাহ হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল নিশ্চিত করতে হবে; রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং মামলা চলাকালীন সকল খরচ এবং আবরারের পরিবারের সকল ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
এর আগে ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে পাঁচজনের নাম চেয়ে প্রস্তাব জানানো হয়। ভিসির পক্ষে এ প্রস্তাব দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আলোচনা করার জন্য উপাচার্য পাঁচজনের প্রতিনিধিদলের নাম চেয়েছে। ভিসির পিএস মোবাইলে আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।
তার এই বক্তব্যের জবাবে সবাই প্রতিবাদ জানান। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কোন প্রতিনিধিদল আলাদাভাবে আলোচনায় যাব না। তবে সবার সামনে ওপেন ডিসকাশন হতে পারে। যেখানে সবাই আলোচনা করবেন।
এছাড়া বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমানকে ক্যাম্পাসে ঘিরে ধরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জন্য তার কাছে দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘স্যার, যে ঘটনা ঘটলো ক্যাম্পাসে। তাতে আপনি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দেবেন কি না।’ কিন্তু শিক্ষার্থীরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই। এ সময় শিক্ষার্থীরা করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। এরপর শিক্ষার্থীরা বুয়েট উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে আসার জন্য ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে অনুরোধ করেন।
এ দিকে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ বলেছেন, আমরা গতকাল ভিসির সঙ্গে দেখা করেছিলাম। এরপর তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়নি।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৫ অক্টোবর নিজের ফেসবুক আইডি থেকে করা এক পোস্টের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দাযের করেন।
ওডি/এআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড