• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাণ্ডুলিপির অব্যক্ত কথা

একদিন চন্দ্রার বনে থেকে ‘জোছনা রাতে জাগে আমার প্রাণ’

  আবুল কালাম আজাদ

১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১১:১৭
গল্প
প্রচ্ছদ : উপন্যাস ‘জোছনা রাতে জাগে আমার প্রাণ’

২০১২ সাল। এক ছুটির দিন। দুপুরে খাওয়ার পর শুয়ে আছি। তখন একটা ফোন এলো। ফোন করেছে অন্তর। তখন অন্তর আমার ছাত্র। এইচ.এস.সি পরীক্ষা দেবে ধানমন্ডি নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজ থেকে। আমি ওকে বাসায় গিয়ে ইংরেজি পড়াই। টিউশনিটা আমার ছাত্র জীবনের পেশা। ছাত্র জীবন শেষ করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেবার পরও পার্টটাইম জব হিসাবে এটা রয়েই গেছে। অফিস আওয়ারের পরে, এবং ছুটির দিনে কিছু ছেলেমেয়েকে আমি ইংরেজি পড়াতাম, এখনও পড়াই। এতে যেমন বাড়তি একটা আনন্দ পাই, তেমন আসে ভালো অংকের বাড়তি আয়।

তো অন্তর ফোন করে বলল: স্যার, আজ পড়াতে আসার দরকার নাই। আজ আমি বাসায় থাকবো না। অন্তরের ফোনের পর শুয়ে থাকার ঝোঁকটা চলে গেল। আমি উঠে লেখার টেবিলের সামনে গিয়ে বসলাম। লেখার খাতা টেনে নিয়ে সাদা একটা পাতায় লিখলাম, ‘একদিন চন্দ্রার বনে।’

কোনো লেখা মাথায় ছিল না। না গল্প, না উপন্যাস। কিন্তু ছোট্ট একটা লাইন লিখে ফেললাম। এরপর কী লিখবো তা জানি না। কিছুক্ষণ বসে এটা-ওটা পড়লাম। বিশেষভাবে মনে আছে, একটা সাহিত্য সাময়িকীতে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘ওল্ডম্যান এন্ড দ্য সী’ উপন্যাসের ওপর একটা আলোচনা পড়লাম। জোছনারাত নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বিশেষ স্মৃতি পড়লাম।

তারপর আবার লেখার খাতাটা টেনে নিয়ে পূর্বের লাইনটার নিচে একটা প্যারা দিয়ে লিখলাম। এমন সময় দরজা ঠেলে বাবা ঘরে এলেন। এসেই তার চোখ পড়ল খাতাটায়। তিনি খাতাটা হাতে তুলে নিয়ে বললেন, ‘একদিন চন্দ্রার বনে.......! একদিন চন্দ্রার বনে কী? সেখানে কি ফ্লাইং সসার নেমেছিল? কোনো ভিন গ্রহের প্রাণী এসেছিল? তুই কি গল্প-টল্প লিখছিস? তুই যে গল্প-টল্প লিখিস এমন কথা তো কখনো বলিসনি। বিখ্যাত কোনো লেখক হয়ে গেলে তো তুই নিজেও ফাঁসবি, আমাকেও ফাঁসাবি।’

অন্তর ঝট করে বাবার মুখে তাকালো। বাবা কেমন অদ্ভূত কথা বলেন! বড় লেখক হওয়ার সাথে ফেঁসে যাওয়ার কী সম্পর্ক? আর বাবাই বা ফাঁসবেন কেন?

এগিয়ে চলল আমার লেখাটা। প্রধান চরিত্রের নাম হিসাবে আমার সেই ছাত্রের নাম ‘অন্তর’ই এসে গেল। মাস তিনেক একটানা লিখলাম। প্রতি রাতেই। কোনো রাতে লেখা মিস হয়েছে কি না জানি না। লিখতে লিখতে হয়ে গেল ঢাঁউস সাইজের এক উপন্যাস। যার নাম হয়ে গেল-জোছনা রাতে জাগে আমার প্রাণ। আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি, সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে একটা লাইন লেখা থেকে কেমন করে ২০০ পৃষ্ঠার এক উপন্যাস হয়ে যেতে পারে!

উপন্যাসটা প্রথমে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকে সাহিত্য ব্লগ ধানশালিক-এ। বেশ যত্ন নিয়ে তারা প্রকাশ করছিলেন। অকস্মাৎ তাদের প্রধান প্রগ্রামারের অকাল মৃত্যু ঘটলে ব্লগটার প্রকাশ অনিয়মিত হয়ে যায়। অনেক লেখা হারিয়ে যায়। ফলে বেশ কয়েক সংখ্যা প্রকাশের পর উপন্যাসটা আর সেখানে প্রকাশ হয়নি। এরপর উপন্যাসটা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকে মাসিক শিশু-কিশার প্রিন্ট পত্রিকা ‘কিশোর কন্ঠ’তে। এখনও সেখানে এটার নিয়মিত প্রকাশ চলছে।

প্রথম থেকেই বেশ কয়েকটা প্রকাশনা উপন্যাসটা প্রকাশের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। এর মধ্যে ‘বাবুই’ও ছিল। বাবুই-থেকে এর আগের দু’বছরে আমার দুইটি উপন্যাস প্রকাশ হয়েছে। তাই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য আমি পাণ্ডুলিপিটা বাবুইকেই দেই। উপন্যাসটা ২০২০-এর বাংলা একাডেমির বইমেলায় বাবুই প্রকাশনা থেকে প্রকাশ হচ্ছে।

আমার বিশ্বাস, ‘জোছনা রাতে জাগে আমার প্রাণ’ উপন্যাস পাঠ থেকে পাঠকগণ সহিত্যের ভিন্ন এক স্বাদ আস্বাদ করতে পারবেন। আরেকটা কথা বলা দরকার-প্রথমে কিন্তু ‘জোছনা’ ছিল না। ধানশালিক সাহিত্য ব্লগে যখন প্রকাশ হয় তখন ছিল ‘জ্যোৎস্না’। কিশোর কন্ঠে প্রকাশের সময় তারা করেন, জোসনা। আর প্রকাশনার সম্পাদকের হাতে গিয়ে হয়, জোছনা।

শেষ করতে চাই আমার সেই ছাত্র অন্তরকে দিয়ে, যে ভর দুপুরে ফোন করে আমার ঘুমের ঝোঁক ছুটিয়ে না দিলে লেখা হত না এমন একটা উপন্যাস। অন্তর আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে এখন কানাডায় উচ্চতর গবেষণা করছে। কয়েকদিন আগে আমাকে নক করেছিল। বলল-স্যার, বিয়ে করবো। মেয়ে দেখেন। আপনি যে মেয়ে দিবেন সেই মেয়েকেই বিয়ে করবো। মেয়ে ঠিক করে আমাকে জানাবেন, আমি চলে আসবো।

আরও পড়ুন- মর্মন্তুদ জীবন-বেদনার গল্প ঘানি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড