• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ব্রিটিশ সরকারের ইসলামবিদ্বেষের সংজ্ঞা প্রত্যাখান

প্রয়োজন আরও গভীর বিবেচনার

  এস এম সোহাগ

১৭ মে ২০১৯, ১১:৩৫
ইসলামোফোবিয়া
ছবি : সংগৃহীত

সমসাময়িক বিশ্বে ক্রমবর্ধমান সঙ্কটের এক নাম ইসলামোফোবিয়া (ইসলামবিদ্বেষ), মুসলিমদেরকে এক ভয়ংকররূপে দেখার যে প্রবণতা, ইসলামের সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিদ্বেষ ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত ইসলামোফোবিয়া। সম্প্রতি ব্রিটিশ এমপিদের একটি ক্রস পার্টি গ্রুপ দ্বারা তৈরি ইসলামোফোবিয়ার সংজ্ঞাকে দেশটির সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। ব্রিটিশ মুসলমানদের সর্বদলীয় সংসদীয় দল (এএপিজে) এটিকে একটি 'সামাজিক অনিষ্ট' হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য এটি সংজ্ঞায়িত করতে চেয়েছিল।

কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন যে, শব্দটি 'আরও সতর্কতার সাথে বিবেচনা' করা প্রয়োজন ছিল এবং এই সংজ্ঞা 'ব্যাপকভাবে গৃহীত হয় নি'। ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল হারুন খান এই সিদ্ধান্তটিকে 'সত্যিকারের অনন্যসুলভ' বলে অভিহিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ব্রিটিশ সংসদে সংজ্ঞা নিয়ে তর্কবিতর্ক করবে সাংসদরা। সংসদে উত্থাপিত সংজ্ঞাটি বলছে, 'বর্ণবাদের মধ্যেই ইসলামফোবিয়ার শেকড় এবং এই বর্ণবাদের লক্ষ্য মূলত মুসলমানতা প্রকাশ বা মুসলমানতার অনুভূতি'। লেবার, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, স্কটিশ কনজারভেটিভস এবং বিভিন্ন মুসলিম গোষ্ঠীসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই শব্দায়নকে সমর্থন করেছে।

তবে, এতেও উদ্বেগ উত্থাপিত হয়েছে, এই সংজ্ঞা খুব অস্পষ্ট এবং চরমপন্থা মোকাবিলা করার প্রচেষ্টাগুলোকে হ্রাস করতে পারে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে লেখা একটি চিঠিতে জাতীয় পুলিশ চীফ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্টিন হিউইট বলেন, এটি কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

ব্যারোনেস ওয়ার্সি। ছবি : সংগৃহীত

২০১০ সালে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় উপস্থিত হওয়া প্রথম মুসলিম নারী ও প্রাক্তন রক্ষণশীল চেয়ার ব্যারোনেস ওয়ার্সি এই চিঠিটি 'ভয়ঙ্কর দায়িত্বহীন' ছিল বলে জানান। তিনি 'বিবিসি রেডিও ৪' প্রোগ্রামে, 'আইনত বন্ধনহীন কাজের সংজ্ঞা' পুলিশকে প্রভাবিত করবে না বলে জানান এবং সরকারকে তা ফিরিয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছে।

এপিপিজি ডিসেম্বরে সংজ্ঞাটি ঘোষণা করে বলেছিল যে, ইসলামফোবিয়া 'ডিনার টেবিলের পরীক্ষা অতিক্রম করেছে'। এটি ২০১১ সালে ব্যারোনেস ওয়ার্সি দ্বারা ব্যবহৃত একটি শব্দ যা দেখায় কীভাবে ইসলামোফোবিয়া সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল।

এপিপিজির রিপোর্টে গ্রুপটি বলেছিল, 'ইসলামোফোবিয়া শব্দটি আমাদের রাজনীতি ও নীতিমালার মধ্যে প্রবেশ করেছে ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে এবং ডিনার টেবিল পরীক্ষা ও পাস করার প্রায় এক দশক হয়ে গেছে। এটি বন্ধ করার এবং এই সামাজিক অনিষ্টের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রগতি জরিপ করার জন্য এখনই উত্তম সময়।'

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই অভিপ্রায় নিয়ে এবং আমাদের ব্রিটিশ মুসলিম নাগরিকদের গত ২০ বছরের প্রকৃত অগ্রগতিকে বাধা দেয়া এবং তার ক্ষতি করা। ব্রিটিশ মুসলমানদের ওপর সর্বদলীয় সংসদীয় দল (এএপিজে) ইসলামফোবিয়ার একটি কার্যকর সংজ্ঞা বের করতে অনুসন্ধান চালু করেছিল।

মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক ফলাফলের প্রমাণপত্রের কোনও পরিমাণে ডকুমেন্টেশন নেই ... যদি আমরা সম্মত সংজ্ঞা থেকে শুরু করতে না পারি তবে এই ফলাফলগুলো উল্টে দিয়ে আমাদের বাসনা আমরা পূরণ করতে পারি।'

ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল হারুন খান। ছবি : সংগৃহীত

সংজ্ঞাটি বাক স্বাধীনতায় সমস্যা করতে পারে কিনা সে ব্যাপারে সমালোচকরা প্রশ্ন করেছেন। এটিকে ৪০ জনেরও বেশি শিক্ষাবিদ, লেখক ও প্রচারকদের দ্বারা স্বাক্ষরিত একটি খোলা চিঠিতে ‘লক্ষ্য পূরণে অনুপযুক্ত’ ছিল বলা হয়েছে। সংজ্ঞাটি ‘আলোচনাব্যতীত এবং ত্বরিত গ্রহণ’ করা হয়েছে যা ‘সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলবে’ এবং ‘মৌলিক গুরুত্বের বিষয়ে বাক-স্বাধীনতায় বাধা দেবে’।

কিন্তু এমসিবির জনাব খান শেষ দিকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তটি ‘গভীরভাবে কৃত্রিম’ ছিল এবং সরকার ‘ইচ্ছাকৃতভাবে সংজ্ঞাটির ভুল অনুধাবন করেছে এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের পরিবর্তে বেশিরভাগ অ-বিশ্বাসীদের মতামতকে সারিবদ্ধ করেছে যা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে বলে মনে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম বা অন্য কোন ধর্মের সমালোচক হওয়া মানেই আপনি যে ইসলামোফোবি, বিষয়টা তা না। যদি কেবলমাত্র আপনি বর্ণবাদের ভাষা ব্যবহার করে মুসলিমতার এক্সপ্রেশনকে আক্রমণ করেন তবেই আপনাকে ইসলামোফোবি বলা হবে।

ছবি : সংগৃহীত

লেবার দলের মহিলা ও সমতা বিষয়ক মন্ত্রী মিস শাহ এই সংজ্ঞাটিকে সমর্থন করে এবং সরকারকে এই সংজ্ঞা ‘প্রত্যাখ্যান’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। তিনি বলেন, ‘কনজারভেটিভ পার্টি ইসলামপন্থী এবং বর্ণবাদের মতো অন্যান্য প্রকারের বিষয়কে অস্বীকার করে এবং সেই অস্বীকারটি খুব ওপর মহল থেকে প্রবাহিত হয়। থেরেসা মে ইসলামফোবিয়ার সংজ্ঞাটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করার মাধ্যমে তিনি মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে যে বার্তাটি পাঠাবেন তা জোরে এবং পরিষ্কারভাবে শুনতে পাওয়া যাবে।’

সরকারি এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘মুসলিম বা অন্যান্যদের বিশ্বাস বা ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে কোন ধরণের ঘৃণা পরিচালিত হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সচেতন যে এএপিজির প্রস্তাবিত সংজ্ঞাটি ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হয়নি যেভাবে এর আগে ইহুদিবিদ্বেষের সংজ্ঞাটি যুক্তরাজ্য সরকার এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সরকারগুলো দ্বারা গৃহীত হয়েছে। এটি এমন এক বিষয় যা আরও সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।’ 'বিবিসি নিউজ'

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড