• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাণ্ডুলিপির অব্যক্ত কথা

‘নিদাস্তিয়া’ মূলত একটি ত্রয়ী উপন্যাস

  তকিব তৌফিক

১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৩৩
উপন্যাস
প্রচ্ছদ : উপন্যাস ‘নিদাস্তিয়া’

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এ নালন্দা প্রকাশনী থেকে ‘নিদাস্তিয়া’ উপন্যাসের প্রথম খণ্ড প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। বলতে পারেন এটি একটি সূচনাপত্র।

প্রকাশিতব্য এই উপন্যাসের ভেতরের গল্পটি খুব খোলাসাভাবে না বললেও কয়েকটি কথা বলা যায় অনায়াসে। ‘নিদাস্তিয়া’ উপন্যাসটি লেখা হয় একজন মুসলিম শিশুর গির্জায় বেড়ে ওঠার গল্প নিয়ে। তারপর জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে তাকে কি এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় এবং কীভাবে তা হয় মূলত এসবই উপন্যাসের এই অংশে আছে।

‘নিদাস্তিয়া’ উপন্যাসের ভেতরের গল্প এটুকুতেই থাক। সেটা তো বইয়ের পাতায় লিপিবদ্ধ হলো। পাঠকের জানার আগ্রহ থেকে তারা অবশ্যই বইটি সংগ্রহ করবে, এই ব্যাপারে আমি আশাবাদী।

বলা যাক নিদাস্তিয়া উপন্যাসটি লিখতে বাইরের যে গল্প তার কিছু অংশ। নিদাস্তিয়া গল্পের প্রয়োজনে আমি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কিছু কথা তুলে এনেছি। বলেছি সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতির নানান কথা।

এসব ব্যাপারে যখন আমি ভাবছিলাম তখন সেখানকার শরণার্থীদের সাথে আমি নানান প্রশ্ন করতাম। কারণ আমি জানি সেখানে একেকটি পরিবার মানে বেশ কয়েকটি গল্প। সেই গল্পগুলো থেকে সেরাটা খুঁজতে চেয়েছিলাম। আমার নিজের দূরদর্শিতা কিংবা কৌশল অবলম্বনের উপযুক্ত পন্থা অনুসরণের লক্ষ্যে ঘাটতি ছিল বলে হয়তো আশানুরূপ গল্পটি পাইনি।

কিন্তু আমি ‘নিদাস্তিয়া’ উপন্যাসের গল্পের প্রয়োজনের বাইরে দারুণ একটি চরিত্র পেয়েছিলাম সেই সময়। রোহিঙ্গা কবি। আমি তো উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ি। বিশদ আলোচনা করি এবং সেই কবির কাছ থেকে তার গল্প শুনি। উপলব্ধি করি। তারপর দুইদিন ধরে ভাবি কী করা যায় এ নিয়ে!

ভাবনার জোর খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারল না। উপন্যাস পর্যন্ত পৌঁছতে পারল না। তবে আমাকে একটি দারুণ কবিতা রচনা করতে সহায়তা করেছে। কবিতাটির নাম রেখেছি, ‘শরনার্থী শিবির থেকে বলছি...।’

আমি শরণার্থী শিবির থেকে বলছি

এখন আমি শরণার্থী আমার পরিচয় বাস্তুহারা খাদ্যের সন্ধানে ক্রদনরত আমি আমার পুত্র; ক্ষুধার অসহনীয় জ্বালায় ক্রন্দনরত- আমার পুত্রের কন্যা ও পুত্র সন্তান একবার ভাবা যায়! এখন আমাদের কি অবস্থান?

আমি বলছি, আমি শরণার্থী শিবির থেকে বলছি- বিভীষিকা ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞের যে দৃশ্য আমি দেখেছিলাম আজ আমি চোখ বুজলেই যেনো সেইদিনগুলো দেখছি। মায়ের সম্মুখে সন্তানকে জবাই করা হয়েছে বন্ধী পিতার সম্মুখে নবজাতকের গলায় বুটের চাপ পরেছে নববধূর গর্ভে বীজ বুনে গেলো জারজের ভ্রূণ জোয়ান মেয়ের কুমারীত্ব লুট হয়ে গেছে অনায়াসে!

আমি নির্যাতিত এক বুড়ো; এক বুক বার্ধক্যতা নিয়ে বলছি, আমি ষাটের দশকে এন্ট্রান্স পাস দিয়েছি যা নিজে শিখেছি জোয়ানদলকে তা বিলিয়েছি পেরেছি যতো হয়েছিল জোয়ানের সঠিক উত্থান উত্থাপিত জোয়ানদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম- হয়তো পুরনো সভ্যতা হবে পতিত।

অথচ, পতনের ফাঁদে আমার দল! আমি বুড়ো বেঁচে থেকে রোজ মরি হায় জয়পদ্য কি লেখবে তবে- পিচাশ সামরিকের দল?

আমার পাড়ার ছেলেরা কতই না কোমল ছিল ছিল তারা নির্মলে নির্মিত, আমি অধম কাব্য রচনার পর পেয়েছি খ্যাতি, হয়েছি সম্মানিত; আজ ম্লান হয়ে গেছে সব গ্লানি হয়েছে চিরস্থায়ী ওরা মেরেছে আমাদের, তাড়িয়ে দিয়েছে এসেছি ঘর ছাড়ি গোলার হুতাশনে জ্বলেছে দাউদাউ করে- ভাঙাচোরা হোক তবুও যে প্রিয় বসতবাড়ি!

সেইদিনের সেই ভয়াবহ বীভৎস দৃশ্য আজ দেহ অন্দরমহলের স্মৃতি হলো কেনো! তোলপাড় করা প্রাণগুলো পালিয়ে বাঁচাবার আর্তচিৎকার আজ এমনো দিবসে; চিন্তা করা-ই যায় না যেনো।

বিশ্বাস করতেই হবে মানুষ তোমাদের যা ঘটে তা লুকানোর অবকাশ নেই- ঘটে যা যা তা রটে, তা রটিবেই নিঃশব্দে তুমি নিঃস্ব হয়ে গেছো আজ ব্যথাতুর হলেও সত্য যা, তা তুমি মানব মানিবেই।

এই একবিংশ শতাব্দীর লাঞ্ছিত কবি আমি আমার গড়া কাব্যকথা আজ, অতিমাত্রায় অবহেলিত জানি! ক’জনের কাছেই-বা পৌঁছে এই কাব্য? ক’জনারেই-বা আর দুঃখের লিপি বুঝাতে সক্ষম হবো?

আমার পরিচয়ে আজ আর আলাদা কিছু নেই আমি ঘোষিত কবি নই নই শব্দের ফেরিওয়ালা, নিবন্ধিত শরণার্থী আজ আমি শরণার্থী হয়ে শরণার্থী শিবিরেই অন্দরে বিষাদ, বিদ্বেষ আর ভূমিচ্যুত হবার জ্বালা।

অতঃপর আমি নিজ ভূমিতে নির্যাতিত বুড়ো এসেছি পরের ভূমিতে ক্লান্ত হয়ে অপেক্ষায় আছি জীবন অন্তিমের আশায়, আমি শরণার্থী আমার শ্বাসপ্রশ্বাস এখনো চলছে নিরলস খেটে মরা মানবগোষ্ঠীর ভালোবাসায়।

প্রিয় পাঠকদের প্রতি অশেষ ভালোবাসা প্রকাশ করছি। বইমেলায় আসুন, ভালো বই দেখুন এবং বই পড়ুন।

আরও পড়ুন- একদিন চন্দ্রার বনে থেকে ‘জোছনা রাতে জাগে আমার প্রাণ’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড