আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বিরোধের নতুন মাত্রা শুরু। এই বিপজ্জনক বৈরিতার পারদ যখন চড়চড় করে প্রতিদিন উঠছে, তারই মধ্যে ‘আপসের বার্তা’ নিয়ে হাজির চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
বিবিসি বাংলা জানায়, ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে বৃহস্পতিবার দীর্ঘ এক বিবৃতি দিয়েছেন তিনি যা কিছুটা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৯ সালে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে শুরুর পর দুই দেশের সম্পর্ক এতটা খারাপ এবং বিপজ্জনক আর কখনো হয়নি।
অবশ্য এই পরিণতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে তিনি বলেন, ওয়াশিংটনে বর্তমান প্রশাসন চীন বিষয়ে যে কৌশল নিয়েছে তা ‘একগাদা ভ্রান্ত ধারণা এবং মিথ্যার’ ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
ওয়াং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন ব্যাপারটিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, যেকোনো চীনা বিনিয়োগের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। বিদেশে যেকোনো চীনা ছাত্র একজন গুপ্তচর। প্রতিটি সহযোগিতার পেছনে চীনের কোনো না কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যেটা সত্যি তা হলো চীন কখনোই বিশ্ব পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে তার জায়গা নিতে আগ্রহী নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে চীনের নীতি একই রকম এবং তা বদলায়নি।’
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীন চায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি যেন সহযোগিতার সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে। অমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র ঠাণ্ডা মাথায় চীনের ব্যাপারে নিরপেক্ষ, বাস্তবমুখী এবং যৌক্তিক নীতি নেবে।’
তিনি বলেন, ‘চীন সর্বদা কথা বলতে প্রস্তুত, যদি ওয়াশিংটন সত্যিকার তা চায়।’
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এবং তার পশ্চিমা কিছু মিত্র দেশ যখন শি চিনপিংয়ের চীনকে ‘চরম উদ্ধত এবং উচ্চাভিলাষী’ বলে তুলে ধরার অব্যাহত চেষ্টা করে চলেছে, সেই সময় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরনের আপসের বক্তব্য নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে।
হংকং-ভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে দেওয়া এক মন্তব্যে সেখানকার চীনা অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের মার্কিন-চীন সম্পর্কের গবেষক লু শিয়াং বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব বক্তব্য দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে চীন ওয়াশিংটনকে কিছুটা শান্ত করতে চাইছে। চীনের এই বার্তার লক্ষ্য আমেরিকান ভোটার ছাড়াও আমেরিকান নীতি নির্ধারকরাও।’
‘তাদেরকে চীন বলতে চাইছে শত্রুতার পারদ না বাড়িয়ে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করলে তাতে আমেরিকার লাভ হবে, আমেরিকার অর্থনৈতিক পুনরুত্থান অনেক সহজ হবে’ যোগ করেন তিনি।
কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, আমেরিকাকে সরিয়ে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি হওয়ার খায়েশ চীনের নেই বলে যে বক্তব্য চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন তা মিথ্যা নয়।
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সাল থেকে চীনা নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের সবসময় এই বার্তাই দিয়েছেন। তারা বলেছেন- আমরা তোমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নই, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই, এবং সেইসাথে সমান মর্যাদা চাই। ...ওয়াং ই গতকাল তারই পুনরাবৃত্তিই করেছেন।’
লু শিয়াং-এর মত ড. আলীও মনে করেন, নভেম্বরের নির্বাচনের আগে মার্কিন ভোটার এবং রাজনীতিকদের কথা মাথায় রেখে চীন এই সিদ্ধান্ত হয়তো নিয়েছে।
তার ভাষ্য, ‘বিশেষ করে আমেরিকাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা নিয়ে যেভাবে সন্দেহ বাড়ছে, চীনারা হয়তো ভাবছে এখন আমেরিকান ভোটারদের বলার সময় যে চীনের কাছ থেকে তাদের লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না।’
কভিড সংকট মোকাবেলার প্রসঙ্গ টেনে ড. আলী বলেন, ‘এ জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে মানুষকে এটা বোঝানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে যে এতে সরকারের কোনো দায় নেই, সমস্ত সংকটের মূলে চীন। সময়মত চীনকে তারা দেখে নেবেন... চীনকে গালমন্দ দোষারোপ করাটাকে ট্রাম্প প্রশাসন নির্বাচনে জেতার একমাত্র ওষুধ হিসাবে বিবেচনা করছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ড. আলী রীয়াজ অবশ্য বলছেন, ভোটারদের সামনে চীনকে শত্রু হিসাবে তুলে ধরার প্রয়াস যেমন রয়েছে, তেমনি চীনকে নিয়ে ট্রাম্পের ভীতিও রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জিতিয়ে দিতে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্প গোপনে দেন-দরবার করেছিলেন বলে তারই সাবেক সহযোগী জন বোল্টন তার বইতে যা লিখেছেন তা একবারে ফেলে দেওয়ার মত নয়।’
ড. রিয়াজ বলেন, ‘সাইবার হ্যাকিংয়ে চীন কতটা দক্ষতা অর্জন করেছে আমেরিকানরা এখন খুব ভালোভাবে তা জানে। নির্বাচনের সময় চীন কী করে তা নিয়ে ট্রাম্পের লোকজনের মধ্যে তা নিয়ে দারুণ উদ্বেগ রয়েছে।’
অবশ্য অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করছেন, ওয়াং ই’র বার্তায় পরিস্থিতির কোনোই পরিবর্তন হবে না। বরং নির্বাচন যত এগোবে হোয়াইট হাউজের ঘনিষ্ঠ লোকজনের মুখ থেকে থেকে তত বেশি চীন বিরোধী যুদ্ধংদেহী কথাবার্তা শোনা যাবে।
রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, সিংহভাগ চীনা গবেষক এখন মনে করেন- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এখন এতটাই জটিল হয়ে পড়েছে যে, নতুন একটি শীতল যুদ্ধ এড়ানোর সম্ভাবনা দিনকে দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
ওডি/
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড