• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ (২০তম পর্ব)

  রিফাত হোসেন

১৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:৩৮
গল্প
ছবি : প্রতীকী

ইতি এগিয়ে এলো রাফার দিকে। চোখ পাকিয়ে কৌতূহলী হয়ে বলল, ‘এভাবে হাসছিস কেন রাফা? কি আছে ফোনে?’

ইতির কৌতূহল দূর করার জন্য রাফা ফোনটা ঘুরিয়ে ইতির দিকে তাক করল। স্ক্রিনের দিকে দেখেই ‘থ’ মেরে দাঁড়িয়ে রইল ইতি। মুখটা হা হয়ে গেছে। শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছে ওর। সায়েমের দিকে একবার আড়চোখে তাকালো। সায়েম অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। সায়েমের চুপ করে থাকা দেখে ইতির কৌতূহলটা গাঢ় হচ্ছে। সায়েমের দিকে কিছুক্ষণ চোখটা স্থির রেখে ইতি কড়া গলায় বলল, ‘ছি. ভাইয়া। তুমি এইরকম একটা কাজ করতে পারলে। আরে তুমি যদি রাফাকে মেনেই নিয়ে থাকো, তাহলে সারা আপুকে এভাবে অপেক্ষাকৃত অবস্থায় রেখে দিয়েছ কেন?’

সায়েম চুপ থেকে নিজের কথাগুলো সাজিয়ে নিচ্ছে পরপর। কয়েকবার কাশি দিয়ে গলাটা একটু খোলামেলা করে নিলো। ইতি আবারও বলল, ‘তুমি কি জানো দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না? দু’টো নৌকা আলাদা। আর এই আলাদা নৌকাগুলো সারাক্ষণ একসাথে থাকবে না। কখনো না কখনো এরা আলাদা হবেই। আর তখনই তুমি ফিনিশ। তাই বলছি, আগে থেকেই যে কোনো একটা নৌকা বেছে নাও। যেটাতে পা দিয়ে তুমি সারাজীবন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে।’

ইতির কথা শেষ হতেই সায়েম গলাটা আবারও ঠিক করে নিলো। এরপর আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলল, ‘আমাকে ভুল বুঝাটা সবার একটা বস-অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেউই ভেতরের সত্যিটা জানার চেষ্টা করে না।’

- তাহলে কি এই ছবিগুলো মিথ্যে? নাকি ছবির দৃশ্যগুলো মিথ্যে।

সায়েম অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘আরে ভাই আমার কথা পুরোটা শোন আগে। তারপর নিজেই বুঝতে পারবি এইরকম কেন হলো।’

ইতি শান্ত হয়ে একজায়গায় স্থির হয়ে বসে বলল, ‘ছবিতে যেটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, সেটা তো আর মিথ্যে না।’

সায়েম চোখ অদৃশ্য অগুণ নিয়ে রাফার দিকে তাকালো। রাফা ভয়ে ভয়ে বলল, ‘আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ কেন? আমি কিন্তু কিছুই করিনি।’

সায়েম রাফার সামনে এসে দাঁড়ালো। রাগে ওর শরীর কাঁপছে। তবুও একভাবে তাকিয়ে আছে রাফার চোখের দিকে। সায়েম কি করতে চাচ্ছে তা বুঝতে পারছে না রাফা। তবে খুব ভালো যে কিছু হতে চলেছে না, তা রাফার কাছে স্পষ্ট। কিছুক্ষণ নীরবতা সবার মাঝে। মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে অনবরত। সায়েম হঠাৎ রাফার শাড়ির আঁচল টান দিলো। ক্লিপ দিয়ে আটকানো আঁচলটা আচমকা টান দেওয়ায় রাফা কিছুটা ব্যথা পেয়ে ‘উফ’ শব্দটা করে থেমে গেল। রাফা যেন থমকে গেল সায়েমের এরূপ কাণ্ড দেখে। ইতি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। এখানে থাকা যে ওর ঠিক হবে না, সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে ও। তাই আগেভাগে কেটে পড়ল। রাফা ইতির চলে যাওয়া দেখে ফিসফিস করে সায়েমকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘তোমার বোনও বুঝতে পেরেছে এখন সাংঘাতিক কিছু হতে চলেছে। সেজন্যই তো লজ্জা পেয়ে চলে গেল। আচ্ছা, তোমার মাথায় কি বুদ্ধি নেই? স্ত্রীর শাড়ি খুলবে ভালো কথা, তাই বলে কি এই ড্রয়িংরুমে? কোনো ব্যক্তি না দেখলেও ড্রয়িংরুমের জিনিসপত্র তো দেখছে। সুতরাং ঘরের কাজগুলো এখানে করে এদের দেখানোর কি প্রয়োজন আছে?’

সায়েম রাফার শাড়ির আঁচলটা হাতের মুঠোয় নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রাফার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেন জানি রাফা হঠাৎ লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। গভীরভাবে ভাবতে লাগল সায়েমের মনের অবস্থাটা। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করল রাফা, ‘সায়েমের সামনে ১৮+ বয়সের একটা টগবগে যুবতী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যার বুকটা প্রায় অর্ধ উন্মুক্ত। আচ্ছা, সায়েমের মনের ভিতর কি চলছে এখন?’

হঠাৎ করে সায়েম শাড়ির আঁচলটা দিয়ে রাফার মুখ বেধে দিলো। রাফার ইন্টারেস্টিং ভাবনাগুলো ভেস্তে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। সায়েম রাফার মুখটা ভালো করে বেধে দিয়ে, রাফার হাত দু’টো মুঠোবন্দি করে বলল, ‘এবার আমি বলব, আর তুমি শুনবে। শোনো রাফা, তোমার কু-কর্মের মাত্রা দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। আজকের ব্যাপারটাই দেখ না। বিকেলে তুমি যেটা করলে, সেটা একেবারেই ঠিক করনি। তার থেকেও বেশ বড় অন্যায় করেছ সেই মুহূর্তটার ছবি তুলে। আমি তোমার ঠোঁটে চুমু দিইনি। বরং তুমিই আমার ঠোঁটে চুমু দিয়েছ। আমার গালেও তুমিই চুমু দিয়েছ। অথচ এমন একটা পরিস্থিতিতে ছবি দু'টো তোলা হয়েছে যে, আমি আর তুমি ব্যতীত অন্য যেকোনো ব্যক্তি ছবিটা দেখলেই বললে আমি স্ব-ইচ্ছায় তোমাকে চুমু দিয়েছি। কিন্তু এটা তো সত্যিই না, তাই না রাফা?’

রাফার হাত দু’টো সায়েমের হাতের মুঠোয়। সায়েমের শক্ত আর বড় বড় হাতের মুঠো থেকে ও নিজের নরম আর ছোট্ট হাত দু’টো ছাড়িয়ে নিতে পারছে না। এদিকে মুখটাও বাধা। তাই কথা-ও বলতে পারছে না। এমতাবস্থায় মাথা নাড়িয়ে ইশারা দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই রাফা মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ বলল।

কিন্তু রাফার এই মাথা নাড়ানোটা সায়েমের রাগের কারণ হয়ে উঠল। ও রাফার হাতটা আরো জোর দিয়ে চেপে ধরে বলল, ‘আমি কী তোমাকে বলেছি মাথা নাড়তে? আমার স্ট্রেট উত্তর চাই। বল ছবিগুলো এক্ষুনি ডিলিট করবে কী-না?’

রাফার হাতটাতে খুবই যন্ত্রণা হচ্ছে। যন্ত্রণায় মরে যাওয়ার মতো অবস্থা । মনে হচ্ছে হাতের চামড়া ঝলসে যাচ্ছে। এত কষ্ট অনুভব করার পরও ও মুখে কোনোরকম শব্দ করতে পারছে না। আওয়াজ বের হওয়ার রাস্তাটা বন্ধ। কিন্তু চোখের জলের সামনে তো কোনো বাধা নেই। আর থাকলেও সে বাধা অতিক্রম করার মতো ক্ষমতা চোখের জলের আছে। তাই চোখের পলক ফালানোর সাথে সাথে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। সায়েম তা দেখেও না দেখার মতো ভান করে বলল, ‘যত চুপ থাকবে, ততই কষ্ট পেতে হবে। তাই বলছি, নিজের ভালো চাইলে বল ছবিগুলো ডিলিট করবে কি-না? আর নাহলে ফোনের লকটা আমাকে বল, আমি নিজেই ডিলিট করে দিচ্ছি।’

প্রতিবারের মতো এবারও রাফা নীরবে শুধু চোখের জল ফেলল। হঠাৎ ঘরের ভিতর থেকে ইতি ড্রয়িংরুমে এলো। সায়েমের সামনে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলল - " এইসব কী হচ্ছে ভাইয়া? তুমি ওর সাথে এইরকম করছ কেন?"

সায়েম রাফার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘সাংঘাতিক অসভ্য একটা মেয়ে ও৷ এত যন্ত্রণা দেওয়ার পরেও মুখে একবার বলছে না ছবিগুলো ডিলিট করবে। আর আমাকে ওর ফোনের সিকিউরিটি লকটাও বলছে না।’

ইতি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, ‘বোকামির একটা লিমিট আছে ভাইয়া। তুমি সেটাও অতিক্রম করলে আজ।’

সায়েম ভ্রু-কুঁচকালো। ইতি আবার বলল, ‘কারোর মুখ বাধা থাকলে সে কী করে কথা বলতে পারবে আমাকে একটু বলবে প্লিজ? ও ইশারায় তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে৷ অথচ তুমি সেই অপরাধে ওকে আরও কষ্ট দিচ্ছ। তোমার এরূপ কাণ্ডে আমি আসলেই অবাক ভাইয়া।’

সায়েম এক মিনিট ভাবল। এরপর আবোলতাবোল কী যেন বুঝে রাফার মুখের বাধন খুলে দিলো। হাতটাও ছেড়ে দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে এলো রাফার কাছ থেকে। রাফা বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে আর নিজের হাত দেখছে। সায়েমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাফা এগিয়ে এসে সায়েমের বুকে কিল-ঘুষি মারতে লাগল। সায়েম ওকে থামানোর চেষ্টা করেও পারল না। ইতি সেভাবেই ‘হা’ করে দাঁড়িয়ে দেখছে রাফার কাণ্ড। রাফা মারতে মারতে একসময় সায়েমের বুকে ঝাপিয়ে পড়ল। দুই হাতে জাপটে ধরল সায়েমকে। কেঁদে কেঁদে বলল, ‘তোমার মতো খারাপ লোক আমি এই পৃথিবীতে আর দেখিনি সায়েম। তুমি আমাকে অপছন্দ কর ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে আমাকে এভাবে কষ্ট দিবে৷ জন্মের পর থেকে সামান্যতম কষ্ট আমি পাইনি। কষ্ট কী জিনিস, তা কেউই বুঝতে দেয়নি আমাকে। অথচ তুমি অমানুষের মতো আমাকে অত্যাচার করছ।’

সায়েম কিছু বলতে পারল না। ওর গলাটা ভারী হয়ে গেছে। নিঃশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসছে চাঁপা কষ্ট। রাফা সায়েমকে ছেড়ে দিলো। সায়েম রাফার দিকে তাকিয়ে দেখল, রাফার চোখ থেকে অজস্র জল গড়িয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে বড়সড় একটা নদী বয়ে যাচ্ছে রাফার চোখ থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত। রাফা ওর দিকে হাত দু'টো বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘দেখ হাতের অবস্থা কী করেছ?’

সায়েম তাকালো রাফার হাতের দিকে। সাদা দবদবে হাত দু'টো লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পুরো হাতে রক্তের মাখামাখি। সায়েম ভিতরে নিজের অমানবিক নিষ্ঠুরতার জন্য অনুশোচনা হতে লাগল। রাফার ভাষায় এটা অমানবিক নয়, অমানুষিক নিষ্ঠুরতা। সায়েম রাফার হাত ধরল। নিজের হাত রাফার লালচে হাতের উপর বুলাতে লাগল। ব্যাথায় ডুকরে কেঁদে উঠল রাফা। সায়েম নিজেই আবার রাফাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আই এম সরি রাফা। আসলে আমি বুঝতে পারিনি এতকিছু হয়ে যাবে৷ আমি শুধুমাত্র তোমাকে একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।’

রাফা আরো কেঁদে উঠল। সায়েম নিজের দোষের পাল্লা হালকা করার জন্য বলল, ‘আরে বোন এবার তো থামো। আমি তো জাস্ট মজা করেছি। কিছুই হয়নি ভেবে ভুলে যাও দয়া করে।’

রাফা নাক টেনে বলল, ‘ভুলব না। কিছুতেই ভুলব এইরকম যন্ত্রণাদায়ক ঘটনা। আমি আর থাকবো না তোমার কাছে। আমি চলে যাবো।’

সায়েম হঠাৎ রাফাকে ছেড়ে দিলো। বিজয়ীর একটা হাসি নিয়ে রাফার চোখের দিকে তাকালো। মুহূর্তের মধ্যেই পাল্টে গেল অপরাধীর মতো চুপশে থাকা মুখটা। অদ্ভুত একটা ভাব দিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ‘দারুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছ রাফা। কোনো চিন্তা করো না। মাত্র ১০টা বাজে। আমি নিজে একটা গাড়ি ঠিক করে দিবো তোমাকে। তুমি খুব শীঘ্রই ওই বাড়িতে পৌঁছে যাবে।’

রাফা অবাক হওয়ার মতো করে বলল, ‘তুমি এইসব কী বলছ?’

সায়েম হাসতে হাসতে বলল, ‘আসলে বেশি খুশিতে একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছি। তবে তুমি কোনো চিন্তা করো না, প্রয়োজনে গাড়ি ভাড়াটাও আমি দিয়ে দিবো।’

রাফা মৃদু হাসি দিয়ে বলল, ‘আরে ভাই থেমে যাও। বোকার মতো এত লাফি-ও না। আমি জাস্ট মজা করছিলাম তোমার সাথে।’

রাফার কথা শুনে ইতি শব্দ করে হেসে দিলো। সায়েম আহত গলায় বলল, ‘এভাবে কেউ মজা করে। বুকের উপরে থাকা পাথরটার ওজন কমে গিয়েও যেন আমার কয়েকগুণ বেড়ে গেল।’

রাফা হেসে দিলো। পাশ থেকে ইতি নড়েচড়ে দাঁড়ালো। হাসি থামিয়ে দিয়ে সায়েমকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘শোন ভাইয়া, এইসব আলাপ-আলোচনা তোমরা নিজেদের ঘরে গিয়ে করো। এখানে এইসব বকবকানি করে আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিও না।’

- নিজেদের ঘর মানে কী? ওটা শুধুমাত্র আমার একার ঘর।

- উঁহু। রাফাও তোমার সাথে একই ঘরে থাকবে আজ থেকে।

ইতির কথাটাকে সায়েম তুচ্ছতায় এড়িয়ে গিয়ে বলল, ‘অসম্ভব। এটা একেবারেই অসম্ভব।’

ইতি রাগী গলায় বলল, ‘সম্ভব। খুব করে সম্ভব। এটা সম্ভব হতে তোমাকে বাধ্য করব আমি। আমার কথা না শুনলে রাফার ফোনে থাকা ছবি দু'টো আমি সারা আপুকে দেখিয়ে দিবো। অবশ্য তাকে দেখিয়ে লাভ নেই, বিকজ সে তোমাকেই বেশি বিশ্বাস করবে। নো সমস্যা, আমি বাবা-মাকে দেখাবো। তারাও জানুক, যে ছেলে দু'দিন আগেও বলেছে বউকে মেনে নিবে না। সেই ছেলে ফাঁকা বাড়ি পেয়ে বউকে চুমু দিচ্ছে।’

সায়েম হাবলার মতো করে ইতির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এইসব কী বলছিস তুই?’

ইতি কড়া গলায় বলল, ‘এখানেই শেষ নয়। আরো বাকি আছে। আমার কথা না শুনলে আমি তোমার নামে নারী নির্যাতনের মামলা করল। উঁহু, নারী নয়, স্ত্রী নির্যাতনের মামলা।’

- তোর মাথা কী ঠিক আছে ইতি? ভুলভাল কিছু খেয়েছিস নাকি?

- চুপ কর তুমি। তোমার মতো এক লোকের এটাই প্রাপ্য। মানুষ সৎ স্ত্রীর সাথেও যে আচরণ করে না, তুমি নিজের স্ত্রীর সাথে তার থেকেও খারাপ আচরণ করছ। তোমার কপালে দুঃখ আছে। এখন এইসব নাটক বন্ধ করে রাফাকে নিয়ে ঘরে যাও। আর আমাকেও একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও।

ইতি হনহনিয়ে চলে গেল নিজের ঘরে। সায়েম রাফার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সৎ বাবা-মা হয় শুনেছি। কিন্তু সৎ স্ত্রী যে হয়, এই প্রথম শুনলাম।’

- আমিও এই প্রথম শুনলাম।

সায়েম রাফাকে ধমক দিয়ে বলল, ‘আগে শোনোনি তো এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও ঘরে যাও।’

রাফা চলে গেল সায়েমের ঘরে। সায়েম কপালে জমে থাকা ঘামটুকু মুছে এক-পা দু-পা করে ইতির ঘরের দিকে এলো। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ভিতরে উঁকি দিতেই দেখল ইতির আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রাগে ফুসছে। আর আয়নায় নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘মিস ইতি, মাথাটা একটু ঠাণ্ডা কর। কিছুদিন পর তোর বিয়ে হবে। তুই মিস থেকে মিসেস এ পা দিবি। প্রমোশনটা চাকরিতে না হলেও জীবন যুদ্ধে হবে৷ এইসময় তোর আনন্দে থাকা বাধ্যতামূলক। এভাবে হুটহাট রেগে যাওয়া তোকে মানায় না। ভেবে নে বিয়ের আগ-পর্যন্ত আনন্দে থাকা তোর জন্য ফরজ করে দেওয়া হয়েছে।’

আচমকা সায়েমকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আতঙ্কে উঠল ইতি। সায়েমের দিকে তাকিয়ে ভয়টা কমিয়ে আবারও সেই রাগী ভাব নিয়ে বলল, ‘কী হলো? এখানে কী করছ?’

সায়েম মৃদু হাসি দিয়ে ইতির দুই গালে হাত রাখল। ইতিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসে বলল, ‘তোর কথাই শুনছিলাম। বিয়ের জন্য একেবারেই ছটফট করছিস দেখছি। ঠিক আছে, খুব শীঘ্রই তোর আর ফাহাদের বিয়ের ব্যবস্থা করব আমি।’

ইতি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। কিন্তু পরক্ষণেই লজ্জায় মায়া ত্যাগ করে মাথা তুলে তাকালো সায়েমের দিকে। কড়া গলায় বলল, ‘আমার রাগ কমানোর জন্য ঘুষ হিসেবে বিয়ের কথাটা বললে, তাই না ভাইয়া? বাট আমি তো আর তোমার বাপের মতো বজ্জাত ঘুষখোর না। যে ঘুষ খাবো।’

- ছি. ইতি। বাবাকে নিয়ে এইসব কী বলছিস? মানছি বাবার উপর আমার থেকেও তোর ক্ষোভটা বেশি। তাই বলে এভাবে বলবি। তুই কী জানিস না বাবা আমার থেকেও তোকে বেশি ভালোবাসে? হয়তো আমাদের বাবা প্রকাশ করে না। বাট সবাই জানে বাবা ছেলের থেকেও মেয়েকে বেশি ভালোবাসে। মেয়েদের তারা রাজকন্যার চোখে দেখে।

ইতি গভীর এক ভাবনা থেকে বলল, ‘সেটা তো জানি। বাট বাপটা তো আস্ত একটা বজ্জাত। সাংঘাতিক খারাপ লোক সে।’

- হা হা হা। সে যা ভাবিস তুই। কিন্তু বাবা ঘুষখোর মানে কী? কবে ঘুষ খেয়েছে বাবা?

- আরে এটা তো মজা করে বলেছি।

- ঠিক আছে। তুই একটু রাফার হাতে মলম লাগিয়ে দে।

ইতি এখন পুরোপুরি শান্ত। অন্য কোনো কারণে নয়, ভাই বলেছে খুব শীঘ্রই বিয়ের ব্যবস্থা করবে, এই খুশিতেই সে শান্ত। তাই তার রাগ এখন ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে। ড্রয়ার থেকে মলম বের করে বলল, ‘চলো যাই।’

- তুই যা। আমার একটু কাজ আছে। আমি বাইরে যাবো একটু।

ইতি চোখ পাকিয়ে বলল, ‘এত রাতে কী কাজ আছে তোমার? আর বাইরে কোথায় যাবে?’

- সেটা পরে বলব। তুই দরজাটা লক করে দে। আমি খুব তাড়াতাড়িই ফিরে আসবো।

ইতি অন্যমনস্ক হয়ে বলল, ‘ঠিক আছে।’

সায়েম ঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে এলো। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।

(চলবে...)

আরো পড়ুন ১৯তম পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড