স্বাস্থ্য ডেস্ক
রান্নার মসলা হিসেবে বহুল পরিচিত দারুচিনি আসলে গাছের ছাল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভেষজ এই গাছের ডাল রান্নার স্বাদ আর গন্ধ বৃদ্ধির সাথে সাথে নানা গুণে সমৃদ্ধ।
বিশ্ব সেরা সাত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারের মাঝে রয়েছে দারুচিনি। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও সিনামাইড, সিনামিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, প্রোটিন, ফাইবার, কয়েক ধরনের অ্যাসেনশিয়াল অয়েল, ভিটামিন কে, আয়রন ও সিনোমেট নামে বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। এ সকল উপাদান নানাভাবে আমাদের শরীরের উপকার করে থাকে। চলুন জেনে নেই দারুচিনির কিছু খাদ্যগুণ-
পেটের সমস্যা সমাধান-
পেটের ব্যথা দূর করতে দারুচিনির অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান অনেক উপকারী। এমন অনেকে আছেন যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে হজম ও গ্যাসের সমস্যাসহ ঠিকমতো পায়খানা হয় না। এক্ষেত্রে আপনি যদি রাতে ঘুমানোর আগে দারুচিনির সাথে হরিতকীর গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। আর যদি আপনি অ্যাসিডিটি সমস্যা থেকে মুক্তি চান, তাহলে দারুচিনির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ-
গবেষকদের মতে, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে দারুচিনি খুবই উপকারী। প্রতিদিন আধা চা চামচ দারুচিনির গুঁড়ো রক্তে খারাপ কোলেস্টোরল এলডিএলের মাত্রা কমিয়ে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা ও রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
স্নায়ুরোগ প্রতিরোধ-
দারুচিনির মধ্যে থাকা নিউরো প্রোটেক্টিভ প্রোটিন ব্রেন ও স্নায়ুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পারকিন্সন ও অ্যালজাইমার রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি-
দারুচিনিতে থাকা জীবাণুনাশক উপাদান মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা করে। প্রতিদিন গরম পানির সাথে দারুচিনি মিশিয়ে কুলি করলে অথবা চিবিয়ে খেলে মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ব্যথানাশক-
দারুচিনিতে থাকা ৬৮% ম্যাঙ্গানিজ দেহের রক্ত ও টিস্যু গঠনের সাথে সাথে হাড় মজবুত করে। দেহের পেশিজনিত ব্যথায় দারুচিনির তেল মালিশে আরাম পাওয়া যায়। মাথা ব্যথা দূর করাতেও দারুচিনির জাদুকরী ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। দারুচিনি দিয়ে তৈরি এক কাপ চা নিমিষেই দেয় মাথাব্যথা থেকে মুক্তি। আর যারা বাতের ব্যথায় ভুগছেন, এই দুইয়ের ব্যবহারে তারাও বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পাবেন।
ক্যানসার প্রতিরোধক-
দারুচিনির মাঝে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডিএনএ নষ্ট হতে দেয় না ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমারের বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করেন। এছাড়াও দারুচিনিতে আছে সিনাম্যালডিহাইড নামক একটি উপাদান, যা লিউকোমিয়া ও লিমফোমা ক্যান্সার কোষের প্রভাব কমিয়ে ক্যানসার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
অ্যালার্জির সংক্রমণ কমায়-
দারুচিনিতে থাকা জীবাণুনাশক উপাদান ত্বকের চুলকানি, অ্যালার্জি ও বিভিন্ন সংক্রমণ রোধে দারুণ কাজ করে। ত্বকের কোথাও ফুলে গেলে, ব্যথা হলে, লালচে হয়ে গেলে দারুচিনির নির্যাসযুক্ত তেল সরাসরি ত্বকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ব্রণ ও ফুসকুড়ি হলে দারুচিনির সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর হবে।
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি-
দারুচিনি দেহের রক্ত তরল থাকতে সাহায্য করে। মাত্র ২ ঘণ্টায় রক্তের মন্দ কোলেস্টরেলের পরিমাণ ১০ শতাংশ করে কমিয়ে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম-
মেয়েদের পিরিয়ডের আগে শরীরের ভারসাম্য পরিবর্তনের কারণে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যা প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা পিএমএস নামে পরিচিত। দারুচিনিতে থাকা ম্যাঙ্গানিজের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও ওজন হ্রাসে সহায়ক-
খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন দারুচিনি রাখলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া এর কিছু উপাদান স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।
খাদ্যে বিষক্রিয়া-
খাদ্য বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হলে দারুচিনি খেলে উপকার পাওয়া যায়। এটি পাকস্থলির ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস দমন করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
জানলেন তো দারুচিনির এত উপকারিতা। তাই রোজকার খাদ্যতালিকায় যোগ করুন উপকারী এই মসলাটি।
ওডি/এওয়াইআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড