• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমলাদের বহুল প্রত্যাশিত ক্যারিয়ার প্ল্যান বাস্তবায়ন হচ্ছে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জুন ২০১৯, ০৩:৫৫
জনপ্রশাসন
ফাইল ফটো

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে জনপ্রশাসনে কর্মরত আমলাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ক্যারিয়ার প্ল্যান। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে প্রধান করে পৃথক সচিব কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এরইমধ্যে ৩ দফা বৈঠক করেছে। আরও কয়েকটি বৈঠক করে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্টরা এমনটাই জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কমিটির প্রধান সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, জনপ্রশাসনের জন্য ক্যারিয়ার প্ল্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গতিশলী প্রশাসন গড়ার জন্য এ ধরনের প্ল্যানিং নীতি থাকার বিকল্প নেই। বেশির ভাগ উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশে এর বাস্তব চর্চা রয়েছে। তিনি জানান, কয়েকটি মিটিং তারা করেছেন। কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিগগির পরবর্তী বৈঠকে বসবেন। প্রচেষ্টা থাকবে যত দ্রুত এটি শেষ করা যায়।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এর মূল উদ্দেশ্য সিভিল সার্ভিসের একজন সেবক চাকরিতে প্রবেশের পর তিনি ধাপে ধাপে তার কাজের পরিধি সম্পর্কে যেমন সচেতন হবেন, তেমনি সে অনুযায়ী কাজের টার্গেট পূরণ সাপেক্ষে যথাযথ ফলাফলও দেখতে পাবেন।

অপর এক প্রশ্নে তিনি জানান, ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বাস্তবায়ন হওয়ার পর একজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদোন্নতির গতিপথ আগেই জানতে পারবেন। তবে তাদের কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত সবই এখন খসড়া প্রস্তাব। এছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে।

প্রশাসনের পেশাদার আমলারা ক্যারিয়ার প্ল্যান চান। এটি তাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া। নানা নামে কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও তা বেশিদূর এগোতে পারেনি। মূলত অফিসিয়াল ক্যারিয়ার প্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে কর্মকর্তারা তাদের বাস্তব দক্ষতা যোগ্যতার প্রমাণ দিতে চান। ফলাফলের ভিত্তিতে গতি বাড়াতে চান নিজের ক্যারিয়ারের একজন চৌকস আমলা

উপসচিব হওয়ার পর যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত ও সচিবের ধাপে কবে নাগাদ পৌঁছে যাবেন সেটিও যেন নিশ্চিত বুঝতে পারেন। এজন্য অনেক উন্নত দেশ আমলাতন্ত্রকে ঢেলে সাজিয়েছে। এতে করে প্রথমদিকে মানিয়ে নিতে কিছুটা কষ্ট হলেও এক পর্যায়ে হাতে ধরা দিয়েছে ব্যাপক সাফল্য। যেখানে দ্রুততম সময়ে সেবার মান শতভাগ নিশ্চিত করাসহ বেশির ভাগ পদে ব্যক্তির পরিবর্তে সিস্টেমকে মূল মন্ত্র হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। অর্থাৎ সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির ক্ষমতা প্রয়োগ একেবারে সীমিত করে ফেলা।

বিপরীতে সিস্টেম বা প্রণীত বিধিবিধানের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। এভাবে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এমনকি পাশের দেশ ভারতেও এটি করায়ত্ত করা হচ্ছে। এজন্য প্রশাসনের বেশির ভাগ কর্মকর্তা অনুমোদিত ক্যারিয়ার প্ল্যান প্রত্যাশা করে আসছিলেন। ড. সা’দত হুসেইন মন্ত্রিপরিষদ সচিব থাকাবস্থায় প্রশাসন সংস্কারে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়।

ক্লাস্টারভিত্তিক কর্মকর্তাদের পুল গড়ে তোলার উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে দুই বছরের বেশি সময় কাজ করে তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সিপিটি উইং। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি। ক্লাস্টারভিত্তিক কর্মকর্তাদের পুল বলতে কোনো কর্মকর্তা কর্মজীবনে যে বিষয়ে পারদর্শিতা বেশি দেখাতে সক্ষম, তাকে সেই কাজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে রেখে দেয়া। এভাবে বিষয়ভিত্তিক বিষেশায়িত কর্মকর্তা পুল গড়ে তোলার কথা ছিল।

পরবর্তীকালে তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের ধরন বিবেচনায় নিয়ে পদায়ন নীতিমালা করার উদ্যোগ নেয়। এজন্য সিপিটি উইং থেকে কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে একটি ডিজিটাল অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় কিছু পোস্টিংও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নানামুখী তদবিরের চাপে শেষ পর্যন্ত যাকে যেখানে পোস্টিং দেয়া প্রয়োজন, তাকে সেখানে পদায়ন করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানায়, এ রকম নানান অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি একটি গণমুখী, দক্ষ ও জবাবদিহি সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে যুগোপযোগী ক্যারিয়ার প্ল্যানিং প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। সেখানে প্রাথমিক আলোচনা শেষে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ প্রণয়নের জন্য সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইনকে প্রধান করে কয়েক মাস আগে পৃথক সচিব কমিটি গঠন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের কয়েকটি মৌলিক লক্ষ্য রয়েছে। প্রথমত, অবশ্যই আমলারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে চাকরি করবে। কিন্তু তাদের আচরণ কখনও দলীয় কর্মীর মতো যেন মনে না হয়। পেশাদারিত্ব হবে মূল মন্ত্র। তবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। এছাড়া প্রত্যেক কর্মকর্তা যেন তার কাজের বিপরীতে যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয় সেটি হবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

ওডি/এমআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড