• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গর্ভধারণ না করতে পেরে সমাজচ্যুত, হলেন বৃক্ষমাতা পেলেন পদশ্রী

  অধিকার ডেস্ক    ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৫৪

সন্তান না হওয়াতে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হলে শুরু করেন বৃক্ষরোপণ, ৮০ বছরে ৮০০০ বৃক্ষসন্তানের মা থিম্মাক্কা এবার পেলেন পদ্মশ্রী। ছবি : সংগৃহীত

নারীদের জীবনে গর্ভধারণই একমাত্র উপজীব্য, সন্তানধারণ ছাড়া নারীকে মানুষের মর্যাদা দেওয়া থেকেও বাদ দিতে পারে এমন সমাজ ব্যবস্থার খোঁজ মিলবে ভারতে। বিবাহিত জীবনের ২৫ বছর পরেও কোনো সন্তান হয়নি এজন্য সমাজ তাকে করেছিল একঘরে। গর্ভধারণ করতে না পারলে নাকি নারী পূর্ণতা পান না-এ ধারণা থেকে সমাজের কেউ তার সঙ্গে মিশত না। এ থেকে তার মনে জন্ম নিল ক্ষোভ। মনে মনে তিনি সমাজের প্রতি প্রতিশোধ নিতে চাইলেন। আর ক্ষোভ থেকে তিনি যা করলেন তাকে এনে দিল ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী। 'আনন্দবাজার'

ভারতের কর্নাটকের গুব্বি তালুকের বাসিন্দা বেকাল চিক্কাইয়ার সঙ্গে থিম্মাক্কার বিয়ে হয়েছিল। সন্তান না হওয়ায় স্বামীর সঙ্গে অনন্য এক সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ঠিক করেন, গাছ লাগাবেন। আর তাদেরই বড় করবেন সন্তানস্নেহে। থিম্মাক্কার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই। গ্রামের আর পাঁচজন দরিদ্র ভারতীয় নারীর মতোই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে রুটিরুজি চালানো এক নারী। ভূমিহীন দিনমজুর এই দম্পতি সমাজেও ছিলেন একঘরে।

ছবি : সংগৃহীত

কথা বলার সমস্যা থাকায় স্বামী চিক্কাইয়াকে প্রতিবেশীরা বলত তোতলা চিক্কাইয়া। সমাজ বিচ্ছিন্ন স্বভাব-লাজুক চিক্কান্না আর থিম্মাক্কার দিনগুলো ছিল বেশ একলা, বিষণ্ণ। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নেন সমাজের বঞ্চনার জবাব দেওয়ার। তখনই মাথায় আসে গাছ লাগানোর বিষয়টি। যেই ভাবা সেই কাজ। প্রথম বছরে ১০টি, দ্বিতীয় বছরে ১৫টি, তৃতীয় বছরে ২০টি বটগাছের চারা লাগালেন। এক সময় এই সন্তানদের দেখাশোনার জন্য দিনমজুরির কাজও ছেড়ে দেন চিক্কাইয়া। থিম্মাক্কা রোজগার করতেন আর বাড়ি ফিরে স্বামীর সঙ্গে সন্তানদের দেখভাল করতেন।

থিমাক্কা ও তার স্বামী রোজ প্রায় ৪ কিলোমিটার পেরিয়ে তারা এই গাছগুলোতে পানি দেওয়ার কাজ করতেন। গবাদি পশুর হাত থেকে চারাগাছগুলোকে বাঁচাতে কাঁটাতারের বেড়াও বানিয়ে দেন। এভাবে তার গ্রাম হুলিকাল থেকে কুদুর অবধি ২৮৪টি বটগাছের চারা লাগিয়ে বড় করেছেন তিনি। প্রায় চার কিলোমিটার পথ জুড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছায়াময় সুবিশাল গাছগুলো থিম্মাক্কার ভালোবাসারই নিদর্শন মনে করেন পথচারীরা।

ছবি : সংগৃহীত

থিমাক্কার স্বামী ১৯৯১ সালে মারা যান। এরপর থেকেই গাছগুলোর পরিচর্যার ভার তার ওপর এসে পড়ে। তার কাজের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গ্রামবাসীরা তাকে 'সালুমারাদা' বলে ডাকতে শুরু করেন। কন্নড় ভাষায় যার অর্থ 'গাছেদের সারি'। একপর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা সালুমারাদা থিম্মাক্কা। ১৯৯৬ সালে 'জাতীয় নাগরিক সম্মানে' ভূষিত হওয়ার পর তার কথা জানতে পারে গোটা দেশ। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা এগিয়ে আসে তাকে সাহায্য করতে।

থিম্মাক্কার সেই সন্তানতুল্য গাছগুলোকে বর্তমানে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে কর্নাটক সরকার। সেই প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, সন্তানদের নিজে প্রতিপালন করতে পারলেই তিনি খুশি হতেন। কারণ কখনোই কারও সাহায্য চাননি তিনি ও তার স্বামী। ২০১৬ সালে 'বিবিসি'র জরিপে বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী নারীদের তালিকায় রয়েছে সালুমারাদা থিম্মাক্কার নাম। আন্তর্জাতিক স্তরের উদ্যোগে থিম্মাক্কা ফাউন্ডেশনেও তৈরি হয়েছে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায়।

ছবি : সংগৃহীত

গত ৮০ বছরে প্রায় ৮০০০ গাছ পুঁতে তাদের বড় করে তুলেছেন ১০৬ বছর বয়সী এই বৃক্ষমাতা। স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পর্যন্ত হয়নি। সেই থিম্মাকাই এবার পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছেন পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নের কারণেই। পদ্মশ্রী ছাড়া আন্তর্জাতিক স্তরেও বহু পুরস্কার পেয়েছেন এই বৃক্ষমাতা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড