• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বতন্ত্র ব্যাংক ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় চায় ডিসিরা

  অধিকার ডেস্ক

১২ জুলাই ২০১৯, ১২:৩৬
বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক (ছবি : সংগৃহীত)

জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য স্বতন্ত্র ব্যাংক গঠন এবং একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন। পাশাপাশি জ্বালানি খরচের সিলিং তুলে দেয়াসহ ঝুঁকিভাতা চালু করার প্রস্তাবও করেছেন তারা।

এদিকে ১৪ জুলাই অনুষ্ঠেয় পাঁচ দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন জেলার ডিসিদের পাঠানো ৩৩৩টি প্রস্তাব উঠছে।

এসব প্রস্তাবের মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ডিসিদের অধীন সার্বক্ষণিক একটি বিশেষায়িত পুলিশ ফোর্স গঠন, জেলায় কর্মরত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার এখতিয়ার ডিসিদের প্রদান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলভুক্ত করা, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ এবং ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার হলে প্যানেল চেয়ারম্যানকে আর্থিক ক্ষমতা দেয়া।

আগামী ১৪ জুলাই সকাল ৯টায় নিজ কার্যালয়ের ‘শাপলা’ হলে পাঁচ দিনব্যাপী এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৯’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ তথ্য জানান।

এর আগে ডিসি সম্মেলন হতো তিন দিনব্যাপী। কিন্তু কার্যপরিধি বেড়ে যাওয়ায় এবার হচ্ছে পাঁচ দিন। সে হিসাবে ডিসি সম্মেলন শেষ হচ্ছে ১৮ জুলাই। এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রথমবারের মতো প্রধান বিচারপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে ডিসিদের বৈঠক হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, এবার সম্মেলনে ২৯টি অধিবেশন হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্যঅধিবেশন ২৪টি। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, একটি মুক্ত আলোচনা, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং সমাপনী অনুষ্ঠান হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন মাঠ প্রশাসনের ৬৪ ডিসি ও আট বিভাগীয় কমিশনার।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত ডিসিদের পাঠানো উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব গুলি নিন্মে দেওয়া হলো-

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ‘জনপ্রশাসন ব্যাংক’ নামে আলাদা ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন নোয়াখালীর ডিসি।

তিনি বলেছেন, এতে কর্মকর্তাদের আর্থিক কার‌্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষায়িত এক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন নরসিংদীর ডিসি।

প্রস্তাবে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘সিভিল সার্ভিস কলেজ সিঙ্গাপুর’ আদলে গঠন করা যেতে পারে। এতে পাবলিক পলিসি, অর্থনীতি, ফিন্যান্স, সুশাসন, সোশ্যাল পলিসিসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণার সুযোগ থাকবে।

উল্লেখ্য, সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর (সেনা, বিজিবি, আনসার, পুলিশ) নিজস্ব ব্যাংক রয়েছে। এ ছাড়া কারও কারও নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

ডিসিদের জ্বালানি খরচের সিলিং তুলে দেয়ার প্রস্তাব করে বরিশালের ডিসি বলেছেন, জনগণের চাহিদার সঙ্গে ডিসিদের দায়িত্ব-কর্তব্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ জন্য জ্বালানি খরচও বাড়ানোর প্রয়োজন। বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় ২০০ লিটার জ্বালানি পান ডিসিরা। এ ছাড়া বিভাগীয় ও জেলা সদরে ভিভিআইপি/ভিআইপিদের যাতায়াত অনেক বেশি হওয়ায় তাদের প্রটোকলের জন্য জ্বালানি খরচ বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি ভিআইপিদের প্রটোকলের জন্য যানবাহনের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ও চট্টগ্রামের ডিসি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য মূল বেতনের সঙ্গে ঝুঁকিভাতা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন নেত্রকোনা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ ও ঝালকাঠির ডিসি। তাদের মতে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা তাদের অধিক্ষেত্রের মধ্যে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে থাকেন।

জেলায় কর্মরত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে এ ক্ষমতা প্রদানের এখতিয়ার দেয়ার কথা বলেছেন চট্টগ্রামের ডিসি।

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। তিনি বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করা হয়। অথচ সরকারি অন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কোনো কোটা রাখা হয়নি। এতে তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়া চালুকৃত বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি) এবং বিএড কলেজ বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন ঝিনাইদহের ডিসি।

তিনি বলেছেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান নামসর্বস্ব। শিক্ষকরা সরকারি টিটিসি থেকে যেভাবে প্রশিক্ষণ পান তা বেসরকারি টিটিসি থেকে ন্যূনতমও দেয়া হয় না। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যাচাইয়ে জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করার সুপারিশ করেছেন তিনি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দেয়াল ঘেঁষে মার্কেট তৈরি নিষিদ্ধ করার কথা বলেছেন ঢাকার ডিসি।

তিনি বলেছেন, মার্কেটের কারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হয়। প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা এ মার্কেটের আয়-ব্যয় নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করেন।

টিআর, কাবিটা ও কাবিখার বরাদ্দে সোলার খাতকে আলাদাভাবে না রেখে সোলার/নন-সোলার খাতকে একত্র করার প্রস্তাব দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি।

তিনি বলেছেন, অনেক উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ থাকায় সোলারের চাহিদা অনেক জায়গায় নেই। টিআর, কাবিটা ও কাবিখায় আলাদাভাবে বরাদ্দ দেয়ায় অনেক অপ্রয়োজনীয় স্থানে এসব বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এতে সরকারের বিপুল অর্থের অপচয় হচ্ছে। সরবরাহকৃত স্পিডবোটের জন্য চালক ও জ্বালানি চেয়েছেন খুলনার ডিসি। তিনি বলেছেন, খুলনা জেলায় দুটি স্পিডবোট আছে। কিন্তু বোট দুটির চালক ও জ্বালানি নেই। অনিয়ম প্রতিরোধ ও শৃঙ্খলার স্বার্থে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের (পিআইও) এসিআর ইউএনওদের হাতে দেয়ার সুপারিশ করেছেন গোপালগঞ্জের ডিসি।

তিনি বলেছেন, কোনো কোনো পিআইওর ইউএনওকে পাশ কাটিয়ে কাজ করার প্রবণতা থাকে। কারণ বর্তমানে তাদের এসিআর দেন জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেছেন নারায়ণগঞ্জের ডিসি।

তিনি বলেছেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে ফেসবুক বা ইউটিউবে ধর্মীয় নেতাদের ভিডিও ধারণকৃত বক্তব্য আপলোড করা হচ্ছে। বক্তব্যগুলো কখনও কখনও অতিমাত্রায় নারীবিদ্বেষী, অতিরঞ্জিত বা বিকৃত বর্ণনা উপস্থাপনসহ নারীশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এতে বিভিন্ন দল ও মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ডিসি সম্মেলনের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কার্যপত্রের বাইরেও জেলা প্রশাসকদের তাৎক্ষণিক যদি কোনো প্রস্তাব থাকে সেটি অধিবেশনে উপস্থাপন হতে পারে।

১৭ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সকাল পৌনে ৯টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে ডিসিরা বৈঠক করবেন। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হারের বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, ২০১৮ সালে বাস্তবায়ন হার ছিল প্রায় ৯৩ শতাংশ।

ওডি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড