• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

১শ টাকায় সুখ বিক্রি, অতিষ্ঠ পথচারীরা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

০৯ জুলাই ২০১৯, ০৫:০৭
বেদে
বেদে নিয়ে নাটকের একটি দৃশ্য (ফাইল ফটো)

‘এই হিংসে করিসনে, ১শ টাকা দে, সাপের লাইগা খাবার কিনব, তুই অনেক সুখ পাবি, তর কল্যাণ হবি।’ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পথচারীদের আটকে কথাগুলো বলছিল কয়েক বেদে তরুণী। পথ আগলে হরহামেশাই অলি-গলিতে এমন কথায় পথচারীদের টাকা দিতে বাধ্য করছে দেখা যায় ওদের।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ছোট ছোট সাপের বাক্স মেলে ধরে গতিরোধ করায় অতিষ্ঠ ও অস্বস্তিতে পথচারীরা। টাকা আদায় না করা পর্যন্ত কিছুতেই পথ ছাড়ে না ওই বেদে তরুণীরা। আরও অবাক ব্যাপার, আগে যেখানে ২-৪ টাকা দিলেই সটকে পড়তো, সেখানে ১০-২০ টাকাতেও তাদের সরানো যাচ্ছে না। তাদের দাবি এক লাফে ঠেকেছে ১০০ টাকায়। অনেক সময় বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পথচারীদের অশালীন গালিও দেয় এসব বেদেনি। এমন পরিস্থিতিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হতে হয় ব্যস্ত নগরীর পথচারীদের।

‘ও রানী সালাম বারে বার আমার নামটি জোছনা বানু আমি সাপ খেলা দেখাই’, ‘এই সিঙ্গা লাগাইবেন নি?’ এমনটাই ছিল একসময় বেদে নারীদের পেশার মূলমন্ত্র।

গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে সিঙ্গা লাগানো, তাবিজ বিক্রি, দাঁতের পোকা তোলা, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা এবং সাপ খেলা দেখানো ছিল বেদেদের একসময়ের জীবিকা নির্বাহের কাজ।

সাপের খেলা দেখিয়ে আর নানা কথায় ওষুধ বিক্রি করে চলত তাদের সংসার। বিনাশ্রমে আয়ের লোভে এরা গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হয়েছে। বর্তমানে মানুষকে সাপের ভয় দেখিয়ে পথ আগলে চাঁদা আদায়ই যেন এ শ্রেণির পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কাজের কারণে বিপজ্জনক ও মানুষের অতিষ্ঠতাও বাড়ছে বেদেনিদের ওপর। অনেক সময় বেদেনিদের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে মারধরের ঘটনাও ঘটছে।

বেদেনি মুক্তার ভাষ্য, ‘এই কাজ ছাড়া কী করুম, আমগরে কে কাজ দিব। কাজের লাইগা গেলে কেউ কেউ ইজ্জতে হাত দেয়। পথে পথে ঘুরি বইলা আমগরে খারাপ মাইয়া মনে করে। আমগর কী পেট নাই? খাওন লাগে না? কেউ কাজ দেয় না, খালি উল্ডা-পাল্ডা কথা কয়।’

মানুষের পথ আগলে চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে মুক্তা বলে, ‘কামটা ঠিকই খারাপ, কিন্তু আর কাম ত পাই না।’

শফিক সুমন নামে ভুক্তভোগী বলেন, ‘অফিসে যাওয়ার সময় একদল বেদেনি পথ আগলে ধরল। ২০ টাকা দিয়েছি, তারা নেবে না, মানিব্যাগ হাতে থাকায় ওরা নিজেরাই হাত দিয়ে ১০০ টাকা নিয়ে নিল। অন্য পথচারীরা শুধু তামাশা দেখলেন, অনেকে ওদের ভয়ে পাশ কেটে চলে গেলেন। এগুলো খুবই বিরক্তিকর।’

বেদেনির দল দেখলেই অনেকেই আতঙ্কে পড়েন। পাশ কেটে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রথমে বেদেনিরা স্বাভাবিক আচরণ করলেও পরে তারা টাকা নিয়েই পথ ছাড়েন। কখনও গায়ে হাত বুলায় বা সাপ গায়ে তুলে দিয়ে ভয় দেখায়, এতে একরকম বাধ্য হয়েই পথচারীরা টাকা দিয়ে নিজেকে মুক্ত করেন।

যাত্রাবাড়ীর আফরোজা নামে ভুক্তভোগী বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছি, পথে ৫-৬ জন বেদে তরুণী রাস্তা আগলে বলল, ‘তর চাঁন কপাল, এমন সুন্দর মেয়ে আল্লাহ..। সাপের খাবার কিনব টাকা দে, আমার মেয়ে তো সাপের ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করল, পরে ৫০ টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছি।’

বেদেনি মহুয়া জানায়, ‘তারা থাকে রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে। তার ৬ জনের দল, প্রতিদিন পোস্তগোলা হয়ে ঢাকার অলিগলিতে টাকা তুলে। প্রতিদিন তারা ২ থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা তুলে।

অন্য কাজের কথা বলায় তার ভাষায়, ‘কী কাজ করব? এখন ত কেউ সাপ খেলা দেহে না, তাবিজও নেয় না। তাই আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে টাকা নিই।’

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ডেপুটি সেক্রেটারি এস এম আনসারুজ্জামান বলেন, রাস্তায় এ ধরনের ভোগান্তি আসলেই আপত্তিকর। এ বিষয়ে জনস্বার্থে আমাদের একটি বিভাগ রয়েছে। তারা এসব দেখভাল করেন। বিষয়টি আমরা দেখব।

পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকার সাভার, মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গাজীপুর, জয়দেবপুর, চট্রগ্রামের হাটহাজারী, মীরসরাই, কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম, চান্দিনা, এনায়েতগঞ্জ, চাঁদপুর, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বেদেনিদের প্রাচীন আবাসস্থল। সুনামগঞ্জের সোনাপুর বাস বেদে সমাজের বৃহত্তর একটি অংশ। যাযাবর বলেই এদের জীবন বৈচিত্রময়।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে দলিতের সংখ্যা ৪০ লাখ, বেদে ৮ লাখ ও হরিজন সম্প্রদায় ১৫ লাখ।

ওডি/এমআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড