আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের বিতর্কিত সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে থাকা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে হাজার হাজার সৈন্য সমাবেশ করায় দেশটিতে ব্যাপক মানবাধিকার বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সংস্থাটির মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যানড্রুজ সাধারণ পরিষদের কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের এই অংশের লোকজন আরও ব্যাপক নৃশংস অপরাধের ব্যাপারে প্রস্তুত রয়েছেন। আমাদের সবারও প্রস্তুত থাকা উচিৎ। আমি মরিয়া হয়ে আশা করছি যে, আমার এই আশঙ্কা যেন ভুল হয়।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) বলছে, গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানে এক হাজার ১০০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অভ্যুত্থানের পর গ্রেফতার করা হয়েছে ৮ হাজারের বেশি মানুষকে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনের ফলাফল উপস্থাপন করেছেন অ্যানড্রুজ। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সদস্য এবং ভারি অস্ত্রশস্ত্র দেশটির অস্থিতিশীল উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি তথ্য পেয়েছেন।
আরও পড়ুন : কট্টর চীনা ব্লগারদের লক্ষ্য এখন পশ্চিমারা
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের জান্তা সরকার মানবতার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধে জড়িত বলে অনুসন্ধানে আলামত পাওয়া গেছে। অ্যানড্রুজ বলেন, দেশটির জান্তার এই কৌশল ভয়ঙ্করভাবে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর গণহত্যা চালানোর আগের ঘটনা প্রবাহকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানের মুখে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন, পিটিয়ে গুলি করে হত্যা, নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এমন নৃশংসতাকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
অ্যানড্রুজ মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে অর্থ, অস্ত্র দিয়ে সহায়তা এবং বৈধতা দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে দেশটির বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি ‘বৈশ্বিক চাপের কারণে হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : চীনা আক্রমণ থেকে তাইওয়ানকে রক্ষার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
এর আগে গেল সোমবার মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় বিক্ষোভ করে কারাগারে যাওয়া পাঁচ হাজারের বেশি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের জোট আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলন থেকে মিয়ানমারের জান্তাকে বাদ দেওয়ার পর বন্দিদের মুক্তির ঘোষণা আসে। আসিয়ানের সম্মেলন থেকে জান্তা প্রধানকে বাদ দেওয়ার এই ঘটনা দেশটির সামরিক শাসক গোষ্ঠীর জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
অ্যানড্রুজ বলেছেন, জান্তাকে আসন্ন সম্মেলনে স্বাগত জানানো হবে না বলে আসিয়ানের ঘোষণা মূলে আঘাত করেছে। তিনি বলেন, জান্তা-নিয়ন্ত্রিত বাহিনী দেশটির আড়াই লাখ মানুষকে বাস্ত্যুচুত করেছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের অনেককে নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি নির্যাতনের কারণে অনেকে মারাও গেছেন।
আরও পড়ুন : ইকুয়েডরের কারাগার থেকে ৭টি মরদেহ উদ্ধার
উল্লেখ্য, শিশুদের ওপর নির্যাতন চালানোর বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা।
সূত্র : এএফপি
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড