কে এইচ আর রাব্বী
ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর তেহরান-ওয়াশিংটন সম্পর্কে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশটির ৫২টি সাংস্কৃতিক স্থাপনায় বিধ্বংসী হামলার হুমকি দিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রয়েছে সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। কেবল মাত্র ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাতেই রয়েছে দেশটির বিশটি সাংস্কৃতিক স্থানের নাম। মার্কিন হামলার তালিকায় থাকা ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাংস্কৃতিক স্থাপনা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক :
ব্ল্যাক চার্চ (কারা কেলিসা বা তাতভাস)
‘দ্য ব্ল্যাক চার্চ’ হচ্ছে সান টাদদেওর সমাধিস্থল। ঐতিহাসিক সূত্রগুলো যুগে যুগে সাসানীয় আর্মেনিয়ানদের কথাই প্রকাশ করেছে। এর একটি অংশ ছিল জোড়াস্ত্রিস্টিয়ান বিশ্বাসের আর অপর অংশটি ছিল মিত্রিজমের অনুসারীদের।
আর্গ-ই বাম
আর্গ-ই বাম বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শহর যা প্রায় ২২০০ বছর পূর্বে নির্মিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই স্থানটি আজমিন পাহাড়ে অবস্থিত। প্রাচীন শহর আর্গ-ই বাম প্রায় ২০ হেক্টর জমির ওপর বিস্তৃত।
শহরটির চিহ্নিত কাঠামোগুলোর মধ্যে প্রধান একটি গ্যালারি রয়েছে- যা অতীতে ছিল বাজার। তাছাড়া এখানে রয়েছে একটি মন্দিরের অবশিষ্টাংশ, জুর খানের ঐতিহাসিক জিমন্যাসিয়াম, আস্তাবল, ব্যারাক, কারাগার এবং চার ঋতুর প্রাসাদ।
বিসোতুন শিলালিপি
বিসোতুনের রূপান্তরিত শিলালিপি ইরানের হারসিন প্রদেশের হোমোনিমাস শহরে অবস্থিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং পরিচিত প্রাচীন নথির একটি। শিলালিপিটি অ্যাকেমেনিড যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পাঠ্য। ‘দেবতাদের স্থান’ উল্লেখ করে ২০০৬ সালে স্থানটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গলস্টান প্রাসাদ
গলস্টান প্রাসাদের একটি স্মরণীয় প্রবেশদ্বার রয়েছে। বর্তমানে এটি যাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে রয়েছে আয়না হল, হীরার হল এবং হাতির কক্ষ। এখানকার তালার-ই সালাম নামে কক্ষে ১৭৩৯ সালে ভারত থেকে একটি সিংহাসন আনা হয়। যা নাদের শাহ যুদ্ধের লুণ্ঠন হিসেবে পরিচিত। মোট সাতটি ধাপে সজ্জিত রয়েছে এই সিংহাসন।
গনবাড-ই কাওয়াস টাওয়ার (কাবুস)
গনবাড-ই কাওয়াস টাওয়ারটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের টাওয়ারগুলোর মধ্যে একটি। এটি ইরানের ইসলামিক স্থাপত্যের সবচেয়ে মূল্যবান স্থাপনাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। টাওয়ারটি পার্কের কেন্দ্রে গনবাড-ই কাভাস শহরের উত্তরে অবস্থিত।
ইয়াজদ শহর
ইয়াজদ হচ্ছে ইরানের অন্যতম প্রাচীন একটি শহর। এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো প্রত্যেকে নিজস্ব উপায়ে দেশটির অতীতকে মনে করিয়ে দেয়। খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগে এখানে প্রথম মানব বসতি হয়।
ইমাম মসজিদ
ইস্পাহানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মসজিদের নাম এই ইমাম মসজিদ। এটি ইরানের ইসলামিক স্থাপত্যের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম। মসজিদটি অন্যান্য নামেও বেশ পরিচিত, যেমন : মাহদী মসজিদ, আল-মাহদী মসজিদ, জামে আব্বাসী মসজিদ, সোলতানি জাদিদ মসজিদ।
১৬১১ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ১৬২৬ সালে শেষ হয়। এটি ইসফাহান শহরের ইমাম বর্গক্ষেত্রের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।
ময়দানে-ই ইমাম (নাগশ-ই জাহান)
নাগশ-ই জাহান স্কয়ারটি টিমুরদের সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। এখনকার সময়ের তুলনায় এটি তখন অনেকটাই ছোট আকারে নির্মিত হয়েছিল। এখানে ইমাম মসজিদের অবস্থান। ১৬০২ সালে শাহ আব্বাসের শাসনামলে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ১৬১৯ সালে গিয়ে শেষ হয়।
পার্সপোলিস বা তক্ত-ই-জামশী
দেশটির সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক স্থাপত্যমূলক কাজের বিখ্যাত নাম পার্সপোলিস। এটি আখেমেনীয় শহরে অবস্থিত। এর আরেক নাম তক্ত-ই-জামশী। এটি মূলত ফার্স অঞ্চল ও পার্সিয়ানদের শহর। আচেমেনিদের সময়কালে একে পার্স নামে ডাকা হতো।
পরবর্তীকালে স্থানটি সেন্টো কলোননে, কোয়ান্টা কলোননে, কোয়ান্টা মিনারেটি এবং তখত-ই-জামশীদ নামে পরিচয় লাভ করে। তাসারা প্রাসাদ এমনকি সাসানীয় রাজার শিলালিপিও রয়েছে এখানে। দেশটিতে ইসলামের আবির্ভাবের পর স্থানটিকে নির্দিষ্ট বিবেচনায় দেখা হতো।
শাহর-ই সোখতা
শাহর-ই সোখতা নামে প্রাচীন এই স্থাপনাটি ইরানের জহেদন শহরে অবস্থিত। বিশালতা ও বিশেষ অবস্থার কারণে এলাকাটি প্রত্নতাত্ত্বিক ও গবেষকদের কাছে বেশ পরিচিত। ইটালিয়ান প্রত্নতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মাধ্যমে ১৯৬০ সালে এর প্রাথমিক খননকার্য শুরু হয়। কালের বিবর্তনে এখনো এর খননকার্য চলছে।
শুশতার জলবাহী সিস্টেম
শুশতার জলবাহী ব্যবস্থা হোমোনিমাস শহরে অবস্থিত। অতি প্রাচীন এই কাঠামোটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য কৌশল। এখানে রয়েছে সেতু, বাঁধ, জলপ্রপাত, খাল এবং বিপুলসংখ্যক টানেল। ২০০৯ সালে স্থানটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সুসাদের অপদানা প্রাসাদ
প্রাসাদটি সুসাদ শহরে অবস্থিত। এটি আচেমিডিন রাজাদের শীতকালীন প্রাসাদ। পাথর, দেবদারু কাঠ ও কাঁচা ইটের তৈরি এই ইমারতের অনেক নাম রয়েছে। এর মধ্যে দারিয়াসের প্রাসাদ ও সুসাদের প্রাসাদ উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ সালে ইউনেস্কো প্রাসাদটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
উল্লেখ্য, ইরানের এসব স্থাপনা মার্কিন আগ্রাসনের শিকার হলে অচিরেই বিশ্ব তার বুক থেকে ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শনই হারিয়ে ফেলবে বলে দাবি বিশ্লেষকদের।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড