• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক গল্প : এক পলকের একটু দেখায় (৯ম পর্ব)

  সাবিকুন নাহার নিপা

২৮ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:৫৭
গল্প
ছবি : প্রতীকী

সকালে ঘুম থেকে উঠে তাওসিফ দু’টো খবর পেল। ভালো খবরটা হলো একটা সিনেমায় সহকারী পরিচালক এর কাজের সুযোগ। আর দ্বিতীয়টি হলো নিজের বানানো শর্ট ফিল্ম জন্য ভালো ফিডব্যাক আসায় পরের শর্ট ফিল্মে কিছু স্পন্সর পেয়েছে। তাওসিফের মনটা আজ খুব ফুরফুরে, তাই ঘরে থাকতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে।

ঘুরতে যাওয়ার কথা মনে হতেই প্রমার সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল। প্রমার কথা মনে হতেই মুখে আপনা-আপনি হাসি ফুটে উঠলো। এই খুশির খবরটা কি প্রমার সাথে শেয়ার করা যায়। যদি দুঃখ শেয়ার করা যায় তবে খুশিটা শেয়ার করতে সমস্যা কি!

গত রাত নির্ঘুম কাটায় প্রমার মাথা ব্যথা অনুভব হচ্ছে। তাই চোখ বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে। ফোনের রিং বেজে ওঠায় বিরক্ত চোখে একবার নামটা দেখে নিলো। পর পর দুবার ফোনের রিং বাজার পর ফোন টা রিসিভ করল। প্রমা কিছু বলার আগেই তাওসিফ বলল, - আচ্ছা প্রমা যাকে দুঃখের কথা বলা যায় তাকে তো আনন্দের কথাও বলা যায় তাইনা? - হু, হঠাৎ আনন্দিত হওয়ার কি ঘটেছে? তাওসিফ হেসে কারণ বলল। প্রমা শুনেও কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো না। শুকনো গলায় শুধু অভিনন্দন জানালো। - প্রমা আজ কি তুমি ফ্রি আছ? তাহলে চলো আজকের দিন টা সেলিব্রেট করি। প্রমা ইতস্তত করে বলল, - আমার শরীর টা আজ ভালো নেই তাওসিফ। প্লিজ কিছু মনে কইরো না। - আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি বরং রেস্ট নাও।

প্রমা ফোন রেখে কিছুক্ষণ কাঁদলো। ওর জীবন কেনো এরকম হলো। বেশ কিছুক্ষণ শব্দ করে কাঁদলো। পাশের রুম থেকে মেহের ছুটে এসে প্রমার পাশে বসে জিজ্ঞেস করল, - কি হয়েছে প্রমা? প্রমা একটু নিজেকে সামলে নিলো। তারপর আদ্রকন্ঠে বলল, ‘জানিস আমি কখনও কাউকে ভালোবাসিনি কেনো?’ - কেনো? - আমি ছোটবেলা থেকে একজন কেই স্বপ্নে দেখে এসেছি। যখন থেকে বুঝ হয়েছে তখন থেকে ভেবে এসেছি যে সেই আমার স্বামী হবে। কিন্তু সে এখন আমার খুব কাছে থাকা স্বত্তেও আমি তাকে পাওয়ার কথা ভাবতে পারিনা। - কার কথা বলছিস? তাওসিফ? - যেদিন থেকে ওর মা আমার মাকে বলেছিল তার ছেলের সাথে বিয়ের কথা সেদিন থেকেই আমি নিজেকে তাওসিফের ভেবে এসেছি। কিন্তু পরিস্থিতি এখন অন্যরকম। - পরিস্থিতি তো তুই ই খারাপ করছিস প্রমা। সামান্য ব্যাপার টাকে তুই জটিল করছিস না! আমার মনে হয় তাওসিফ ওর জায়গায় ঠিক ছিলো। ওর জায়গায় আমি থাকলেও সেটাই করতাম। প্রমা উত্তর না দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। জীবনে প্রথমবার নিজের ডিসিশন নিয়ে কনফিউজড প্রমা। কোনটাকে বেশী প্রাধান্য দেবে মন নাকি জেদ!

২ বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘুমানোর পর একটু শরীরটা ঝরঝরে লাগছে সৈকতের। কাল শেষ রাতের জ্বর টা বেশ ভালো কাবু করে ফেলেছে। চোখ জ্বলছে রোদ পড়ায়, মুখ টাও তিতে হয়ে আছে। ক্ষিদেও পেয়েছে। ঘড়ির টাইম দেখে চমকে উঠলো। এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে!

হাত মুখ ধুয়ে নিচে নামতেই দেখলো অনন্যা বাহির থেকে এসেছে। সৈকত কে দেখে হেসে বলল, - জ্বর কমেছে? সৈকত স্মিত হেসে বলল, - খিদে লেগেছে ভাবী। অনন্যা চোখ কপালে তুলে বিস্মিত কণ্ঠে বলল, - আপনি এখন ও কিছু খান নি? সৈকত আগের মতোই হেসে বলল, - মাত্র ঘুম থেকে উঠে এলাম তো! অনন্যার চোখেমুখে আগের মতোই বিস্ময়। আজ কলেজে গিয়েছিল নোট আনার জন্য। যাওয়ার আগে সিসিলিয়া কে বলেছিল সৈকত কে ডেকে খাবার দিতে। কিন্তু সিসিলিয়া সেটা করেনি দেখে এখন খুব মেজাজ খারাপ লাগছে অনন্যার। - ভাবী! - হ্যাঁ, ভাই দিচ্ছি এখুনি। আপনি একটু বসুন।

গরম গরম পরোটা আর ডিম খেতে খেতে সৈকত জিজ্ঞেস করল, ‘ভাবী কি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিবেন নাকি?’ অনন্যা ঠোঁট টিপে হেসে বলল, ‘কেনো দেখে কি ছোট মনে হচ্ছে?’ অনন্যার হাসি দেখে সৈকত ও হেসে খাওয়ায় মন দিলো। সিসিলিয়া ফ্রিজ খুলে পানি নেয়ার সময় আড়চোখে একবার সৈকত কে দেখল। সৈকত ও আড়চোখে একবার সিসিলিয়া কে দেখল। তারপর ই অনন্যার উদ্দেশ্যে বলল, - আপনি কি সত্যিই কলেজে পড়েন না ভাবী? অনন্যা স্বভাবসুলভ হেসে বলল, - আমি মাস্টার্স পরীক্ষা দেব। সৈকত চোখ কপালে তুলে বলল, - ওহ মাই গড! আপনাকে দেখলে তো বোঝাই যায় না! - না আমি লিয়ার থেকেও একটু বড়। - লিয়া মানে শিশি ভাবী? সিসিলিয়া তখনও রান্নাঘরের দাঁড়িয়ে টুকটাক কাজ করছিল। নিজের নাম শুনতেই কান খাড়া করল। সৈকত অবাক গলায় বলল, - শিশি ভাবী আপনার থেকে ছোট? কি বলেন! ওনাকে তো দেখলে মনে হয় দুই তিন বাচ্চার মা! আর আপনাকে তো এখন ও সুইট সিক্সটিন লাগে। সিসিলিয়া ঝড়ের বেগে রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে বলল, - আপনি যে চরম বেয়াদব সেটা কি আপনি জানেন? সৈকত হেসে বলল, - জি জানি। এই কথা এর আগে অনেকেই বলেছে। সিসিলিয়ার রাগ আরও বেড়ে যায়। সৈকতের কাছাকাছি গিয়ে টেবিলের উপর শব্দ করে আঘাত করে বলল, - সভ্য সমাজে কিভাবে কথা বলতে হয় জানেন না? শেষের কথাটা একটু চিৎকার করে বলায় সৈকত একটু শুকনো ঢোক গিলে বলল, - মারবেন নাকি ভাবী? আহা ভয় পাচ্ছি তো! সিসিলিয়া দেখল সৈকতের চোখে হাসি লেগে আছে। কিছু বলতে যাবে তার আগেই সৈকত ফিক করে হেসে ফেলল। সৈকত কে হাসতে দেখে অনন্যাও ঠোঁট টিপে হাসল। সিসিলিয়া কিছু না বলে চলে যেতে লাগলে সৈকত অনন্যার উদ্দেশ্যে বলল, - ভাবী আপনি একটু মাঝে মাঝে হাসবেন। তাহলে আপনি আরও সুন্দর হয়ে যাবেন। কেউ কেউ যে হাসেনা, তাদের দেখতে কিন্তু ভুতের বউয়ের মতো লাগে। দরজায় শব্দ করে সিসিলিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই সৈকত আর অনন্যা শব্দ করে হেসে ফেলল।

৩ সিসিলিয়া নিজের রুমে গিয়ে রাগে ফুঁসছে। দিন দিন ছেলেটার অসভ্যতা বেড়েই চলছে। কতো বড় সাহস ওকে কিনা বলে দুই তিন বাচ্চার মা! সিরিয়াসলি! এত বুড়ি লাগে! সিসিলিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে মনে মনে বলল,গেট রেডি সৈকত ইসলাম খান।

বারান্দার মিষ্টি রোদে বসে সৈকত ছবি আঁকার চেষ্টা করছিল কিছুক্ষণ যাবত। সিসিলিয়া তখন ই এসে সামনে দাঁড়ালো। সৈকত একটু ভরকে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, - গরিবের আখড়ায় হাতির পা? সিসিলিয়া রাগ করার বদলে মিষ্টি হেসে বলল, - ভালো আছেন তো? শরীর ভালো? সৈকতের মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল। স্পষ্ট বুঝতে পারছে কোনা ঘাপলা আছে। একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, - কি যে বলেন না! যেদিন থেকে আপনাদের বাড়ি এসেছি সেদিন থেকেই তো ভালো আছি। তারপর আবার আপনার হাতের সুস্বাদু চা... সিসিলিয়া আগের মতোই হাসিমুখে সৈকতের দিকে তাকিয়ে আছে। একটু মুখ ভার করে বলল, - আঙ্কেল আজ ফোন করে আপনার কথা খুব জানতে চেয়েছিল জানেন তো! আপনাকে নিয়ে খুব টেনশন করেন তো তাই। এতক্ষণে সৈকতের পুরো ব্যাপার টা বোধগম্য হলো। সিসিলিয়া তাহলে এভাবে শোধ নিচ্ছে! সৈকত কিছু বলতে পারলো না। মনে হলো কেউ ওর গলা চেপে ধরেছে। সিসিলিয়া ফোন টা সৈকতের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, - রিং হচ্ছে... সৈকত একটা শুকনো ঢোক গিলে মিনমিন করে হ্যালো বলল। নিজের গলার স্বরে নিজেই চমকে গেল। সিসিলিয়া নিশ্চুপ হাসছে।

রহমান সাহেব গমগমে গলায় বলল, - কি খবর? সৈকত আস্তে করে বলল, - আলহামদুলিল্লাহ খালুজান। রহমান সাহেব সিংহের মতো গর্জন করে বলল, - গাধার ঘরের গাধা কতদিন বলেছি খালুজান ডাকবি না। - জি আচ্ছা চাচাজান। - কি করছিস আজকাল? আগের মতোই মুসাফিরগিরি? - জি জি। - বেশ বেশ। তুমি বাবা সেটাই করো। কিন্তু আমার বাড়ির মেয়েগুলোর মাথা খেয়োনা। - জি আচ্ছা। - শুনছি তুমি নাকি সিসিলিয়া কে ভাবী ডাকো? সৈকত সিসিলিয়ার দিকে বড় বড় চোখ করে একবার তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল, - জি চাচাজান। আসলে ভাবী মানে সিসিলিয়া নিজেই বলেছেন ভাবী ডাকতে। সিসিলিয়া চমকে উঠে সৈকতের দিকে তাকায়। সৈকত আবারও বলে, - আসলে উনি যখন রাস্তা দিয়ে হেটে যায় তখন বাচ্চা থেকে শুরু করে সবাই তার পেছন পেছন যায়। এইজন্য উনি আমাকে বাইরে দেখা হলে ভাবী ডাকতে বলেছেন। রহমান সাহেব সন্দিহান গলায় বললেন, - সত্যি? - জি চাচাজান। আমি শুধু বাইরেই ভাবী ডাকি। ঘরে তো তার সাথে কথাই বলিনা। দেখা হলে মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে চলে আসি। আপনি তো জানেন আমি মেয়েদের দেখলে কতো লজ্জা পাই। সিসিলিয়া হতভম্ব মুখে তাকিয়ে আছে সৈকতে দিকে। রহমান সাহেব বললেন, - হ্যাঁ বাপ আমার সে আর বলতে! আর যা করো কর, কিন্তু লিয়ার থেকে ১০০ গজ দুরে থাকবে। - জি চাচাজান। আমি আজই গজফিতা কিনে মেপে নেবো। রহমান সাহেব গমগমে গলায় বলল, - আমার সাথে রসিকতা করিস তুই গাধা? সামনে পেলে তোকে জুতাপেটা করবো হারামজাদা। সৈকত মন খারাপ করার অভিনয় করে বলল, - বার বার গাধা বলবেন না চাচাজান। তার থেকে কুত্তা বলুন। ভাদ্রমাসের কুত্তা, শুনতে ভালো লাগে। গাধা শুনলেই ছোটবেলায় বইয়ে পড়া তুলার বস্তা বয়ে বেড়ানো গাধার কথা মনে পড়ে। মন খারাপ হয়ে যায়.. রহমান সাহেব অকথ্য ভাষায় কিছুক্ষণ গালাগালি করলে সৈকত নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, - চাচাজান গুলিস্তানের ৫০ টাকার দুই জোড়া জুতা কি কিনে রাখব? একজোড়া আমাকে আর অন্যজোড়া প্রতিক কে পেটানোর জন্য? পরিস্থিতি বিগড়ে যাচ্ছে দেখে সিসিলিয়া ফোনটা কেড়ে নিলো। সৈকত মিটিমিটি হেসে বলল, - আমাকে শায়েস্তা করা কি এতো সহজ টুনির মা? সিসিলিয়া চোখ বড় করে বলল, - আপনার মতো অসভ্য আমি সত্যিই আর দেখিনি। - তাই? তাহলে এখন দেখে নিন। আর ২০টাকা দিয়ে যান। সৈকত কি এতো সস্তা নাকি যে কেউ এসে ফ্রি দেখে যাবে! গুনে গুনে ২০ টাকা দেবেন। সিসিলিয়া তোতলাতে তোতলাতে বলল, - আপনাকে দেখে নেব। - আপনি দেখলে তো আমার ই লাভ। যত দেখবেন তত টাকা পাবো। একটু বাড়িয়ে দিয়েন বুঝলেন! সৈকত একটু লজ্জা পেয়ে বলল, - সুন্দর হলে এই এক ঝামেলা। মেয়েরা শুধু দেখতে চায়। সিসিলিয়া হনহন করে হেটে চলে গেল। মিনিট দুয়েক পর এক বালতি ময়লা পানি সৈকতের গায়ে ঢেলে দিলে সৈকত বলল, - বললেই হতো আজ গোসল করতে হবে! শুধু শুধু কষ্ট করে পানি ঢালার কি দরকার ছিলো!

(চলবে...)

আরো পড়ুন ৮ম পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : এক পলকের একটু দেখায়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড