• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন : নতুন বাবা হওয়ার পর পুরুষের হতাশা

  সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

১৬ জুলাই ২০১৯, ১৫:১১
পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন
ছবি : প্রতীকী

সন্তান জন্মের পর কি শুধু মায়েদের মধ্যেই হতাশা কাজ করে? সবার মধ্যে এই ধারণা কাজ করলেও মূলত, বাবাদের মধ্যেও নানারকম হতাশা চলে আসে। এ সময়, একজন নারী যেমন হুট করে অনেক পরিবর্তনের মুখে পড়েন মা হওয়ার পর, একজন পুরুষের ক্ষেত্রেও এই একই ব্যাপার ঘটে।

নারী যেমন অনেকটা সময় একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকেন এবং সন্তান জন্মের আগের সময়টুকুতেও পরিবর্তনের স্বাদ পান, তাই মা হওয়ার পর মানিয়ে নেওয়াটা তার জন্য পুরুষের চাইতে কিছুক্ষেত্রে সহজ হয়। তবে পুরুষেরা হুট করেই এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হওয়ায় নানারকম সমস্যা জন্ম নেয়। চলুন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-

সম্প্রতি আমেরিকান একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানায় যে, স্ত্রীর গর্ভধারণের তিনমাস থেকে শুরু করে সন্তান জন্মের পরবর্তী ছয়মাস পর্যন্ত পুরুষের এই মানসিক হতাশা কাজ করে। বিশেষ করে, সন্তান জন্মের তিন থেকে ছয়মাসের মধ্যে বাবাদের এই হতাশা শতকরা ২৬ শতাংশ বেড়ে যায়। বাবাদের মধ্যকার এই হতাশা বা মানসিক চাপকেই পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন বলে।

পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন কেন হয়?

সন্তান জন্মের প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন বাবাদের মধ্যে হতাশার পরিমাণ শতকরা ৬৮ শতাংশ বেড়ে যায়। সাধারণত, গর্ভধারণের সময় নারীদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়। এ জন্যই তাদের মানসিক নানারকম হতাশা কাজ করে। কিন্তু পুরুষদের মধ্যেও এই সময়ে হরমোনের পরিবর্তন আসে। কেন এমন হয় সেটার কারণ অবশ্য এখনো চিকিৎসকেরা সঠিকভাবে জানতে পারেননি।

আর এই পরিবর্তনটাই আরও কঠিন হয়ে যায় সন্তান জন্মের পরবর্তী সময়ে বাড়তি চাপ, ঘুমের অভাব ইত্যাদির কারণে। তবে শুধু ঘুম নয়, এছাড়াও অর্থনৈতিক সমস্যা, নিজের বাবার সাথে বাজে সম্পর্ক, স্ত্রীর সাথে নেতিবাচক সম্পর্ক সন্তানের অসুস্থতা বা নিজের অসুস্থতা ইত্যাদিও এর পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে।

একাকীত্বের প্রভাব-

একজন নারী মা হওয়ার পর চারপাশের সবার কাছ থেকে এবং চিকিৎসকদের কাছ থেকেও মানসিক অনেক সাহায্য পেয়ে থাকেন। মানুষ সাধারণত ভেবে থাকেন যে, নারীরা এ সময় অনেক মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান বিধায় সন্তান জন্মের পরবর্তী সময়ে নারীরাই মানসিকভাবে নেতিবাচক অনুভূতি পাবেন।

অন্যদিকে, পুরুষদের এ ক্ষেত্রে দৃঢ় একজন সঙ্গী হিসেবেই দেখা হয়। খুব কম সময়েই পুরুষের বাবা হওয়ার পরের অনুভূতি নিয়ে ভাবে চারপাশের মানুষ। এতে করে নিজেকে বাবা হিসেবে এই নতুন অভিজ্ঞতার সময় একেবারেই একা হিসেবে খুঁজে পান একজন পুরুষ।

এ ছাড়া, স্ত্রীকে সঙ্গ দিতে হয় তাকে সবসময়। ফলে নিজের মানসিক স্থিরতা হারিয়ে ফেলেন তারা মাঝে মাঝে। বিশেষ করে, বর্তমানে নারী ও পুরুষের অবস্থান সমাজে অনেকটা সমান হয়ে এসেছে। পুরুষও নারীর মতো ঘরে থেকে, সন্তানের দেখাশোনা করছে। সংসারের অনেকটা সামলে নিচ্ছে। এই অবস্থায় একেবারেই কোনো মানসিক সাহায্য না পেলে সেই অনুভূতি থেকেই হতাশা বোধ করেন অনেক নতুন বাবা।

বাবাদের এই হতাশা বোঝার উপায় কী?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষেরা নতুন বাবা হওয়ার পর তাদের মধ্যকার যে হতাশা সেটার প্রকাশ করেন রাগের মাধ্যমে। শুধু আপনি নন, আপনার চারপাশের যে কেউই এই হতাশার মধ্যে দিয়ে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন যে, যিনি নতুন বাবা হয়েছেন তিনি কি-

● অনেকটা সময় হুটহাট করে রেগে যাচ্ছেন? ● তিনি কি সন্তানের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন একটু একটু করে? ● স্বাভাবিক কোনো কাজে বা স্ত্রীর সাথে কথা বলায় কি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন? ● তার পরিবারে এর আগে কি হতাশায় ভুক্তভোগী কেউ আছেন বা ছিলেন? ● নেতিবাচক চিন্তা অনেক বেশি করছেন? ● কথা বলার সময় নেতিবাচক শব্দগুলো বেশি ব্যবহার করছেন? ● কর্মক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি সময় ব্যয় করছেন?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি হ্যাঁ হয় এবং আপনার সঙ্গী যদি ধীরে ধীরে নিজেকে আরও বেশি অযোগ্য এবং হতাশ একজন মানুষ বলে ভাবতে থাকেন তাহলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।

পুরুষের ক্ষেত্রে হওয়া পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন হয়তো খুব সহজ, ছোট ও স্বাভাবিক। তবে এই অবস্থায় নতুন বাবা যদি মানসিকভাবে কোনো সাহায্য না পান তাহলে একটা সময় খুব বাজে কোনো মোড়ও নিতে পারে তার এই হতাশা।

তাই, শুরু থেকেই চেষ্টা করুন পরিবার ও চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে সমস্যাটিকে কাটিয়ে উঠতে।

সূত্র- প্যারেন্টস, ওয়েবএমডি।

ওডি/এনএম

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড