• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘দ্যা গেম’-এর চতুর্থ পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্যা গেম

  রোকেয়া আশা

০১ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:৪৩
গল্প
ছবি : প্রতীকী

ফিউদর স্মিরনোভের বাইরের জগতের পরিচয় হচ্ছে সে একজন প্রোগ্রাম ডেভেলপার। রুশ মিনিস্ট্রিতে চাকরি করে, ভালোমানের প্রোগ্রামিং করে, ইয়ুথ এনগেজমেন্ট নিয়েও কাজ করে। বয়স সাইত্রিশ। বিয়ে করে নি, গার্লফ্রেন্ড আছে। লিভ ইন করছে গত চার বছর ধরে। ভেলেন্তিনা। বিয়ে করবে কি না, এখনো ঠিক করে নি। বাবা-মা দু’জনেই পরলোকগত। সহজ, ছিমছাম একটি জীবন।

লোকে যেটা জানে না, এই ফিউদর স্মিরনোভ নামের দক্ষ প্রোগ্রামার আদতে একজন সাইবার ক্রিমিনালও। ডার্ক ওয়েবে রেড রুমের ইমিটেশন তৈরি করে সেখানে আগতদের ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করে নেয়। মাইনিং করে ক্রিপ্টোকারেন্সি রোজগার করার চেয়ে এই পদ্ধতিতে পরিশ্রম এবং ঝামেলা - দুইই কম। দশ মিনিটে একটা ব্লক ভেঙে দুইচার বিটকয়েন পাওয়ার চাইতে রেড রুমে আসার প্রলোভন দেখিয়ে একেকজনের থেকে একবারে কয়েকশো অব্দি বিটকয়েন পাওয়াটা সহজ। আর ডার্ক ওয়েব থেকে কয়েন চুরি হওয়ায় ভুক্তভোগীরা কেউ কোন আইনী ব্যবস্থাও নিতে পারে না।

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ফিউদরের কাছে রেড রুমে যাওয়ার একটা ইনভাইটেশন আসে। ফিউদর ভ্রু কুঁচকে ফেলে। আরো ঘুঘু তাহলে এই ব্যবসা শুরু করেছে। ফিউদর কিছুক্ষণ ভাবে। ভেবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়, এই ঝুঁকিটা সে নেবে। ভাগ্য ভালো হলে এই ইমেটেটেড রেড রুমের ক্রিয়েটরের কাছ থেকেই বিটকয়েন মেরে দেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে, নিজের একটা ইমিটেশনের ঝক্কি ছাড়াই কিছু রোজগার হবে। ফিউদর অবশ্য একটা বিষয়ই ভেবে পায় না, ইনভাইটেশনে ওকে স্মিরনোভ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। কিভাবে সম্ভব? ওর তো ডার্ক ওয়েবে ইউজার নেম সম্পূর্ণ আলাদা - লুসিফার নামেই সেখানে তার বিচরণ। অন্য কোনভাবে ট্রেস করেছে? সেখানেও প্রশ্ন।

এখানকার কোন ডোমেইনই রেজিস্টার করা না, ফলে চাইলেই কোন ইউজারকে ট্রেস করতে পারার কথা না। মূলত, বিটকয়েনের চাইতেও নাম সম্বোধনের রহস্যটাই ফিউদরকে বেশি টানতে থাকে। সে সিদ্ধান্ত নেয়, রাতে সে এই ফেক রেড রুমটায় যাবে। ফেক? ফিউদর আপন মনেই হাসে৷ রেড রুম বলে বাস্তবে কিছু নেই। একটা মরীচিকার পেছনে শুধু শুধু কিছু আধপাগল আর পাগল ডার্ক ওয়েব ইউজারগুলো ছুটছে। মৃত্যু আর নির্যাতনের দৃশ্য মানুষ কতটা উপভোগ করতে চাইতে পারে, তা এইসব ইউজারদের না দেখলে ফিউদর নিজেও বিশ্বাস করতো না। এসব বোকাচোদার এইটুকু সাধারণ বুদ্ধিও নেই - যে এরকম কোন সাইটে লাইভ ভিডিও শেয়ার করাই সম্ভব না। ট্রেস হয়ে যাবে। এইটুকু বুঝলেও ওরা বুঝতে পারতো, রেড রুম একটা অসম্ভব মিথ মাত্র।

রাত দুটো বেজে তেরো মিনিট। ফিউদর ওর কাছে আসা ইনভাইটেশন লিংকে ক্লিক করে। সময় এটাই জানানো হয়েছিলো। আগের তিন ঘন্টা সে খরচ করেছে কারেন্সি শিল্ড বানাতে। কারও বাপের ক্ষমতা নেই এখন, এই শিল্ড ভেঙে ওর কয়েন নিয়ে নেবে। ব্লকচেইনে একেকটা ব্লক ভাঙার জন্য সময় দেওয়া হয় দশ মিনিট, কিন্তু ফিউদরের কয়েন শিল্ড ভাঙার জন্য প্রতিটা কয়েনে সময় পাওয়া যাবে মাত্র পঁচিশ সেকেন্ড করে। যত বড় আইটি জিনিয়াসই হোক, এত কম সময়ে শিল্ড ভাঙা সম্ভব না।

ফিউদর কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কানে বক্স হেডফোন। অস্বস্তির অনুভূতিটা ঠিক কোত্থেকে আসছে, ফিউদরের বুঝতে সময় লাগে। তারপর হেডফোনের ভেতর দিয়ে ওর মগজে কেউ একটা জান্তব চিৎকার ছুড়ে দেয়। শিউরে উঠে হেডফোনটা খুলতে যায় ফিউদর। কিন্তু তখনই তার চোখ আটকে যায় কম্পিউটারের স্ক্রিনে। সত্যি সত্যিই লাইভ ভিডিও বলেই মনে হচ্ছে। এক তরুণ। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পাগলের মতো জামাকাপড় খুলে ছুড়ে ফেলছে। মাঝেমাঝে দুহাতে নিজের চুল টেনে ধরে অমানুষিক আর্তনাদ ছুড়ে দিচ্ছে গলা থেকে। তরুণটি একটি সাজানো গোছানো ঘরে, একা। ঘরে বক্সখাট, কাপবোর্ড, টেবিলের ওপর পিসি। চেয়ার। দেয়ালে পিংক ফ্লয়েড আর বিটলসের পোস্টার। বিটলসের ঠিক ডানে হাল আমলের কেলি ক্লার্কসনকেও দেখা যাচ্ছে, কাগজে দাঁত বার করে হাসছে।

এরকম একটি ঘরে এরকম আর্তনাদ অস্বাভাবিক। ফিউদরের পুরো শরীরে অপার্থিব একটি আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে, যখন সে দেখে তরুণটি এইরকমই চিৎকার করতে করতে টেবিলের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে; পরমুহূর্তেই দেখা যায় হাতে একটি ব্লেড সে তুলে নিয়েছে। তারপর নিজের নগ্ন শরীরে ব্লেডটি দিয়ে সে হিংস্রভাবে ক্ষত সৃষ্টি করতে থাকে। দৃশ্যটি নিঃসন্দেহে বিভৎস, কিন্তু তারচেয়েও বিভৎস হচ্ছে শব্দগুলো। ফিউদর এক পর্যায়ে তীব্র আতঙ্কে জমে যায় - সামনের তরুণটি ব্লেড দিয়ে নিজের পুরুষাঙ্গ কেটে শরীর থেকে আলাদা করে ফেলেছে। তরুণের ডান হাতে ব্লেড, বা হাতে নিজের পুরুষাঙ্গ। কাটা জায়গা থেকে গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে - সে চিৎকার করতে থাকে। তারপর ধুপ করে মেঝেতে পড়ে যায়। মেঝেতে তার শরীর দুবার কেঁপে ওঠে, সাথে হেঁচকির মত অস্ফুট গোঙানি। সব শেষ- ফিউদর কুলকুল করে ঘামতে থাকে। ভিডিওটা শতভাগ সত্যি, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে সত্যিই লাইভ ভিডিও ছিলো কি না, সেটা নিয়ে একটু সন্দেহ করা যায়। - হ্যালো মিস্টার স্মিরনোভ। নিজের নামটা শুনে এতক্ষণ ধরে জমতে থাকা আতঙ্কটা আরও গাঢ় হয়ে ওঠে ফিউদরের। - হু আর ইউ? হোয়াট আর ইউ? ওপাশ থেকে হাসির শব্দ আসে। - ইউজার নেম চেক করোনি আমার? আমি হামাজিয়ান রাম। - এইসব ইউজার নেম ফেক। ওপাশের হাসির শব্দ গাঢ় হয়। - তুমি ফেক নামে থাকো বলেই সবাইকে ফেক নামে থাকতে হবে? - তুমি আমার নাম জানো কিভাবে? - পিসির লোকেশন ট্রেস করে। - অসম্ভব! এইসব সাইট থেকে লোকেশন ট্রেস করক যায় না। - তুমি তো রেড রুমকেও অসম্ভব ভাবতে? তাই না? ফিউদর দিশেহারা বোধ করে। এই হামাজিয়ান রাম আসলেকে?

১৫ অক্টোবর, ২০১৮ - ইয়ুন দো, তুমি তোমাদের টিমের একমাত্র মেয়ে তাহলে? আয়েশা সহাস্য মুখে নতুন রুমমেটকে প্রশ্ন করে। মেয়েটিও হাসে। - হ্যাঁ। তবে আমার নাম ইয়ুন দো না, ইয়ুন দুয়ো। মনে মনে ফাপড়ে পড়ে যায় আয়েশা। কোরিয়ান নাম উচ্চারণে এত ঝামেলা কেন! নিজের ছোটবোনের কথা মনে পড়ে আয়েশার। নাফিসা। সারাদিন কেপপ শোনা আর কেড্রামা দেখা নাফিসার বোধহয় এইসব নাম উচ্চারণে কোন সমস্যাই হয় না। - তোমার বোধহয় আমার নাম উচ্চারণে সমস্যা হচ্ছে। ইউ ক্যান কল মি ক্লাউড দেন। ইয়ুন দুয়ো মানে ক্লাউড। " আয়েশা মেয়েটার দিকে তাকায়। একটা হাল্কা এবং সহজ ভাব আছে ওর চেহারায়। - মেঘ বলে ডাকি? ক্লাউডের বাংলা হচ্ছে মেঘ। - ম্যাগ? - না, ম্যাগ না, মেঘ। দু’জনেই সশব্দে হেসে ফেলে এইবার। ভাষা ভিন্ন হলে বোধহয় একই শব্দের উচ্চারণও ভিন্ন হয়ে যায়। মাশা ফোন দিয়ে ব্যালকনিতে। রুমে নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলো না। সে ফিরে আসে। - এই, চলো। কির ফোন করেছিলো। বের হতে হবে এইবার। - এক মিনিট। আয়েশা সোফার ওপর পড়ে থাকা লম্বা স্কার্ফটা নিয়ে আয়নার সামনে চলে যায়। ওর পরনে জিন্সের সাথে ফুলহাতা লং শার্ট। দ্রুত হাতে স্কার্ফটা পেচিয়ে পিন লাগাতে থাকে। - চলো। মাশা আর ইয়ুন দুয়ো দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।

(চলবে...)

‘দ্যা গেম’-এর তৃতীয় পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : দ্যা গেম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড