• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্যা গেম (১৫তম পর্ব)

  রোকেয়া আশা

২৪ নভেম্বর ২০১৯, ১১:১৮
গল্প
ছবি : প্রতীকী

নদীটার কাছাকাছি পৌঁছাতেই মিশু আর মাহিরা হইহই করে ওঠে। ভ্যানটা একধারে পার্ক করে রেখে নেমে পড়ে ফিউদর। ততক্ষণে পেছনের দরজা খুলে ছেলেমেয়েরা বের হয়ে গেছে সবাই৷ - পাহাড়! মাহিরার উত্তেজিত চিৎকার শুনে অন্যরাও ডানে তাকিয়ে দেখে গাঢ় সবুজ রঙের রাজকীয় চূড়াটাকে। আর ওদের পায়ের কাছ থেকে কয়েক কদম দূরেই ঝলমলে রুপোলী জল৷ কেমন বাঁককাটা প্রশস্ত একটা রুপোলী ফিতের মতন। মাশা সকোলভা ছুটে এসে বাংলাদেশীদের সামনে দাঁড়ায় মুখ নদীর দিক থেকে ফিরিয়ে এবার ওদের মুখোমুখি। তারপর দু হাত দুইদিকে ডানার মতো করে ছড়িয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে, ‘মস্কভার তীরে তোমাদের স্বাগতম।’ সূর্য তখন মাশার ঠিক পেছনে। ওর উজ্জ্বল সোনালী চুলগুলোয় রোদ পড়ে ঝলমলিয়ে উঠে। ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকে কিছুটা দূরে একটা ওক গাছ। নদীর একদম ধার ঘেঁষে।

বুড়ো ওক। গাছটায় তখনও কিছু পাতা আছে। সবে তো হেমন্ত। তবে নিচেও পাতা ঝরে আছে অনেক। পাতা ঝরার মৌসুমই তো এখন। আধন্যাড়া গাছটার৷ একটা পাতাহীন ডালে বড়সড় একটা পাখির বাসা। বাদামী রঙের ছোট দুটো পাখি চক্কর দিচ্ছে বাসাটার ওপর।

ওদের থেকে অনেকটা ডানদিকে উঁচু সবুজ পাহাড়ের চূড়া। রোদ ঝলমল করছে এখনো। উজ্জ্বল বিকেল। পাহাড়ের দিকে তাকায় মাশাকে বলে ওঠে দিপ্ত, ‘এই পাহাড়টার নাম কি?’ - স্প্যারোজ হিল। সুন্দর না? এটা মস্কোর সবচেয়ে উঁচু জায়গা। - পাহাড়টা? - হ্যাঁ। আগে নাম ছিলো লেনিন হিল। যাবে ওপরে? ভিও স্টেশন আছে। অনেক কিছু দেখা যায় ওপর থেকে। একসাথে চেঁচিয়ে ওঠে মিশু মাহিরা বলে, ‘অবশ্যই যাবো!’ ফিউদর বলে, ‘আমি যাবো না। তোমরাই যাও।’ জোরাজুরি করে না কেউই। আট তরুণ তরুণীই তখন হাটতে শুরু করে পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। - এই পাহাড়ে কি অনেক চড়ুই পাখি আছে? মাহিরার প্রশ্নের উত্তরে মাশা স্মিত হাসে। - আছে কিছু। চলো। গেলেই দেখতে পাবে। কালো পিচের মসৃণ রাস্তা পাহাড়ের গায়ে। পাহাড় চড়ার মতো পরিশ্রম হচ্ছে না তাই কারো। আরও অনেকেই উঠছে ওপরে। ওপর থেকে নেমেও আসছে কিছু মানুষ। মাশা জানায়, ‘স্প্যারো হিল আর মস্কভা নদী রাশিয়ার খুব বিখ্যাত টুরিস্ট স্পট। ওপরে চলো। নিজেরাই দেখবে৷ মাদার রাশা কত্ত সুন্দর।’

ওপরে উঠে সত্যিই বিস্মিত হয় ওরা সবাই। সত্যিই অপূর্ব। পাহাড়ের পায়ের কাছের মস্কভা নদীতে শেষ বিকেলের নরম রোদ ঝিলিয়ে পড়ছে৷ কিছুক্ষণ আগের রুপোলী নদী এখন তরল সোনা হয়ে গেছে যেন। - ওই যে, আমার ইউনিভার্সিটি। মাশার উচ্ছ্বসিত গলা শুনে তাকিয়ে দেখে সবাই। চমৎকার স্থাপনা৷ সামনে সবুজ মাঠ। - মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি। মাশা বলতে থাকে, ‘আর - ওই যে দেখো, লুঝকিনি স্টেডিয়াম। কিছুদিন আগেই ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল হয়ে গেছে এখানে।’

স্টেডিয়ামটাও সুন্দর। তবে, ওদের এসব কিছু এতটাও টানছে না। পুরো মনোযোগটা কেড়ে নিয়েছে রোদে ঝলমল মস্কভা নদী, বুড়ো ওক গাছ আর যুগল পাখি। মিশু আনমনেই বলে উঠে, ‘কি সুন্দর বিকেলটা!’ মাশা বলে, ‘হ্যাঁ। আমি অনেকদিন পর এলাম এখানে। জোশেফ চলে যাওয়ার পর থেকে আসিনি আর। - জোশেফ? আয়েশা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় মাশার দিকে। মাশা ভিউ স্টেশনের রেলিংটার আরও কাছে যায়। রেলিং ধরে সামনে রোদের দিকে তাকায়। জোশেফ আমার বন্ধু। কিংবা আরও বেশি কিছু। ও থাকতে বুঝিনি। একসাথেই পড়াশুনা করতাম আমরা। ডান হাতের তর্জনী তুলে সামনে দেখালো, ‘ওই বিল্ডিংটায়।’ ‘জোশেফের কি হয়েছে?’ আয়েশা জিজ্ঞেস করে আবারও। ‘মারা গেছে।’ মাশার গলা নিরুত্তাপ। একটুও কাঁপে না। নিজেই অবাক হয় মাশা। এত সহজে বলতে পারলো বলে। নিজেকে সামলে নেয় দ্রুতই। - চলো, নামি। সন্ধ্যা হতে বেশি বাকি নেই। দ্বিরুক্তি না করে অন্যরাও নেমে যায় মাশার সাথে। আয়েশা, শাহেদ, দীপ্ত আর তারিকুল পিছনে পড়ে যায়। ইচ্ছাকৃতই অবশ্য। আয়েশা নিচুগলায় বাংলায় বলে, ‘শিল্পা দেখা করবে বলেছে।’ ‘কখন?’ দীপ্ত জিজ্ঞেস করে। - এক্সেক্ট টাইম দেই নি৷ বলেছি সন্ধ্যার পর। দীপ্ত আর শাহেদ চোখাচোখি করে। শাহেদ গলা খাকারি দেয়। - তায়ে হির সাথে তাহলে ডিনারের পরে কথা বলি৷ আর শিল্পার সাথে ডিনারের আগে। ভ্রু কুঁচকে ফেলে আয়েশা৷ - না। ‘কেন?’ তারিকুল প্রশ্ন করে। - আলাদা সময়ে না৷ একই সময়ে। সন্ধ্যার পরে আমি আর দীপ্ত শিল্পার সাথে কথা বলবো। তুই আর শাহেদ যাবি তায়ে হির সাথে কথা বলতে। দীপ্ত বুঝতে পেরে মাথা ঝাঁকায়। -আপু বলতে চাইছে, দুইজনের সাথে একই সময়ে আলাদা দুই দলে কথা বললে বোঝা যাবে, ওরা সত্যি বলছে কিনা। দুইজনের বক্তব্য যদি এক হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে ওরা সত্যি বলছে। আর যদি দেখি দুইজনের বক্তব্য আলাদা - ‘ওরা কিছু লুকোচ্ছে।’ দীপ্তের কথাটা শেষ করে তারিকুল।

ফিউদর একের পর এক সিগারেট ধ্বংস করে যাচ্ছে। অস্থিরতা কাটছে না তবু। এদেরকে পৌঁছে দিয়ে এসে ভ্যালেন্তিনার সাথে ডিনার করতে যাবে। ঠিক করে নেয় সে। তারপর চুটিয়ে প্রেম করবে দুজন। টেক্সট পেয়েছে কিছুক্ষণ আগে। রাত দুটোয় আইজ্যাক কথা বলবে। কোরিয়ার পারফর্মেন্স নিয়ে রেগে গেছেন হামাজিয়ান রাম। আইজ্যাক এখন কি বলতে চায়, ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় সে। কোরিয়া। কোরিয়াকে সরাতে হবে। ফিউদরের এতদিনের এতকষ্টের রোজগারের সব৷ বিটকয়েন হামাজিয়ান রাম এনক্রিপ্ট করে রেখেছে। আর কোন শাস্তি না দিয়ে যদি কারেন্সিগুলোও হামাজিয়ান রাম নিয়ে নেয় - তাহলেও ফিউদরের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।

(চলবে...)

‘দ্যা গেম’-এর ১৪তম পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : দ্যা গেম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড