• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৩০ শতাংশ রিকশাচালকই জন্ডিসে আক্রান্ত : গবেষণা

  সৈয়দ মিজান

২৭ জুন ২০১৯, ১৯:০১
রিকশা চালক
ঢাকা শহরের ৯৪ শতাংশ রিকশাচালকই কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত; জানাচ্ছে গবেষণাটি। (ছবি: দৈনিক অধিকার)

বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার নামের যেন শেষ নেই। সর্বশেষ যে দুটি উপমা যোগ হয়েছে ঢাকার পাশে তা হলো ‘জ্যামের শহর’ এবং ‘রিকশার শহর’। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় ঢাকা শহরে প্রথম রিকশার আগমন ঘটে সেই ১৯৩৭ সালে। সেই সময় খুব একটা প্রচলিত বাহন না হলেও বর্তমানে ঢাকা শহরের অলিগলি কিংবা রাজপথ সবখানেই যে বাহনটি চোখে পড়ে তা হলো রিকশা। এই বাহনটির সংখ্যা ঢাকা শহরে এত পরিমাণে যে গিনেস বুকের রেকর্ডে নাম উঠে গেছে এই শহরের। ঢাকা শহরে রিকশার সংখ্যা কত? কত মানুষের জীবিকা যুক্ত এই ত্রিচক্রযানের চাকায়? কেমন তাদের আয় রোজগার?

এই বিষয়গুলো নিয়ে এই প্রথম বিশাল পরিসরে গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার রাইটস (বিলস) নামের একটি শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠান এই গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে।

তাদের পরিচালিত গবেষণা ফলাফলে উঠে এসেছে রিকশা এবং রিকশাচালকদের জীবনযাপন নিয়ে নানান তথ্য। বর্তমানে রাজধানী শহর ঢাকাতে নিবন্ধিত মোট রিকশার সংখ্যা ১১ লাখের কিছু বেশি। এইসব রিকশা বিভিন্ন সংস্থার অধীনে নিবন্ধন নেয়া থাকে। তবে এই সংখ্যাটি পুরোপুরি জানাটা একটি দুরূহ কাজ বলে জানা গেছে গবেষণা থেকে।

গবেষণাটির পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ বলেন, ‘একই রেজিস্ট্রেশন দিয়ে অনেক রিকশা রেজিস্ট্রেশন করা হয় অনেক সময়। যার মানে একাধিক রিকশায় একই নম্বর দেয়া থাকে। যার ফলে এই উপায়ে রিকশার সঠিক সংখ্যা জানাটা খুবই কঠিন।‘ গবেষণা থেকে জানা গেছে, শুধুমাত্র ঢাকা শহরে রিকশার ওপর ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ২৭ লাখ মানুষ। এসব মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রিকশার ওপর নির্ভরশীল।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, একটি রিকশা সাধারণত দুইটি শিফটে চালানো হয়। ভোর থেকে দুপুর দুইটা-আড়াইটা নাগাদ একজন চালান রিকশা। দিনের বাকি সময় অন্য আরেকজন সেই রিকশা চালান। এ ক্ষেত্রে ১১ লাখ রিকশার চালকের সংখ্যা দাঁড়ায় ২২ লাখে। আর এরসঙ্গে যুক্ত আছে রিকশা মেরামতকারী, যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী এবং গ্যারেজ মালিকরাও। সব মিলিয়ে এই সংখ্যাটাও ৫-৬ লাখের কম না।

বিলসের করা এই গবেষণা থেকে আরও চমকপ্রদ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরের অন্য যেকোনো শ্রমজীবী মানুষের তুলনায় রিকশা চালকদের আয় অনেক বেশি। জরিপ থেকে জানা যায়, একজন রিকশাচালকের মাসে আয় থাকে সর্বনিম্ন ১৩ হাজার ৩৮২ টাকা থেকে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে তাদের এই আয় পুরোপুরি নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর। রাস্তাঘাট এবং নানা অবরোধের কারণে এটি হেরফের হতে পারে। তবে গবেষণা বলছে, আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক এলাকায় রিকশাভাড়া খানিকটা বেশি। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেও রিকশাওয়ালারা বাড়তি ভাড়া পেয়ে থাকেন।

বছর দশেক আগে যেখানে রিকশাচালকদের আয় ছিল ২৫০-৩৫০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০-৬০০ টাকা। গবেষকরা জানান, ঢাকা শহরের প্রায় ৮৫ শতাংশ রিকশাচালক অন্য পেশায় ভালো সুযোগ পেয়েও রিকশা চালানো ছাড়তে পারেন না। তারা সেই পেশা বাদ দিয়ে আবারও রিকশা চালানোতে ফিরে আসেন।

তবে রিকশাচালকদের নিয়ে এই গবেষণাটি জানাচ্ছে ভয়ঙ্কর একটি তথ্য। রাজধানী শহরের প্রায় ৯৪ শতাংশ রিকশাচালকই কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে তাদের আয় রোজগার বাড়লেও জীবনমান সেই আগের মতোই আছে। পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং টয়লেটের সমস্যায় পড়তে হয় তাদের নিত্যদিন।

তাছাড়া একজন রিকশাচালক প্রতিদিন রিকশা চালাতেও পারেন না। এট অনেক শারীরিক পরিশ্রমের কাজ। যা তাদের স্বাস্থ্যের ওপর বেশ বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিলসের তৈরি গবেষণায় জানা গেছে, রিকশাচালকদের শারীরিক সমস্যার মধ্যে জ্বর-সর্দি, ঠান্ডা, গায়ে ব্যথা এবং শারীরিক দুর্বলতাই প্রধান হয়ে দেখা দেয়। তবে জরিপ বলছে রিকশাচালকদের ৩০ শতাংশই জন্ডিসের মতো ভয়াবহ শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত।

এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, রাস্তাঘাটে সুপেয় পানি এবং টয়লেটের সংকটই এর জন্য দায়ী। রিকশাচলকদের দেয়া তথ্য মতে, বেশিরভাগ সময় ড্রেন এবং বিভিন্ন গাছপালার আড়ালেই প্রাকৃতিক কর্ম সারতে হয় তাদের। মোবাইল টয়লেট কিংবা পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে টাকা লাগে বিধায় তারা এটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন। ফলে পরিবেশ নোংরা হবার পাশাপাশি বাড়ছে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও।

টাকা বাঁচানোর জন্য বেশিরভাগ চালক দুপুরের খাবার সারেন বিভিন্ন টঙ দোকানে রুটি, কলা এবং চা-কেক খেয়ে। এসব খাবার যে খুব একটা স্বাস্থ্যকর তাও কিন্তু না। ক্ষেত্রবিশেষে কয়েকদিনের বাসি এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবারও খেয়ে থাকেন তারা সচেতনতার অভাবে। কয়েকজন রিকশাচালকের কাছ থেকে জানা গেছে, এইসব খাবার খেয়ে পেটের নানা রোগে বেশিরভাগ সময়ই আক্রান্ত থাকেন রিকশা চালকরা।

গবেষকদের দলের মতে, যদি রিকশাওয়ালাদের জন্য সস্তায় পুষ্টিকর খাবার বিক্রি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয় তবে হয়তো এই সমস্যা থেকে খুব দ্রুতই মুক্তি পেতে পারে তারা। তারা আরও জানান, সব মিলিয়ে বেশ বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেই আছেন রিকশাচালকরা।

সূত্র : বিবিসি

ওডি/এসএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড