• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শরণার্থীর মর্যাদা বাতিল হওয়ায় উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা গ্রেফতার

অ্যাসাঞ্জকে কি যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করা হবে?

  অধিকার ডেস্ক    ১২ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:৩৬

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জেকে পুলিশের গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। (ছবিসূত্র : সিএনবিসি)

দীর্ঘ সাত বছর আশ্রিত থাকার পর অবশেষে গ্রেফতার হলেন মার্কিন গোপন দলিল ফাঁসের আলোচিত সাইট উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। মূলত এর মাধ্যমেই সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অ্যাসাঞ্জের কারাজীবন নাটকীয়ভাবে শুরু হলো। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকালে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

লন্ডন পুলিশের দাবি, এ দিন সকালে উইকিলিকসের বহুল আলোচিত এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকেই গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে পুলিশের সদস্যরা দূতাবাসটির ভেতরে প্রবেশ করেন। ২০১২ সাল থেকে এতদিন সেখানেই তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন।

সেন্ট্রাল লন্ডন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অ্যাসাঞ্জ এর আগেও একবার যুক্তরাজ্যে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখন তার বিরুদ্ধে সুইডেনে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে ২০১২ সালে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর তিনি দূতাবাসের ভেতর পালিয়ে যান।

পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার ইকুয়েডর তার শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাহারের পর লন্ডন পুলিশ তাকে গ্রেফতারের অনুমতি পায়। মূলত আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা দেওয়ার পরও আত্মসমর্পণ না করায় অ্যাসাঞ্জকে এই গ্রেফতার করা হলো। বর্তমানে তিনি পুলিশি হেফাজতে আছেন এবং খুব শিগগিরি তাকে আদালতে তোলা হবে।

od

লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জেকে জোরপূর্বক বেড় করে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। (ছবিসূত্র : সিএনবিসি)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মার্কিন গোপন নথি ফাঁসের দায়ে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিচার কাজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনেই করা হবে। গত বছর আদালতের কাছে অজানাভাবে ২০১০ সালে ইরাকের যুদ্ধ সম্পর্কিত সংবেদনশীল মার্কিন সরকারি দলিল প্রকাশ করা হয়েছিল। নথিটি তখন চেলসি ম্যানিং নামে একজন আর্মি গোয়েন্দা বিশ্লেষকের মাধ্যমে উইকিলিকস প্রকাশ করেছিল। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সার্বভৌমত্বে আঘাত করার দায়েও অ্যাসাঞ্জকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে উইকিলিকস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু গোপন দলিল জনসম্মুখে এনেছিল। সেখানে বলা হয়, ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়ার সহায়তায় তাদের হ্যাকারদের মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয়েছিল।

দীর্ঘদিন ধরেই নিজের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তিনি যে দলিল উত্থাপন করেছেন তার সম্পূর্ণটাই সত্য। একইসঙ্গে ব্রিটেন সরকার যেন তাকে কখনই গ্রেফতার না করে; সেই অনুরধও বারংবার করা হয়েছিল।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে ঠেলে বেড় করার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায় পুলিশের সদস্যরা যোর করে দূতাবাসের গেইট থেকে বেড় করে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।

ভিডিওটি দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।

BREAKING: #Assange removed from embassy - video pic.twitter.com/qsHy7ZVPg5

— Ruptly (@Ruptly) April 11, 2019

উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের এই গ্রেফতার প্রসঙ্গে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ এরিক লুইস বলেছেন, ‘৪৭ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জ সেই এলাকাটি ছাড়তে চাননি। তার ধারণা উইকিলিকসের কীর্তির জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। অ্যাসাঞ্জের প্রতিরক্ষায় আগামীতে চার ধরনের বিপত্তি থাকতে পারে।’ তা হলো,

* দ্বৈত ফৌজদারি : অ্যাসাঞ্জেকে উভয় দেশেই দ্বৈত ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করা দরকার। যে কারণে প্রথমে এটি প্রমাণ করতে হবে যে, এই ষড়যন্ত্রের চার্জটি ব্রিটেনের আইনেও সমান অপরাধ।

* সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ : অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকার পরবর্তীতে যে চার্জ গঠন করবে; সেখানে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হবে কিনা তা নিয়েও বেশকিছু প্রশ্ন রয়েছে। যদিও ব্রিটেন এই বিষয়টিকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করতে পারে।

* রাজনৈতিক অপরাধ : এর মাধ্যমে অ্যাসাঞ্জেকে একটি রাজনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, এটি ঘটেছে ঠিক তখনই; যখন ফাতেহুল্লাহ গুলেনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের বিরোধিতা সত্ত্বেও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।

* অভিব্যক্তি প্রকাশের স্বাধীনতা : অ্যাসাঞ্জ বারংবার জোর দিয়ে বলবেন যে, তিনি একজন সাংবাদিক হিসাবে এমনটা করছেন। যে কারণে তার এই কর্মের জন্য তাকে কখনোই দোষী সাব্যস্ত করা উচিত নয়। আর তাই যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

লুইস বলেন, ‘জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রতিরক্ষায় কেবল এই চার ধরনের বিপত্তি থাকতে পারে।’

এর আগে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মরোনোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুমোদন ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যদিও উইকিলিকসের পক্ষ থেকে এই অনুমোদন প্রত্যাহারের বিষয়টি সম্পূর্ণ অবৈধ বলেও দাবি করা হয়।

অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতারের বিষয়ে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘আমি এটা নিশ্চিত করলাম যে; অ্যাসাঞ্জকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এখন খুব শিগগিরি তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এ জন্য আমি ইকুয়েডরের সরকারকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। কেননা তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশের গুরুত্বপূর্ণ নথি ফাঁস করেছেন।’

২০১০ সালে মার্কিন কূটনৈতিকদের আড়াই লাখ ই-মেইল এবং প্রায় পাঁচ লাখের বেশি সামরিক গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল সুইডেনভিত্তিক আন্তর্জিক সংস্থা উইকিলিকস। যদিও এর বেশ কিছুদিন পর সুইডেনে প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে সেই মামলায় বিচারের জন্য যুক্তরাজ্য সরকার তাকে সুইডেনের কাছে হস্তান্তর করার কার্যক্রম শুরু করে। এরপর গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যের একটি আদালত অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত নেয়। এবার এসবের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হলো।

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড