• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রুম্পার মৃত্যুরহস্য বুঝতেই পারছে না পুলিশ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৯
স্ট্যামফোর্ড ছাত্রী রুম্পা
স্ট্যামফোর্ড ছাত্রী রুম্পা (ছবি : সংগৃহীত)

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিনের মৃত্যুরহস্য ৬ দিনেও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। রুম্পার কথিত ছেলেবন্ধু আবদুর রহমান সৈকতকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদেও মেলেনি গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য।

এ মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রুম্পা বাসার নিচে জুতা পরিবর্তন করে। পরে সে তার চাচাতো ভাইয়ের (৮) কাছে মোবাইল, ঘড়ি, আংটি, ভ্যানিটি ব্যাগ ও স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে বেরিয়ে যায়। এসব বাসায় রেখে যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এখনো এর উত্তর মেলেনি।

তিনি আরও বলেন, রুম্পার লাশ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, তাকে ধর্ষণের পর ওপর থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রতিবেদনে রুম্পাকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এই প্রতিবেদনের পর মামলা আবার নতুন দিকে মোড় নেয়।

লাশ উদ্ধারের আগের চার ঘণ্টা রুম্পা কোথায় ছিলে, এটি নিয়েও দূর হয়নি সংশয়। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই জানতে পারেনি তদন্তসংশ্লিষ্টরা। ওই সময়ে কী হয়েছিল, সেটি উদঘাটন করা না গেলে রুম্পার মৃত্যুর রহস্যভেদ করা সম্ভব নয়। এই সময়ের হিসাব মেলানোর মতো কোনো ক্লু এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে এখনো অন্ধকারেই পুলিশ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার দিন সকাল থেকে রুম্পা কী কী কাজ করেছিল, কোথায় কোথায় গিয়েছিল—এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সে দিন রুম্পার সঙ্গে সৈকতের দেখা হয়েছিল। প্রেমের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সৈকতের সঙ্গে রুম্পা কথাও বলেছিল। বিকাল ৪টায় সৈকতের সঙ্গে তার দেখা হয় সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়।

ওই সময় তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। তারপর আড়াই ঘণ্টা রুম্পা কোথায় ছিল, কী করেছিল—এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেলেও ওই দিন সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রুম্পার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ডিবির রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শামসুল আরেফিন বলেন, রুম্পার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের ৬৪/৪ বাসার সামনে অজ্ঞাত ২০-২২ বছর বয়সী এক নারী উপুড় অবস্থায় পড়ে ছিল। তখন স্থানীয় লোকজন মৃতদেহটি ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখে। অজ্ঞাত ওই নারীকে আসামিরা ঘটনাস্থলের আশপাশের তিনটি ভবনের যে কোনো একটি ভবন থেকে নিচে ফেলে দেয় বলে মামলায় বলা হয়।

এর পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। লাশের ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। থানা পুলিশ প্রথমে মামলাটি তদন্ত করলেও পরবর্তী সময়ে তদন্তভার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তকালে অজ্ঞাত ওই নারীর পরিচয় মেলে।

ওই তরুণীর নাম রুবাইয়াত শারমিন। সে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মালিবাগের শান্তিবাগে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকত ভাড়া বাসায়। তার বাবা রোকনউদ্দিন হবিগঞ্জ জেলার একটি ফাঁড়িতে পুলিশ পরিদর্শক পদে কর্মরত। চাকরির সুবাদে রোকনউদ্দিন হবিগঞ্জেই থাকেন।

রমনা বিভাগের পুলিশের সহকারী কমিশনার এসএম শামীম বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের ভবন থেকে একটি সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে রুম্পাকে একটি ভবনে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তিনি আরও জানান, ফুটেজে রাত পৌনে ১১টায় ভবনের ওপর থেকে তাকে পড়ে যেতে দেখা যায়। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, যে ভবন থেকে রুম্পা পড়েছিল, ওই ভবনের তৃতীয় তলায় ছাত্রদের একটি মেস রয়েছে। ঘটনার পর পরই সেখানে গিয়ে মেসটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

রুম্পার পারিবারিক সূত্র জানায়, রুম্পা দুটি টিউশনি করে বুধবার সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে। পরে কাজ আছে বলে বাসা থেকে বের হয় রুম্পা। বাসা থেকে নিচে নেমে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ও পরা স্যান্ডেল বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে এক জোড়া পুরনো স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে সে বেরিয়ে গেলে রাতে আর বাসায় ফেরে না। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পায়নি। বৃহস্পতিবার রুম্পার মা সহ স্বজনরা রমনা থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করে।

ওডি/এমআই

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড