• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আরব মিত্রদের হারানোর ঝুঁকিতে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান, উচ্ছ্বাসিত ভারত

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৪ আগস্ট ২০২০, ০৯:৫৩
আরব মিত্রদের হারানোর ঝুঁকিতে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান, উচ্ছ্বাসিত ভারত
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (ছবি : খালিজ টাইমস)

ভারত নিয়ন্ত্রিত ভূস্বর্গ খ্যাত জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে আরব দেশগুলোর কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সমর্থন পেতে ব্যর্থ হাওয়াই এখন চীনের নেতৃত্বে নতুন জোট খোঁজার চেষ্টা করছে এশিয়ার মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান। হঠাৎ করেই নতুন এই পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করা পাকিস্তানের জন্য কতটা বাস্তবসম্মত হবে? এটাই জানার চেষ্টা করেছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।

চলতি মাসের শুরুতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মুহাম্মদ কুরেশি কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সহায়তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ৫৭ মুসলিম দেশের জোট অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) সমালোচনা করেন।

টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, মূল সংগঠকেরা বৈঠক না ডাকলে পাকিস্তানই আগ্রহী অন্য দেশগুলোকে নিয়ে এ রকম বৈঠক ডাকতে। কারণ কিছু মুসলিম দেশ কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত রয়েছে। যদিও তার সেই মন্তব্যে ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে সৌদি আরব। কারণ ওআইসিতে বর্তমানে সৌদি আরবের বড় ভূমিকা ও প্রভাব রয়েছে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গত কয়েক বছর আগে সৌদি আরব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল। জ্বালানি তেল বাকি দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সৌদি সরকার ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করতে বলেছে পাকিস্তানকে। একই সঙ্গে তেল দেওয়ার প্রস্তাব স্থগিত করেছে। জানা যায়, পাকিস্তান চীনের সহায়তায় এক বিলিয়ন ডলার ফেরত দিয়েছে।

আরও পড়ুন : আমিরাতের পর এবার সৌদির দিকে নজর ইসরায়েলের

বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবের এই ক্ষোভের কারণ হলো—তারা মনে করছে, তুরস্কের ইন্ধনে পাকিস্তান এ অবস্থান নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে আমাদের যে সংবেদনশীলতা রয়েছে সেটা উপসাগরীয় দেশগুলোকে বুঝতে হবে।

তার এই বক্তব্যে সৌদি আরব ক্ষুব্ধ হওয়ার পর সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যদিও সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কে যে ফাটল দেখা দিয়েছে—সেটা অস্বীকার করেছেন ইমরান খান। গেল সপ্তাহে সৌদি আরব সফরে যান পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। কিন্তু সফরকালে তিনি সৌদি আরবের ক্ষমতাধর যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেননি।

এই ঘটনা পাকিস্তানের জন্য বিব্রতকর। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের ওপর সৌদি আরবের ক্ষোভের বড় কারণ হলো—ওআইসি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশির মন্তব্য এবং ইরান, কাতার ও তুরস্কের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ঘনিষ্ঠতা।

আরও পড়ুন : ইসরায়েলি ভঙ্গিতে সীমান্ত পেরিয়ে দুই ইরানিকে হত্যা করেছে আমিরাত

গত বছর ভারত সরকার সংবিধানে দেওয়া কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে। একসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরকে বিভক্ত করে পৃথক দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার বিল পাশ করে ভারতের পার্লামেন্ট। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিক্ষুব্ধ করেছে পাকিস্তানকে।

ইসলামাবাদ শুরু থেকেই দিলির এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছে। একই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বকে ভারতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান সরকার আরব বিশ্বের বড় কোনো সহায়তা পায়নি।

আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলায় নিজেদের শক্তিশালী করছে ইরান-সিরিয়া

ওয়াশিংটনভিত্তিক উড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক ও গবেষক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, কাশ্মীর ইস্যুকে বৈশ্বিক ফোরামে বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে গত এক বছর ধরে। কিন্তু বাস্তবতা হলো পাকিস্তান এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পায়নি। এখন স্বাভাবিকভাবে একটি প্রশ্ন ওঠে, পাকিস্তানের এই আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ক্যাম্পেইন সফল না হলে সেক্ষেত্রে তাদের সেকেন্ড পরিকল্পনা কী হবে?

কিছু বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীর ও ভারত ইস্যুতে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে। গোটা জম্মু-কাশ্মীরকে নিজেদের সীমানা দেখিয়ে একটি মানচিত্র প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে পাকিস্তানের। এখন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে সাড়া না পেলে সেটা শুধু পাকিস্তানের নিজস্ব উদ্যোগ হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকবে।

ইসলামাবাদের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রাজা কায়সার আহমেদ বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আগ্রাসী কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন। চীন, মালয়েশিয়া ও তুরস্ক ছাড়া অন্য কোনো দেশ এই মুহূর্তে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সমর্থন করছে না।

আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে ভেনেজুয়েলা

জন্স হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ভালি নাসর বলছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে নয়াদিল্লির নীতি ও পদক্ষেপের ক্ষেত্রে রিয়াদের এখনই কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ সৌদি আরবের দৃষ্টিতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার।

সৌদি আরব একইসঙ্গে পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাইবে। এটা স্পষ্ট যে, তারা কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সরাসরি সহায়তা করতে বা সমর্থন দিতে আগ্রহী নয়। পাকিস্তান এ বিষয়টি সহজেই বুঝতে পেরেছে।

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অবস্থায় ক্ষমতাধর আরব দেশগুলোর সমর্থন না পাওয়ায় পাকিস্তানকে নতুন মিত্রের সন্ধান করতে হচ্ছে। অন্য ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তান সম্পর্ক আরও জোরালো করতে চাইছে।

আরও পড়ুন : ইরাকের কাছে মার্কিন সেনদের ঘাঁটি হস্তান্তরের ভিডিও প্রকাশ

কুগেলম্যান বলছেন, পাকিস্তান এখন ইরান, মালয়েশিয়া এবং তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চাইছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে চায় পাকিস্তান। এর কারণ হলো—যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক ও অংশীদারিত্ব বাড়তে থাকায় রাশিয়া-ভারত সম্পর্ক দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়টি আরও কিছুদিন দেখার প্রয়োজন হবে। কারণ এখনই বলা উচিত হবে না যে, পাকিস্তান-সৌদি আরব সম্পর্কে চিড় ধরেছে। তবে এটা বলা চলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হওয়ার কারণে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতি নতুন আকৃতি পেতে চলেছে। কারণ পাকিস্তান এখন রাশিয়ার পাশাপাশি উপসাগরীয় আরব দেশের বাইরে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে।

সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের টানাপড়েন শুরু হওয়ার পর হঠাৎ করে দুই দিনের সফরে চীনে যান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কুরেশি। এই সফরকে দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্ব জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে ডয়চে ভেলেকে জানান জার্মানিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত।

আরও পড়ুন : পরমাণু স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডকে ভয়াবহ হামলার তকমা দিল ইরান

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের নেতৃত্বে উদীয়মান একটি জোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চায় পাকিস্তান। সম্ভবত এই জোটে ইরানকে যুক্ত করা হতে পারে। রাজা কায়সার আহমেদ বলেন, অতীতে ইসলামাবাদ চীন, রাশিয়া ও আরও কিছু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশ ভারতকে কাশ্মীর ইস্যুতে তাদের অবস্থান বদলের আহ্বান জানায়নি। পাকিস্তানকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, কোনো দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেই আন্তর্জাতিক বিরোধের ক্ষেত্রে তারা একমত হবেন এর কোনো গ্যারান্টি নেই।

বিশ্লেষকরা ডয়চে ভেলেকে বলছেন, নতুন আঞ্চলিক জোটে ইসলামাবাদের অন্তর্ভুক্তি ভারতের সঙ্গে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং সৌদি আরব ও অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পাকিস্তান আরও বেশি একাও হয়ে পড়তে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড