• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

উইঘুরদের জোরপূর্বক মুসলিম বানানো হয়েছে, দাবি চীনের

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৩ জুলাই ২০১৯, ১৪:৪৯
উইঘুরের মুসলিম
উইঘুরের মুসলিম জনগোষ্ঠী। (ছবিসূত্র : এনবিসি নিউজ)

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত উইঘুর জাতিগোষ্ঠীর প্রতি নৃশংস আচরণের পক্ষে সাফাই স্বরূপ শতাব্দীর প্রাচীন ইতিহাসের দোহাই হাজির করছে বেইজিং। সম্প্রতি প্রদেশটির ২০ লাখ উইঘুর মুসলিম নিপীড়নের শিকার হয়েছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

মূলত প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই চীন দাবি করেছে, প্রথমে অঞ্চলটির কেউই ইচ্ছা করে ইসলাম গ্রহণ করেনি, বরং দশম শতকের দিকে যুদ্ধ শেষে ধর্মটি তাদের ওপর এক রকম চাপিয়ে দেওয়া হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, জিনজিয়াং প্রদেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশই উইঘুর মুসলিম। প্রদেশটি তিব্বতের মত স্বশাসিত একটি অঞ্চল। যে কারণে সকল বিদেশি মিডিয়ার ওপর এখানে প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে।

যদিও বেশ কিছু বছর যাবত বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে যে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক হারে আটক ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। দেশটিতে হান চাইনিজরা হচ্ছে সংখ্যাগুরু; আর তাদের তুলনায় মুসলিম উইঘুরদের সংখ্যা অতি নগণ্য।

গত রবিবার (২১ জুলাই) দেশটির রাষ্ট্রীয় তথ্য পরিষদ দপ্তর থেকে ৬ হাজার ৮০০ শব্দের একটি নথি প্রকাশ করা হয়। যেখানে দাবি করা হয়, জিনজিয়াংয়ে সকল ধর্মের লোকরাই শত শত বছর যাবত সহাবস্থানে বসবাস করছেন। যে কারণে প্রদেশটির সরকার তাদের নাগরিকদের কোনো ধর্মে বিশ্বাস করা কিংবা না করার প্রতি সম্মান জানায়।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, 'দশম শতকে ভয়াবহ যুদ্ধের মাধ্যমে অঞ্চলটিতে মুসলিমরা প্রবেশ করেছিল। যদিও এতে শত শত বছর যাবত বজায় থাকা বৌদ্ধ ধর্মের আধিপত্য ক্ষুণ্ণ হয়। তখন উইঘুররা নিজেদের ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেনি। তারা বরং ধর্মীয় যুদ্ধ ও শাসকদের চাপে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে অঞ্চলটির ইতিহাস বিদেশি শক্তি, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী বাহিনীর দ্বারা বিকৃত হয়েছে।'

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা 'সিআইএ'য়ের ফ্যাক্টবুকের তথ্য মতে, চীনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৮ শতাংশ বৌদ্ধ, পাঁচ শতাংশ খ্রিস্টান ও দুই শতাংশ মুসলিম। তবে দেশটির সরকারি নথিতে দাবি করা হয়, 'উইঘুর মুসলিমরা মূলত তুর্কিস্তান থেকে এসেছে এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কেননা জিনজিয়াং যুগ যুগ ধরেই এই চীনা ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা কখনোই তথাকথিত পূর্ব তুর্কিস্তানের অংশ ছিল না।’

এ দিকে জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে চীন তাদের প্রতিবেদনে দাবি করে, 'জিনজিয়াংয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার ৮০০টি স্থানে ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। অঞ্চলটিতে প্রায় ২৪ হাজার ৪০০টি মসজিদ রয়েছে আর ৪০০টির মতো মন্দির ও গির্জা আছে।'

যদিও ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি প্রদেশটিতে বসবাসরত উইঘুরদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চর্চার ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাছাড়া সংখ্যালঘুদের ওপর চীনা প্রশাসনের বিভিন্ন অভিযানকে 'সাংস্কৃতিক নিশ্চিহ্ন করণ' বলে অবহিত করছেন সেখানকার আটক কেন্দ্রের সাবেক বন্দিরা।

এর আগে ২০১৭ সালে প্রদেশটিতে বড় দাড়ি রাখা এবং পর্দা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছিল প্রশাসন। তাছাড়া 'অদ্ভুত উপায়ে' শিশুদের নাম রাখাও ছিল নিষেধ। পরে চলতি বছর ব্রিটিশ গণমাধ্যম 'দ্য গার্ডিয়ানে' প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিনজিয়াংয়ে অনেক মসজিদ জোরপূর্বক গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

অপর দিকে প্রদেশটির এই আটক কেন্দ্রগুলোকে এরই মধ্যে 'উন্মুক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র' বলে দাবি করেছে বেইজিং। তাদের দাবি, প্রধানত ইসলামি উগ্রবাদ রুখতে এই কেন্দ্রগুলো ভীষণ জরুরি। গত রবিবারের প্রকাশিত শ্বেতপত্রে কর্তৃপক্ষ দাবি করে, জিনজিয়াংয়ে এমন ঘটনার অনেক আগেও বিশ্বে এমন সব ঘটনা ঘটেছিল। তখন স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে এই প্রবণতা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে; যা এখনো বিদ্যমান।

আরও পড়ুন :- প্রিয়ার অভিযোগ কতটা আমলে নেবেন ট্রাম্প?

বেইজিংয়ের দাবি, সাধারণত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই এবং অঞ্চলটির বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সম্পূর্ণ আইন মেনে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ বিরোধী এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে। এই পদক্ষেপের যেকোনো ধরনের সমালোচনা আসলে 'দ্বিমুখী' আচরণ বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড