নিশীতা মিতু
রঙিন এক শৈশব কাটানো তরুণী তুরিন আফরোজ ইভা। বর্তমানে হাতে তৈরি গয়না আর নারীদের পোশাক নিয়ে কাজ করছেন তিনি। গয়না ও পোশাকের অনলাইন প্রতিষ্ঠান ‘পঞ্চমা’র কর্ণধার তিনি। উদ্যোক্তা এই নারীর সঙ্গে আড্ডা হয় দৈনিক অধিকারের।
শুরুতে ছোটবেলার কথা শুনতে চাই। ইভার জন্ম ঢাকার মিরপুরে। এখানে বেড়ে ওঠা। ঘরের ছোট সন্তান হওয়ায় আনন্দে-আহ্লাদে কাটিয়েছেন ছোটবেলা। ইভা বলেন, আমি পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে পছন্দ করতাম, তাই বাইরের খেলাধুলার চেয়ে ঘরের ভেতরের খেলাধুলা বেশি পছন্দ ছিল। দাবা আর লুডু ছিল অন্যতম প্রিয় খেলা। নাক বা কান ফোঁড়ানো না থাকলেও সাজগোজ করতে খুব ভালবাসতাম আমি। বাড়ির পাশের একটা গাছ হতো যাতে পুতির মতো বীজ হতো। সেগুলো তুলে সুতার সাহায্যে মালা, দুল, চুড়ি বানাতাম। মানে এসব মালা গাঁথা বা বানানোর শখ আমার ছেলেবেলা থেকেই।
পড়াশোনায়ও ভালো ছাত্রী ছিলেন ইভা। মনিপুর স্কুলের ক্লাস থ্রির ভর্তি পরীক্ষায় নিজের যোগ্যতায় মেধা তালিকায় চান্স পান। সেখান থেকেই শেষ করেন এসএসসি। এরপর কোডা থেকে এইচএসসি এবং বিইউবিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অনার্স শেষ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেন এমবিএ।
বর্তমানে কেবল ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ইভা। কীভাবে অনলাইন ব্যবসায় আসলেন, জানতে চাই তার কাছে। ইভা বলেন, গয়না তৈরির কাজটা আমার ভালো লাগা। নিজের জন্য গয়না তৈরি করতাম। একসময় মাথায় এলো শখটাকে পেশা হিসেবে নিব। হাতে যখনই টাকা জমতো, তখনই গয়নার ম্যাটেরিয়াল কিনে রাখতাম। ভেবেছিলাম একটা দোকান দিব কিন্তু ব্যয়বহুল বলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকেই উপযুক্ত মনে হলো। এভাবে অনলাইন ব্যবসা জগতে পা রাখা।
২০১৭ সালের জুনে যাত্রা শুরু করে পঞ্চমা। প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে মেয়েদের নেকলেস, কানের দুল, হিজাব পিন, টিকলি, খোঁপার কাঁটা, চুড়ি,আংটি, ব্রেসলেট, পায়েল। শিশুদের জন্য আছে ছোট ক্লিপ, হেয়ার ব্যান্ড, ব্রেসলেট। ছেলেদের জন্য আছে ব্রেসলেট, চাবির রিং। এসবের পাশাপাশি আছে শাড়ি, আনস্টিচ ড্রেস, হিজাব, বোরখা, হ্যান্ড সক্স, ওড়না, প্লাজো, প্যান্ট, স্কার্ট, পাঞ্জাবি, শাল, ব্যাগ, রেডিমেড জুয়েলারি, মাস্ক সবকিছুই। অর্থাৎ, একজন নারীর পরিধানের জন্য যত পোশাক বা গয়না প্রয়োজন সবই আছে এখানে।
পঞ্চমার কিছু পণ্য
অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় করোনার কারণে খুব বেশি সমস্যা পড়তে হয়নি ইভাকে। লকডাউনের কারণে যদিও গয়না কেনার চাহিদা কমে গিয়েছিল, শাড়ি, পোশাক, মাস্কের মাধ্যমে তা পুষিয়ে নিয়েছেন।
পঞ্চমাকে একপ্রকার পারিবারিক প্রতিষ্ঠানই বলা চলে। শুরুর দিকে পরিবারের সবার উৎসাহ আর সাহায্যতেই ব্যবসাক্ষেত্রে টিকে রয়েছেন ইভা। বললেন, আমি ছাড়াও আমার বড় আপুর তৈরিকৃত গয়নাও পঞ্চমাতে শোভা বর্ধন করে। পরিবারের ভাই-বোনদের উৎসাহের ফলেই আজও আমি টিকে থাকার চেষ্টা করি এই অনলাইনের প্রতিযোগিতায়। বড় ভাইয়ের খাটাখাটুনিতে মেলাগুলোর প্রস্তুতি নিতে পারতাম সহজেই। বুদ্ধি পরামর্শ পাই মেঝ আপু আর স্বামীর কাছ থেকে। শুরুর দিকের সুন্দর ছবিগুলো সেঝ আপু তুলে দিত, ছোট ভাইয়ের তৈরি করা বক্স ছিল পণ্য ডেলিভারির অন্যতম আকর্ষণ। সবার কাছে আমি ঋণী। যদিও বিয়ের পর পণ্যের ছবি তোলা, বক্স বানানো এখন আমাকেই করতে হয়।
ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে গড়ছেন ইভা। স্বপ্ন দেখেন অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও পঞ্চমার পরিচয় থাকবে। একটি ব্র্যান্ড হিসেবে গড়তে চান নিজের প্রতিষ্ঠানকে। ইভা বলেন, এমন নয় যে আমি অভাবের তাড়নায় ব্যবসা করি, আমি আসলে আমার সময়গুলোকে সুন্দর করতে চাই।
পঞ্চমাকে অফলাইনে মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বেশ কিছু মেলায় অংশ নিয়েছেন ইভা। ব্যবসা সম্পর্কে শিখতে, বিস্তারিত জানতে ট্রেইনিংয়েও অংশ নিয়েছেন; কুড়িয়েছেন সার্টিফিকেট।
ইভা বলেন, এখনও ব্যবসায় নতুন হিসেবে অনেক কিছুই শেখার বাকি আছে আমার। শুরুটা ২০১৭তে করলেও বিশাল একটা গ্যাপ পড়ে পারিবারিক বেশ কিছু কারণে। তবে এই অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকা, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, কুমিল্লা, খুলনা এমনকি দেশের বাইরের কয়েকটি দেশে পঞ্চমার পণ্য কাস্টমারের হাতে পৌঁছায় এবং তাদের দেওয়া রিভিউগুলো সামনে চলার প্রেরণা জোগায়। এভাবে ক্রেতার ভালোবাসায় এগিয়ে যেতে চাই সামনের পথগুলো।
ওডি/নিমি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড