কে এইচ আর রাব্বী
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে শুরু হয়েছে বিশ্ব নেতাদের নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) শুরু হওয়া এ সম্মেলনে বিশ্বের অন্য সব নেতাদের মতো যোগ দিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এরইমধ্যে নিজের সম্পর্কে সাফাই গাওয়ার মিশনে মাঠে নেমেছে যুবরাজ সালমান ও তার সহযোগীরা। 'খবর আরব নিউজ'
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিন্ন মতাবলম্বী প্রখ্যাত সংবাদকর্মী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক জামাল খাসোগি হত্যার পর এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিলেন সৌদি যুবরাজ। ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয় উত্থাপনের মাধ্যমে তিনি খাসোগি হত্যাসহ ইয়েমেনে হত্যাযজ্ঞ চালানোর ইস্যুকে বিশ্ব নেতাদের সামনে থেকে পাশ কাটিয়ে নেবেন।
সৌদি আরবের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকা যুবরাজ সালমান ইতোমধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং এবং এমম্যানেল ম্যাক্রনসহ বিশ্বের বড় বড় সব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নানা ইস্যুতে সাক্ষাৎ করেছেন। সম্মেলন সূত্রের বরাতে জানা যায়, সে সব বৈঠকে সাংবাদিক খাসোগি হত্যার সঙ্গে ইয়েমেনে মার্কিন জোটের করা হত্যাযজ্ঞের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। মূলত এবার যুবরাজ সেগুলোকেই পাশ কাটাতে চাইছেন।
সম্মেলনে অংশগ্রহণের পর ইতোমধ্যে যুবরাজ সালমানকে ভীষণ হাস্যোজ্জ্বলভাবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। সে সময় তিনি পুতিনের সঙ্গে হাসিমুখে হাত মিলান। শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) এমন একটি ভিডিও জনসম্মুখে তুলে ধরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। মূলত এর পরেই এ বিষয়ে শুরু হয় সালমানকে নিয়ে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা।
ভিডিওতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল সৌদি যুবরাজ সালমান (সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট)
এরইমধ্যে সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) বরাতে জানা যায়, শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্মেলন স্থলে এক সৌজন্য সাক্ষাত করেন। সেখানে তারা দুদেশের মধ্যে নিরাপত্তা, শক্তি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে নানা আলোচনা করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। (ছবিসূত্র : টুইটার)
রাজধানী বুয়েনসে আয়োজিত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দুই নেতা সৌদি আরবের তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলো ভারতে সরবরাহের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। সে সময় সৌদির তেল জায়ান্ট যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তেল সরবরাহের পাশাপাশি ভারতেও এর একটা অংশ সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ও সৌদি যুবরাজ।
পরে তিনি সম্মেলনের ফাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামফোসা'র সঙ্গে আরও এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সে সময় তারাও সৌদির জ্বালানি ও দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগের বিষয়ে নানা আলোচনা করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামফোসার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন যুবরাজ সালমান। (ছবিসূত্র : আরব নিউজ)
এ দিকে তিনি একইদিন দুপুরে রাজধানীর কলোন থিয়েটারে আয়োজিত গাল অনুষ্ঠানে আগত অন্য নেতাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।
গাল অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে যুবরাজ সালমান। (ছবিসূত্র : আরব নিউজ)
অন্যদিকে শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় শীর্ষ সম্মেলনের মাঝেই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন বিন সালমান। যুবরাজের মুখপাত্রের বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে যুবরাজ সালমানের সাক্ষাৎ (ছবিসূত্র : আরব নিউজ)
বার্তা সংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে জানায়, আন্তর্জাতিক জি-২০ সম্মেলনের প্রতিবাদে রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের প্রধান প্রধান সড়কে এসে সমবেত হন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী।
সে সময় জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালিসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকরা বিক্ষোভকারী আর্জেন্টাইনদের সঙ্গে অংশ নেন। এতে প্রায় ২২হাজার পুলিশ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী তাদের প্রতিহত করেন।
আন্তর্জাতিক জি-২০ সম্মেলনের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে বিক্ষোভকারীদের ঢল। (ছবিসূত্র : সিএনএন)
অপরদিকে সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ রুশ জ্বালানি মন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাকের সঙ্গে সৌদির তেল রপ্তানি প্রসঙ্গে এক সাক্ষাত করেন।
এসব বিষয়ে সৌদির জ্বালানি মন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা আরআইএ’কে বলেন, ‘আগামী বছরের তেল রপ্তানি প্রসঙ্গে আলোচনা করার জন্য রাশিয়ার সম্রাট আলেকজান্ডার নোভাকের সঙ্গে যুবরাজ সালমানের এক বৈঠক করার কথা রয়েছে।’
সৌদির এ জ্বালানি মন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘২০১৯ সালেও রাশিয়ায় তেল রপ্তানির পরিমাণ আগের মতো ঠিক একই পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে ওপেক এবং অওপেক সদস্যদের মধ্যে চুক্তি অনুসারে এটিকে সামঞ্জস্য করা যেতে পারে। তাই প্রযোজক গ্রুপ ওপেক ও তার সহযোগীরা তেল উৎপাদন প্রসঙ্গে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে ভিয়েনায় মিলিত হতে পারে।’
তাছাড়া সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং এবং দেশটির দুই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। সেখানে তারা নানা গোপন ইস্যুতে আলোচনা করেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের সাক্ষাৎ (ছবিসূত্র : আরব নিউজ)
পরে তিনি ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কলার সঙ্গেও এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিলেন সৌদির এ যুবরাজ। সেখানে তারা দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান জি-২০ সম্মেলনে আগত নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের অংশ হিসেবে একইদিন রাজধানী বুয়েনস অ্যাসোসিয়েশনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমম্যানেল ম্যাক্রনের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সে সময় তিনি অন্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও কথা বলেন।
এর আগে ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছিল ওয়াশিংটন। পরে শুক্রবার জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দেওয়া সোয়াইপ নিষেধাজ্ঞা এবং বাণিজ্য সুরক্ষাবাদের "ক্ষতিকর" ব্যবহারকে পুরোপুরি অস্বীকার করেন।
বুয়েনস অ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুতিন বলেন, ‘অবৈধভাবে একতরফা নিষেধাজ্ঞা এবং সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপগুলোতে ফিরে যাওয়ার একটি দুর্বৃত্ত অভ্যাস বর্তমানে ছড়িয়ে পড়েছে।’
অন্যদিকে একইদিন সম্মেলনের ফাঁকে মেক্সিকো ও কানাডার সরকার প্রধানরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তর অ্যামেরিকান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এনএফটিএ) প্রতিস্থাপনের জন্য একটি বিশাল আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
সম্মেলন স্থলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ। (ছবিসূত্র : সিএনএন)
জি-২০ সম্মেলনের পাশাপাশি বুয়েনস আয়ার্সে আয়োজিত এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘এটি একটি মডেলের চুক্তি যা চিরদিনের জন্য বাণিজ্যিক আড়াআড়ি পরিবর্তন করে।’
উল্লেখ্য, ধারণা করা হচ্ছে- বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে এভাবে সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করার মাধ্যমে যুবরাজ সালমান তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাসহ ইয়েমেন ইস্যুকে সম্পূর্ণভাবে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড