• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দুধ পরীক্ষার দুই ফল

  অধিকার ডেস্ক

২৬ জুন ২০১৯, ২০:২১
এন্টিবায়োটিক
এন্টিবায়োটিক উপস্থিতি রয়েছে এমন কয়েকটি দুধের মোড়ক

খাদ্যের তালিকায় সর্বোচ্চ পুষ্টিমানের সেরা খাদ্য দুধ। দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক। সেই দুধ নিয়ে বিপাকে সাধারণ জনগণ। পাস্তুরিত তরল দুধ ও প্যাকেটজাত দুগ্ধজাত সামগ্রীর মান নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বহু দিনের। এই সংকট আরও জোরালো হলো দেশের দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরস্পর বিরোধী প্রতিবেদনের পর।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) ঢাবির বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদের গবেষকরা সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রাণ-আড়ং-মিল্কভিটাসহ ৭ কোম্পানির দুধে মানবচিকিৎসায় ব্যবহৃত ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক লেভোফ্লক্সসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমাদের পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলোতেই মানবচিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক লেভোফ্লক্সসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়াও অপাস্তুরিত দুধের একটি নমুনাতে ফরমালিনও পাওয়া মিলেছে। অন্য একটিতে পাওয়া গেছে ডিটারজেন্ট।

তিনি আরও বলেন, বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দুধে ৩ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি ফ্যাট ইন মিল্ক থাকতে হবে। গবেষণায় পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার মধ্যে ছয়টিতেই এই পরিমাণে ফ্যাট ইন মিল্ক ছিল না। দুধে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশের বেশি সলিড নট ফ্যাট থাকতে হবে। কিন্তু বিশ্লেষণে এসব দুধের সবগুলোতেই ছিল কম। এছাড়া পাস্তুরিত দুধের একটি ও অপাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনাতে অতিরিক্ত এসিডিটি এনালাইসিস পাওয়া গেছে। পাস্তুরিত দুধের সবগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল টোটাল ব্যাকটেরিয়া কাউন্ট। আর নিয়ম অনুযায়ী স্টেফাইলোকক্কাস স্পেসিজ শূন্য থাকার কথা থাকলেও পাস্তুরিত দুধের পাঁচটিতেই ছিল অধিক জীবাণু। বিএসটিআই মানদণ্ড এসব দুধের সবগুলোই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ।

পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনা হলো- প্রাণ, আড়ং, মিল্কভিটা, ফার্ম ফ্রেশ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো। রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে এসব দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

অপরদিকে, একই দিনে ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত (১৮টি নমুনা) দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যার্ন্ডাড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)।

গত বছরের ১৬ মে বাণিজ্যিকভাবে পাস্তুরিত দুধ সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়েরিয়া ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) একটি গবেষণা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ এ রিট করেন।

যে ১৪টি কোম্পানির দুধ পরীক্ষা করা হয় সেগুলো হলো- ব্র্যাক ডেইরির আড়ং ডেইরি (২টি), ইছামতি ডেইরির পুরা, ড্যানিশ ডেইরির আয়রান, আকিজ ফুডের ফার্মফ্রেশ মিল্ক (২টি), আমেরিকান ডেইরির মো, দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়নের মিল্ক ভিটা, আফতাব মিল্কের আফতাব, শিলাইদহ ডেইরির আল্ট্রা, তানিয়া ডেইরির তানিয়া (২০০ গ্রাম) ও (৫০০ গ্রাম), ইগলু ডেইরির ঈগলু, প্রাণ ডেইরির প্রাণমিল্ক (২টি), বারো আউলিয়ার ডেইরি ফ্রেশ, উত্তরবঙ্গ ডেইরি মিল্ক ফ্রেশ, রাফি অ্যান্ড ব্রাদার্সের কাউ হেড পিওর মিল্ক।

এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার মাঠে থাকাটা ইতিবাচক। যেহেতু বিভিন্ন সংস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে, ওই ক্ষেত্রে স্বাধীন কোনো সংস্থা দিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে।

ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বিএসটিআইর প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে এটাকে মানসম্মত বলাটা যৌক্তিক হবে না। সব ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা করার একই পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিৎ। বিএসটিআই বললো যে এটা অনিরাপদ, মানসম্মত না, পরবর্তী পরীক্ষা নিরীক্ষা বিএসটিআইয়ের সঙ্গে আরও দু-একটি স্বাধীন গবেষণা সংস্থায় হওয়া বোধহয় দরকার।

এদিকে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব খাদ্যদ্রব্যগুলো বাজারে প্রচলিত চাইলেই এগুলো বর্জন করা সম্ভব হবে না। আবার বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন প্রতিবেদনের কারণে ভোক্তার বিভ্রান্ত হওয়ার কারণও রয়েছে। তবে এই সমস্যা সমাধানের পথ রয়েছে।

সাধারণ জনগণের বিশ্বস্ত দু’টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং অপরটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদ। বিশ্বস্ত দু’টি প্রতিষ্ঠানের পরস্পর বিরোধী প্রতিবেদনে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে।

ওডি/আরএডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড