সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
অন্যান্য সমস্যার চাইতে জ্বর এবং মাথাব্যথাতেই মানুষ বেশি ভুগে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাথাব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খেয়ে নিই আমরা। কিন্তু এই সামান্য মাথাব্যথার পেছনে কিন্তু বড় কোনো কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে। বিশেষ করে, মাইগ্রেনের সমস্যা তো থাকতেই পারে মাথাব্যথার কারণ হিসেবে। আপনার মাথাব্যথা কি সাধারণ কিছু, নাকি মাইগ্রেন? চলুন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
মাইগ্রেন কী?
একটা নিয়মিত সময় পর পর যদি আপনার মাথাব্যথা তৈরি হয় এবং সাথে বমিভাব ও সর্দির মতো ব্যাপারগুলো হতে থাকে সেক্ষেত্রে এটি মাইগ্রেন হলেও হতে পারে। শিশুদের মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এই সমস্যাটি সবচাইতে বেশি দেখা দেয় বয়ঃসন্ধিকালে। বয়স যত বাড়তে থাকে, সাথে মাইগ্রেনের সমস্যাও কমে যেতে শুরু করে। তবে মেনোপোজ শেষ হওয়ার পর নারীদের মধ্যে এই মাইগ্রেনের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
ট্রাইজেমিনো-ভাসকুলার সিস্টেম চালু হওয়ার কারণে আমাদের লোকাল নিউরাল মেকানিজমে প্রদাহ তৈরি হলে সেখান থেকে সাধারণত মাইগ্রেন শুরু হয়। পিইটি স্ক্যানে পাওয়া তথ্যানুসারে, মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথে রোগীর মস্তিষ্কের পন এরিয়ায় পরিবর্তন দেখা যায়।
মাইগ্রেনের রকমভেদ-
সাধারণত, মাইগ্রেন দুই রকমের হয়ে থাকে।
১। ক্লাসিক মাইগ্রেন-
এই ধরণের মাইগ্রেনে ব্যথা শুরু হওয়ার আগেই রোগী এক রকমের সংকেত পান। এই সংকেত নানারকম হতে পারে। এক্ষেত্রে, কখনো তারা অতিরিক্ত আলো দেখতে পান বা তাদের দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা তৈরি হয়। আবার শ্রবণ ও গন্ধশক্তিতেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। দিনের যেকোন সময় এই মাইগ্রেন তৈরি হয়।
২। লক্ষণ ছাড়া মাইগ্রেন-
এই ধরণের মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ আগে থেকে পাওয়া সম্ভব হয় না। এমন মাইগ্রেনের শিকার হন বেশিরভাগ মানুষ।
সতর্ক হবেন কীভাবে?
আপনার মাইগ্রেন শুরু হচ্ছে সেটা বোঝার জন্য কিছু লক্ষণই যথেষ্ট। এই যেমন-
১। হুট করে মন বদলে যাওয়া বা ক্ষুধা বেড়ে বা কমে যাওয়া ২। উজ্জ্বল আলো, গান, গন্ধ ইত্যাদি চারপাশে অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে মনে হওয়া এবং প্রতিবার মাথা আনড়ানোর সাথে সাথে ব্যথা আরও বেড়ে যাওয়া ৩। পরিবারে কারও আগে থেকেই মাইগ্রেন থাকা ৪। প্রথমে মাসে ১-২ বার ব্যথা হওয়া এবং পরবর্তীতে এই পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি ব্যাপারগুলো দেখতে পেলে আপনার মাইগ্রেন আছে কিনা সেটা নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করুন।
কেন মাইগ্রেন হয়?
আপনার কার্যক্রমের ফলাফল হিসেবে মাইগ্রেন তৈরি হতে পারে। এই যেমন-
শরীরে হরমোনের পরিবর্তন, অনেক বেশি কফি বা মদ্যপান করা, কাজের অনেক চাপ, পারফিউমের করা গন্ধ, উজ্জ্বল আলো, কম ঘুমানো, নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া ইত্যাদি কারণে মাইগ্রেন তৈরি হতেই পারে।
মাইগ্রেন ও সাধারণ মাথাব্যথার মধ্যে পার্থক্য কী?
মাইগ্রেন মানেই মাথাব্যথা। তবে সাধারণ মাথাব্যথার সাথে মাইগ্রেনের পার্থক্য হলো-
১। মাইগ্রেনের সাধারণত এপিসোড থাকে। মাথার একটি নির্দিষ্ট অংশেই এক্ষেত্রে ব্যথা হয়, সাথে বমি ও সর্দি থাকে। সাধারণ মাথাব্যথায় মাথার দুইপাশেই ব্যথা হয়। মূলত, মানসিক চাপ থেকেই এমন ব্যথা হয়ে থাকে।
২। মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে, পরিবারে আগে কারও মাইগ্রেন থাকলে ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মথাব্যথার ক্ষেত্রে অবশ্য এমন কোন ব্যাপার থাকে না। মাথাব্যথার সাথে পরিবারের কোন সম্পর্ক নেই।
৩। মাইগ্রেন তৈরি হওয়ার পেছনে নির্দিষ্ট কিছু কারণ থাকে। তবে সাধারণ মাথাব্যথার ক্ষেত্রে থাকে না।
৪। মাথাব্যথার জন্য সাধারণ ওষুধ সেবন করাটাই যথেষ্ট। কিন্তু মাইগ্রেনের জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ ও সেবার দরকার পড়ে।
মাইগ্রেন খুব ভয়ংকর কিছু না হলেও এর ফলে আপনার প্রতিদিনের জীবনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই, আপনার মাথাব্যথার কারণ মাইগ্রেন কিনা তা জেনে নিন এবং সেই অনুসারে জীবন যাপন করে সুস্থ থাকুন।
সূত্র- রেডিফ।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড