• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুসলিম গণহত্যায় ভারতের বর্বর ইতিহাস

প্রিয়া সাহা জানেন কি ভারতের 'সংখ্যালঘু গণহত্যার' ইতিহাস?

বিজেপি মুসলিম সাংসদহীন, শেখ হাসিনার মন্ত্রণালয়ে একাধিক হিন্দু মন্ত্রী

  এম এম সোহাগ

২০ জুলাই ২০১৯, ১৯:৫৭
ভারতের সাম্প্রদায়িক চিত্র
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন একটা ব্যাধি, বাংলাদেশ ও যাতে আক্রান্ত, তবে প্রিয়া সাহার আচরণ সেই সামান্য ব্যাধিকে না মারাত্মক করে তোলে। ছবি : সংগৃহীত

পহেলা এপ্রিল ২০১৭, উজ্জ্বল কালো চুল আর দাড়িগোঁফে আচ্ছন্ন ইরশাদ খান, ছাব্বিশ বছরের এই তরুণ ছেলেটি তার সদ্য আঠারো বছরে পা দেয়া ছোট ভাই আরিফ আর বাবার কাজে সাহায্য করছিল। দুটো গরুকে মাহিন্দ্র পিকআপ ভ্যানে উঠাচ্ছিলো তারা। বাড়ি জয়সিংহপুরের উদ্দেশ্যে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে যাত্রা শুরু করে। জয়পুর থেকে তাদের গ্রাম ঘণ্টা চারেকের পথ। এভাবেই দা নিউ ইয়র্কারে লেখক এলিজা গ্রিসোল্ড তার 'ভারতে হিন্দু জাতীয়বাদী সহিংসতার মাত্রা' নামের নিবন্ধ লেখা শুরু করেন।

জয়সিংহপুরে মূলত মুসলমান ও নিম্ন বর্ণের দলিত হিন্দুদের বসবাস। এই দুই শ্রেণির মানুষ সেখানে পাশাপাশি থাকে, দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ ফুলের ক্ষেত, কৃষকরা সরিষা আবাদ করেন। ওটাই তাদের মূল পেশা। গ্রামটিতে ছয়শত মানুষের বাস। প্রায় তিন কোটি জনসংখ্যার মহানগর দিল্লির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফলেই জয়সিংহপুর গ্রামটিরও উন্নতি হয়েছে ব্যাপক। রকেটের গতিতে দাম বেড়েছে দিল্লির জমির। খানের পরিবারসহ গ্রামটির মুসলমান পরিবারগুলোরর আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। অনেকে আবার দিল্লি ও এর আশেপাশে বালু ও সবজির বাণিজ্য করে এখন যথেষ্ট সচ্ছল।

বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলমান এক ক্ষোভের নাম 'প্রিয়া সাহা'। যিনি সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত 'লোমহর্ষক' নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, ন্যায়বিচার এবং বাংলাদেশে নিরাপদে থাকতে ট্রাম্পের সাহায্য চান। দেশের নামে এমন অভিযোগ করে রাতারাতি 'কুখ্যাত' হয়ে যান প্রিয়া সাহা। বাংলাদেশের অবশিষ্ট প্রায় ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা দাবি করা হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘু প্রিয়া সাহা জানেন কি ভারতের অবস্থা? সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান ভারতের প্রায় শতাংশ মুসলিম। সেখানে সংখ্যালঘুদের জীবন সম্পর্কে জানেন না, জানলে বাংলাদেশ নিয়ে এমন অভিযোগ আনতে পারতেন কিনা, জানা নাই। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জীবন নিশ্চই এমন নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইতিহাসে এমন কোন দৃষ্টান্ত পাবেন না। যা আছে তা প্রিয়া সাহাদের জন্যে যেন না বাড়ে, ভারতের মতো যেন কখনওই না হয়।

সেদিন বিকালে ইরশাদ তার বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে ঐ পিকআপে ওঠে যাত্রা শুরু করে তাদের গ্রামের উদ্দেশ্যে। তারা গরুর সওদা করে ফিরছিল তাদের গ্রামে। গরু হিন্দুদের জন্য একটি পবিত্র প্রাণী। তবে, ইরশাদ ছোটবেলা থেকেই গরু ক্রয়-বিক্রয়ের কাজে এমন বহু সফর করেছেন। সে নানা কথাও শুনেছে। পথের বিভিন্ন জায়গায় উগ্র হিন্দুগোষ্ঠী গরু বিক্রির কাজে যাওয়া মুসলমানদের ভয় দেখায়। যারা এই কাজটি করে তারা মূলত সশস্ত্র হিন্দু যুবকদের সংগঠনের কর্মী। সংগঠনের নাম বজরঙ্গ দল। তাদের মূল কাজ গরু রক্ষার স্বার্থে মুসলমান ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করা। এতকিছুর পরও ইরশাদকে ভীত মনে হয়নি। সে বলে 'আমাদের ভেতর ভয়ের ছিটে ফোটাও নেই। আমরা সরকার আয়োজিত মেলা থেকে সওদা করে ফিরছি এবং সেখানে গরু বেচা-কেনা সম্পুর্ণ বৈধ।'

ছবি : সংগৃহীত

ঐ দলটি যে রকম সহিংস হিন্দু জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে তা মোটেও নতুন নয়। ১৯৪৮'র ৩০শে জানুয়ারি নাথুরাম গডসে নামের একজন ব্যক্তি হত্যা করে গান্ধীকে। নাথুরাম ছিল আরএসএস’র সদস্য। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) একটি উগ্র ডানপন্থী সংগঠন, যার মূল কাজ হিন্দুত্ববাদের ঠাকুরালী বা প্রভুত্ব প্রচার। বজরঙ্গ দলের সদস্যরা ঐ আন্দোলনের তৃণমূল সৈনিক যাদের কাজই সন্ত্রাসের মাধ্যমে মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর ত্রাস সৃষ্টি করা।

মূলত কোন সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণ করে দাঙ্গা সৃষ্টি করাটা তাদের কাজ। বজরঙ্গ দল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। ষোড়শ শতাব্দীতে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নামে একটি মসজিদ তৈরি করে তৎকালীন মোঘল সম্রাট বাবর। মসজিদটি ধ্বংস করার আন্দোলন হিসেবে সংগঠিত হয়েছিল বজরঙ্গ দল। ১৯৯২ সালে আরএসএস সংগঠিত একটি দাঙ্গা মিছিলের মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয় বাবরি মসজিদ।

শুরু থেকে এই পর্যন্ত সংগঠনটির আড়াই হাজারেরও বেশি উপদল তৈরি হয়েছে ভারতজুড়ে। ২০০৫ সালে এমন একটি উপদল সম্পর্কে প্রথম জানেন এলিজা। নাম 'আকাদাস; মুম্বাইয়ে অবস্থিত এশিয়ার সবচেয়ে বড় বস্তিতে তারা হিন্দু যুবকদের সংগঠিত করে এবং গো-রক্ষার নামে সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক পল রিচার্ড ব্রাস বজরঙ্গ দলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন 'জঘন্য একটি সংগঠন যা কিনা জার্মানের নাৎসি বাহিনীর মারাত্মক একটি সংস্করণ।'

ভারতের সহিংসতার চিত্র আরও দীর্ঘ, স্বাধীন ভারতে এ পর্যন্ত সংখ্যালঘুরা অসংখ্যবার নির্যাতিত হয়েছেন, মোদী সরকারের আমলে যা ফের বাড়তে শুরু করে। মাত্র ২ মাসেই হিন্দুদের দ্বারা একাধিক মুসলিমকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, কখনও 'জয় শ্রীরাম' বা কখনও গরু কাণ্ডে মুসলিমদের ধরে ধরে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মারা হচ্ছে। হিন্দু অধ্যুষিত দেশটিতে, যেখানকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের, সেখানে সাম্প্রদায়িকতার চিত্র এমন।

ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক চিত্র অনেক উন্নত, তবে একদম অসাম্প্রদায়িক বলাটা সঠিক নয়। এখনও এখানে হিন্দু বিদ্বেষী মনস্তত্ব, সংখ্যাগরিষ্ঠদের শোষনমূলক মনোভাবকে অস্বীকার করা যাবে না, তবে তা কোনভাবেই প্রিয়া সাহার অভিযোগের সমতুল্য না।

শুক্রবার (১৯ জুলাই) হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বিশ্বের ১৭টি দেশের সংখ্যালঘুদের ২৭ জন ধর্মীয় প্রতিনিধি ট্রাম্পের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। সেই আলোচনার মধ্যে প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের মৌলবাদ সম্পর্কে 'চাঞ্চল্যকর' এক অভিযোগ করে বসেন। প্রায় ৩৭ মিলিয়ন সংখ্যালঘু বাংলাদেশে নির্যাতিত হয়েছে, বর্তমানে অবশিষ্ট থাকা আরও ১৮ মিলিয়নের জমিজমা দখল, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে ট্রাম্পকে জানান প্রিয়া।

ছবি : ব্লুমবার্গ

ত্রয়েদশ শতকের গোঁড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের শুরু হয়। খিলজির দিল্লি সালতানাত দখলের পরেই ভারতবর্ষের নানাদিকে মুসলিম ছড়িয়ে পড়ে। বৌদ্ধ-হিন্দুদের কাছ থেকে মুসলিমরা উপমহাদেশের শাসন করা শুরু করে, মুসলিম শাসনামলেই বিশ্ব দরবারে ভারতীয় উপমহাদেশের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ উপনিবেশ হবার আগ পর্যন্ত হিন্দু অধ্যুষিত ভারতকে ৪ শতাধিক বছর শাসন করে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়।

বাংলাদেশ, মূলত ব্রিটিশ আমল থেকেই এই অঞ্চলটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক এলাকা। ধর্মভিত্তিক বিভক্তি ছড়ায় ব্রিটিশ শাসনামলেই, পাকিস্তান অধিভুক্ত হবার পরে বঙ্গ অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা মারাত্মক রূপ ধারণ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অঞ্চলটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ভয়াবহ দুর্দশা নেমে আসে। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় লাখ লাখ হিন্দু বাঙালি। সেই হিন্দুদের ওপর বাঙালি চেতনার মুসলিমরা নির্যাতন চালায়নি, পাকিস্তানি চেতনার ও পাকিস্তানি হিন্দু বিদ্বেষী মনোভাবে আক্রান্ত বাঙালিরা বর্বোচিত নির্যাতন চালিয়েছিল।

সেই ঘৃণা অনেক বাঙালি মুসলিমকে হিন্দুবিদ্বেষী করেছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এক ব্যাধির নাম। ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে একধরণের বিষাক্ত ঘৃণার সংস্কৃতি ছড়িয়ে যায় বাঙালি মুসলিমদের ওপর। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে তাই সংখ্যালঘুরা সহিংসতার শিকার হয়। হিন্দু-বৌদ্ধদের উপসনালয়, ঘর জ্বালিয়ে দেয় কিছু উগ্র মুসলিম, যারা সংখ্যায় অতি সামান্য এবং যারা বাঙালির কোন আদর্শ ই ধারণ না করে মৌলবাদী চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।

এদের সংখ্যাটা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার কোন যোগ্যতাই রাখে না। স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার তেমন কোন ইতিহাস নেই, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া। দেশে যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ নেই তা না, এখনও এক শ্রেণির মানুষ সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বিশ্বাসী, ধর্মীয় উগ্রতায় আপ্লুত, হিন্দুবিদ্বেষসহ বর্ণবাদী। বিশ্বে বর্ণবাদ এক মারাত্মক ব্যাধি, বাংলাদেশ ও সেখানে ব্যতিক্রম না। প্রিয়া যে ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার যে অভিযোগ আনলেন, সেই ট্রাম্প ও তো মারাত্মক এক বর্ণবাদী ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক চিত্র সেসবের থেকে অনেক উন্নত।

মোদীর ভারত

আরএসএস, শিবসেনার পৃষ্ঠপোষক বিজেপি সরকারের ভারত যে মুসলিমদের জন্য বেশি কঠিন এক স্থান হতে যাচ্ছে তা বিশ্ব গণমাধ্যম বারবার করে বলে এসেছে। ব্রিটিশ ভিত্তিক সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর স্টাডি অফ সোসাইটি ও সেকুলারিজমের মুম্বাই অফিসের বরাতে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, ২০১৮ সালে মোদীর শাসনামলে ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ৮৬ জন নিহত ও প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আহত হয়। বাস্তব সংখ্যাটা আরও অনেক অনেক বেশি।

মোদীর আমলে ভারতে মুসলিমবিদ্বেষের মাত্রা বেড়েছে। মুসলিমদের ধরে ধরে মেরে ফেলার হারও বেড়েছে বলে জানায় চীনের এই বিখ্যাত গণমাধ্যম। মাথায় টুপি আর মুখে দাড়ি দেখলে উগ্র হিন্দুরা তেড়ে আসে, অনেককে আবার পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উগ্র হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসলে রাজ্য ছেড়ে দলে দলে মুসলিমরা সপরিবারে পালিয়ে যাওয়া শুরু করে। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ গো-মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে, আর তার বরাতে সেখানে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন প্রভাবশালী গণমাধ্যম 'ওয়াশিংটন পোস্ট' এক প্রতিবেদনে জানায়, এই ২০০২ সাল থেকেই মোদীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ লেগে যায়। নির্মম গুজরাট দাঙ্গার পর পোস্টের কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদীকে মোটেও মর্মাহত হতে দেখা যায়নি। যার রাজ্যের দুই সহস্রাধিক মুসলিমকে হত্যা করা হলো, সেই মোদীর চেহারায় পরিতাপের কোন চিহ্ন পর্যন্ত ছিল না। গুজরাট কাণ্ডে ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমি কোন ভুল করিনি। আমি মানবাধিকার রক্ষার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ'। মোদী তখন কোন মানবাধিকারের কথা বলেছেন তা সেই সাংবাদিক বা কোন বিবেচকের মাথায় ঢুকেনি।

'ভারত মুসলিমদের রাষ্ট্র নয়' শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সাংবাদিক হার্ষ মান্দের গো-রক্ষা সহিংসতার শিকারদের ব্যাপারে তদন্ত করেন। ৮টি রাজ্যের ৫৫টি মুসলিম পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই ৫৫টি পরিবারের প্রায় প্রতিটাই ঘৃণা হত্যাকাণ্ডের শিকার। হিন্দুদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পরিবারগুলো কোন বিচার পায়নি, যারা তাদের স্বজনদের হারালো দেশটির সরকার তাদের বিরুদ্ধেই মামলা ঠুকে দিয়েছে। এমনকি, পুলিশের হাতেই ঘৃণার বলি হয়েছে অনেক মুসলিম। তাদের অভিযোগ, উগ্র হিন্দুদের হামলার ঘটনা অনেকে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাতে তাদের কোন উপকার হচ্ছে না। এসব ভিডিও এখন ভারতীয়দের বিনোদনের অংশ হয়ে উঠেছে। ভারত মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ হচ্ছে বলে তাদের দাবি।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা চরমে পৌঁছেছে বলে উদ্বেগ জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠিও লিখেছেন ভারতের কয়েক ডজন সাবেক আমলা। পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক মোহাম্মাদ আফরাজুলকে রাজস্থানে পুড়িয়ে মেরে ফেলা, গোরক্ষকদের তাণ্ডবে পহেলু খান বা উমের খানদের মৃত্যু, কিংবা হরিয়ানায় কিশোর জুনেইদ খানকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা - এই জাতীয় বহু ঘটনার উল্লেখ করে তারা সরকারের কাছে এর প্রতিকার দাবি করেছেন।

কর্মজীবনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ৬৭জন চিঠিতে সই করেছেন। কিন্তু কেন এই সাবেক আমলারা এমন একটি চিঠি লেখার মতো বিরল পদক্ষেপ নিলেন? নরেন্দ্র মোদি সরকারের উদ্দেশে লেখা এই খোলা চিঠিতে যারা সই করেছেন তারা প্রত্যেকেই ভারতের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ, পুলিশ ও ফরেন সার্ভিসের প্রাক্তন কর্মকর্তা। সাবেক আমলা, কূটনীতিক বা পুলিশ অফিসাররা অবসরের পর একজোট হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন, এমনটা ভারতে খুব একটা দেখা যায় না। 'বিবিসি'

শিক্ষা, চাকরী ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতা

বলিউড ছাড়া ভারতের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে মুসলিমরা অবহেলার শিকার না হয়ে থাকে। ভারতের প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাম্প্রদায়িকতার বিষ রয়েছে। এর থেকে শিক্ষাক্ষেত্রও রক্ষা পায়নি। যেখানে বাংলাদেশি হিন্দুরা নির্দ্বিধায় দাবি করে তারা বাংলাদেশি মুসলিমদের থেকে বেশী শিক্ষিত মানে তাদের শিক্ষার হার বেশী, সেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতের মুসলিমদের করুন দশা। যদি তাদের সঠিক তথ্য জানানো হত, সচেতন করা হতো তাহলে তাদের এ অবস্থা হতো না। টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতে ভারতের মুসলিমদের শিক্ষার হার মাত্র ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশ যেখানে পুরো ভারতের শিক্ষার হার ৭৪ শতাংশ।

চাকরির ক্ষেত্রে ভারতীয় মুসলিমদের চরম অবহেলার শিকার হতে হয়। চাকরির ক্ষেত্রে মুসলিমরা মাত্র ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ উচ্চপদে রয়েছে। শুধু বেসরকারী নয় সরকারী চাকরির ক্ষেত্রেও মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব কম। সরকারি চাকরিতে তাদের সংখ্যা মাত্র ৭ শতাংশ, যেখানে তারা মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যটা আরও চরম। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি থেকে একজন মুসলিম ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি। ১৫ শতাংশ জনসংখ্যা নিয়েও দীর্ঘকাল ধরে ভারতের সংসদে মাত্র ৪ শতাংশই মুসলিম সদস্য ছিল বলে বিবিসি জানায়। এবার ক্ষমতাসীন দল থেকে একজন মুসলিম সাংসদ না থাকায় সেদেশে মুসলিমদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠার অবস্থা হয়।

এবারের লোকসভায় মাত্র ২৩ জন মুসলিম সাংসদ পেয়েছে ভারত, যাদের অধিকাংশই কংগেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করা। মাত্র ৬ জন মুসলিমকে বিজেপি টিকেট দিয়েছিল, যাদের কেউই পাশ করেনি। তাই মুসলিমহীন সংসদ গঠন করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদী সরকার। পক্ষান্তরে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের মন্ত্রীসভায় একাধিক হিন্দু মন্ত্রী সর্বদাই ছিল, সাংসদদের কথা উল্লেখের প্রয়োজন এখানে নেই।

ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী ফারা নকভি মনে করছেন যে, বিজেপি মুসলিমদের একেবারেই বিশ্বাস করতে পারেনি, সেই দলের ওপর মুসলিমদের পক্ষেও ভরসা রাখা ভীষণ মুশকিল। নকভি বিবিসিকে বলছিলেন, 'মি মোদী তার ভাষণে সংখ্যালঘুদের মিথ্যা ভয় দূর করার কথা বলেছেন সেটা ভাল কথা, স্বাগত।'

ছবি : সংগৃহীত

'কিন্তু যেভাবে তার দল এই নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদ প্রচার করেছে, গত পাঁচ বছরে যেভাবে মুসলিমরা হামলা ও গণপিটুনির শিকার হয়েছে এবং মুসলিমদের টিকিট দেয়ারও যোগ্য মনে করেনি, তারপর তারা কীভাবে এই কথাগুলো বিশ্বাস করবেন? বলছি না যে বিজেপির কয়েকজন মুসলিম এমপি থাকলেই ছবিটা অন্যরকম হত - কিন্তু তাতে হয়তো দেশের সংখ্যালঘু ও দলিতদের সঙ্গে বেশি ন্যায় নিশ্চিত করা যেত, তারা এই মহান গণতন্ত্রের সমান ভাগীদার হতে পারতেন।'

ভারতে মুসলিম গণহত্যার ইতিহাস

ব্রিটিশ উপনিবেশপূর্ব ভারতে হিন্দু-মুসলিম বহু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। শোষন, শাসনের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশে অনেক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। ব্রিটিশ আমলেও এমন অনেক ঘটনায় মানুষের প্রাণ যায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বুলি আওড়িয়ে স্বাধীন ভারতও কম যায়নি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটাতে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাঙ্গার ঘটনা নিচে উল্লেখ করা হলো।

জম্মু-কাশ্মীর ১৯৪৭

১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে স্বাধীন ভারতের নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে মুসলিমদের ওপর চালানো হয় বর্বর গণহত্যা। সেই গণহত্যায় আনুমানিক ২০ হাজার থেকে ১ লাখ মুসলিম নিহত হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর উপত্যকা এখনও রক্তে রঞ্জিত। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে রোজ মানুষ মরছে, ভারতীয় সেনা-পুলিশের অভিযানে প্রতি বছর এখানে সহস্রাধিক মুসলিম প্রাণ হারাচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমন ও উগ্রতা নিয়ন্ত্রণের অযুহাতে অঞ্চলটিতে অত্যন্ত কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে ভারত।

ছবি : সংগৃহীত

১৯৪৮ সালের হায়দরাবাদ গণহত্যা

আরএসএস কর্মীর হাতে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী খুন হন ১৯৪৮ সালে। দেশটির হায়দরাবাদের তৎকালীন নিজাম সরকারের আমলে রাজাকারদের আগমন ঘটে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টির অভিযোগে রাজাকারদের বিরুদ্ধে ওই রাজ্যে সেনা-পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। সেই অভিযানে অন্তত ২৭০০০-৪০০০০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।

১৯৬৯ সালের গুজরাট দাঙ্গা

উগ্রবাদী হিন্দুদের রাজ্য গুজরাট, এই প্রদেশের মুসলিমদের ওপর হিন্দুরা বর্বর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। ১৯৬৯ সালে সেখানে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় সরকারি হিসাব মতে ৬৬০ প্রাণহানি ও সহস্রাধিক আহত হয়েছিল। যার মধ্যে ৪৩০ জন মুসলিম, ২৪ জন হিন্দু এবং বাকিরা অচিহ্নিত বলে ঘোষণা করা হয়েছি। বেসরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা দুই সহস্রাধিক, যার বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। এছাড়াও মুসলিমদের তৎকালীন অর্থে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি রুপির সম্পদ ধংস করে হিন্দুরা।

১৯৭৯ সালে শরণার্থীদের ওপর হামলা

পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের হামলা চালানো হয়, যাতে সরকারি হিসাবে প্রায় সহস্র মানুষের প্রাণহানি হয়। যার বেশিরভাগ মুসলিম। বেসরকারি হিসাব মতে এই সংখ্যায় ৩-৫ হাজারের মতো।

মোরাদাবাদ দাঙ্গা

১৯৮০ সালে ভারতের উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে প্রথম পুলিশ-মুসলিম দাঙ্গা হলেও পরে গিয়ে তা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় পরিণত হয়। যাতে অন্তত আড়াই সহস্রাধিক প্রাণহানি হয়। যার অধিকাংশ মুসলিম।

ছবি : সংগৃহীত

মান্দাই গণহত্যা

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে বাঁচতে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল হিন্দু বাংলাদেশিরা। সেই বাঙ্গালি হিন্দু শরণার্থীদের ও ছাড় দেয়নি ভারতীয় হিন্দুরা। তাদের ওপর হামলা চালিয়ে ২৫৫-৫০০ জনকে হত্যা করা হয়েছিল।

আসামের নেল্লি গণহত্যা

১৯৮৩ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি আসামের বাঙালি মুসলিম শরণার্থীদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে ২ হাজার ১৯১ জনকে হত্যা করা হয়।

১৯৮৯ সালের বাগলপুর দাঙ্গা

বিহারের বাগলপুরে ১৯৮৯ সালে দুটো গুজব ছড়িয়ে যায়। একটিতে মুসলিমরা ২০০ হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে হত্যা করে এবং অন্যটিতে ৩১ হিন্দু ছাত্রকে হত্যা করে সংস্কৃত কলেজে লাশ জ্বালিয়ে ফেলার গুজব। এই দুই গুজব ছড়িয়ে মুসলিমদের ওপর চালানো হয়য় নির্যাতন, শুরু হয় দাঙ্গা। যে সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গায় সহস্রাধিক প্রাণহানি ঘটে, যার মধ্যে ৯০০ মুসলিম, বাকীদের পরিচয় চিহ্নিত করার অবস্থা ছিল না।

ছবি : সংগৃহীত

বোম্বে দাঙ্গা

ডিসেম্বর ১৯৯২ থেকে ১৯৯৩ সালের জানুয়ারির মধ্যে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধংসকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। এই দাঙ্গায় ৫৭৫ মুসলিমসহ ৭০০ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

গুজরাট দাঙ্গা

ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। সালটা ২০০২, ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়ে রাজ্যজুড়ে। মানবাধিকার সংস্থার মতে, সেসময়ে প্রায় ২ সহস্রাধিক মুসলিমকে প্রকাশ্যে হত্যা করে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা। নিখোঁজ রয়ে যায় শত শত মুসলিম। যে লোমহর্ষক ঘটনা এখনও স্পষ্ট, উগ্র হিন্দুদের ভারত প্রতিষ্ঠার এক ঘোষণা ছিল সেই দাঙ্গা।

এসব ব্যাতীত ভারতে আরও অসংখ্য গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে শুধু মুসলিম নয়, শিখসহ অন্য ধর্মের মানুষরা গণহত্যার শিকার হয়েছে। স্বাধীন ভারতের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির তুলনা করার সুযোগ নাই।

স্বাধীন ভারতে সংগঠিত দাঙ্গাগুলতে প্রায় ৮ লক্ষ মুসলিমকে খুন করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে কতজন হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার কারনে মারা গেছে? তারপর ও বাংলাদেশের হিন্দুরা বড় গলা করে চিল্লায় তারা নাকি সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত। স্বাধীন বাংলাদেশিদের হাতে হিন্দুদের ওপর কোন গণহত্যার ইতিহাস নেই। জামায়াত-বিএনপি সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশি হিন্দুরা কিছুটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হলেও চিত্রটা কোনভাবেই ভারতের সমতুল্য না।

তবে, বাংলাদেশে পুরোপুরিভাবে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ তা বলার সুযোগ নাই। উদার বাঙ্গালিদের মধ্যেও মৌলবাদী একদল মুসলিম রয়ে গেছে যারা এখনও সাম্প্রদায়িক ঘৃণা লালন করে বেড়াচ্ছে। হিন্দু-বৌদ্ধদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, জমি দখলের ঘটনাও ঘটছে। এসব অস্বীকার করার সুযোগ নাই, তবে তা প্রিয়া সাহার অভিযোগের মতো নয়। গত এক দশকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি।

ছবি : সংগৃহীত

তবে, এখনও ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ স্পষ্ট। প্রিয়া সাহার অভিযোগের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে হিন্দুবিদ্বেষের চিত্র সামনে চলে আসে। এক প্রিয়ার অভিযোগে সবাই যেন হিন্দুবিদ্বেষী হয়ে পড়েছে। এই ঘৃণা থেকেই সহিংসতার শুরু, যার দায় শুধু প্রিয়ার একার না। আমাদের সহনশক্তির অভাব এজন্য দায়ী।

একজন অস্ট্রেলীয়র আগ্রাসনে ক্রাইস্টচার্চের মতো ঘটনার জন্ম, কী দারুণভাবে নিউজিল্যান্ডের মানুষ সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শ রূপ তুলে ধরেছে। সব ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা খুব জরুরী। একজন প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি না, বিদেশের কাছে দেশকে খাটো করে অবাস্তব অভিযোগ এনে যে ভুল প্রিয়া করেছে, তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে বাঙ্গালি মুসলিমরা দলে দলে হিন্দু বিদ্বেষী হতে শুরু করলে ভারতীয় হিন্দু আর বাংলাদেশি মুসলিমদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। প্রিয়ার অভিযোগকে আমলে নিয়ে আরও বেশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চর্চা করলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারের মতো সবার কাছে বাংলাদেশ প্রশংসিত হবে। প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর নামে বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ হওয়া আবশ্যক, যাতে সাম্প্রদায়িক সহনশীলতায় বাংলাদেশে একদিন নিউজিল্যান্ডের মতো দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড