• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ডেঙ্গু আতঙ্কে রাজধানীবাসী

  অধিকার ডেস্ক

২৩ জুন ২০১৯, ১৯:৩৮
এডিস মশা
এডিস মশা (ছবি : সংগৃহীত)

জুন-জুলাই মাসে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে। আর এই জমে থাকা পানি থেকে জন্ম হয় এডিস মশার।

এ বছর জুনের শুরু থেকে ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ জন। এরমধ্যে পরীক্ষা করে সেরোটাইপ-৩-এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে দুই রোগীর রক্তে। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সেরোটাইপ-৩-এর প্রভাব বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে আবহাওয়া অনুযায়ী ডেঙ্গুর যথেষ্ট উপযোগী। আর এই রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে প্রয়োজন বাড়তি সচেতন। একই সঙ্গে সরকারিভাবে সমীক্ষা চালিয়ে ডেঙ্গুর সেরোটাইপ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা নারী-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে ৭০৭ জন। ৩৬ জন জানুয়ারিতে, ১১৮ ফেব্রুয়ারিতে, ১২ মার্চে, ৪৪ এপ্রিলে, ১৩৯ জন মে মাসে ভর্তি হন। শুধু জুন মাসেই ভর্তি হয়েছেন ৪৪০ জন। অর্থাৎ দিনে গড়ে ১৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে এপ্রিলে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৫৮৭ জন। গতবছর এ রোগে ৯ হাজার ২২৮ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ২৪ জনের মৃত্যু ঘটে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম শামসুজ্জামান জানান, এর আগে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ১ ও ২ নম্বর সেরোটাইপের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে ছিল। কিন্তু গতবছর ৩ নম্বর সেরোটাইপের দেখা পাওয়া যায়। আগে থেকে সেরোটাইপ সম্পর্কে জানতে পারলে রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়।

জানা গেছে, এ বছর বেঙ্গু রোগীদের মধ্যে সেরোটাইপ-৩-এর প্রভাব বেশি। এ ক্ষেত্রে রোগীদের নিরাপত্তায় সরকারের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

বর্ষার আগে করা একটি জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭ টি আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ টি ওয়ার্ড রয়েছে ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ দিকে সিটি করপোরেশন বলছে, রিপোর্ট আমলে নিয়ে প্রতিরোধে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা ও এর আশেপাশে ২৮ টি সরকারি ও ৩৬টি বেসরকারি হাসপাতালের ১ হাজার ৩৫০ জন চিকিৎসক ও ১৫৯ জন সেবিকাকে দেয়া হয়েছে ডেঙ্গু চিকিৎসার বিশেষ প্রশিক্ষণ। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সচেতনতার বিকল্প নেই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, বড় পরিসরে প্রচারণায় শিগগিরই একযোগে মাঠে নামছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশন। এছাড়া প্রত্যেকটা ডিরেক্টরের কাছে আমরা মেইল ও চিঠি পাঠিয়েছি। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দ্রুত ডেঙ্গু রোগ শনাক্তকরণের বিশেষ কিট বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বছরে তিনবার এডিস মশার জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩-১২ মার্চ পর্যন্ত চালানো জরিপে দেখা গেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বেশকিছু এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব পরিমাপে ব্যবহৃত সূচকের মাত্রা বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ জরিপের ফল অনুসারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব সূচক (বিআই) সর্বোচ্চ ৮০ পাওয়া গেছে।

কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তার জ্বরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর উঠতে পারে। তরুণ ও শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পরেও উপসর্গ দেখা যায় খুবই সামান্য। কখনো বা একেবারেই উপসর্গহীন থাকে। তবে এসব উপসর্গ স্পষ্টভাবে লক্ষণীয় হয় ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী মশা কামড়ানোর তিন থেকে সাত দিন পর। ডেঙ্গু সচরাচর এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে কোনো কোনো পরিস্থিতে কিছু রোগী মৃত্যুঝুঁকিত পড়তে পারেন।

ডেঙ্গুর কিছু সাধারণ উপসর্গ হল- মাথাব্যথা, হাড়ের জোড় ও পেশিতে ব্যথা, বমিভাব ও বমি হওয়া, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, সারা শরীরের ফুসকুড়ি দেখা দেয়া, চোখের পেছনে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।

ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের উপসর্গ হল- শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হওয়া অথবা শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া। অবিরাম অস্বস্তি, ত্বকের ভেতরের অংশে রক্তক্ষরণের কারণে ত্বকের উপরের অংশে লাল ছোপ সৃষ্টি হওয়া। বমি, মল কিংবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, প্রচণ্ড পেটব্যথা ও অনবরত বমি হওয়া, নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ ও অবসাদ।

ওডি/আরএডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড