আপনি কেন গর্ভধারণ করতে পারছেন না?

একটি ফুটফুটে সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন, অথচ কোনোভাবেই কাজ হচ্ছে না? নানাবিধ কারনেই সন্তান হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন একজন নারী। চলুন, সন্তান না হওয়ার সম্ভাব্য কারণ ও এর সমাধানগুলো সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক-

ইনফার্টিলিটি বা সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা কী?

সাধারণত, নারী ও পুরুষের উৎপাদন ক্ষমতায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে ইনফার্টিলিটি দেখা দেয়। জরায়ুর নানা সমস্যা, এন্ডোমেট্রোসিসের মতো সমস্যার কারণে একজন নারী সন্তান জন্ম দিতে সমস্যাবোধ করতে পারেন।

অনেকসময়, একজন নারী প্রথমবার সন্তান জন্ম দিতে পারলেও দ্বিতীয়বারে গিয়ে সমস্যা বোধ করেন। একে সেকেন্ডারি ইনফার্টিলিটি বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে, প্রাথমিকভাবে নারীর শরীরে কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও পরবর্তীতে সেটা প্রকাশ পায়।

ইনফার্টিলিটি অবশ্য শুধু নারী নয়, পুরুষের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। বয়সের সাথে সাথে একজন পুরুষের শরীরে শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যায়। সেজন্য সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনাও কমে যায়। এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বাজে কোনো অভ্যাস বা বড় কোনো অসুস্থতার কারণেও এমনটা হতে পারে। নারী শরীর নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম্বাণু উৎপাদনের ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয়। ডিম্বাণুর পরিমাণ কমে এলে ইনফার্টিলিটি দেখা দিতে পারে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে নানারকম নতুন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই বাড়তি অসুস্থতার প্রভাবও সন্তান জন্মদানের ক্ষমতার উপরে প্রভাব ফেলে। কোনোভাবে এ সময় সন্তান ধারণ করলেও অকাল গর্ভপাত হওয়ার মতো ভয়ংকর কিছু ঘটাটা অমূলক নয়।

গবেষণায় দেখা যায় যে, ৩৫ বছরের কম বয়সী নারীদের মধ্যে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা ১৫ শতাংশ থাকে। অন্যদিকে, এর চাইতে বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ২০-৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়।

গর্ভধারণ করতে চান? মেনে চলুন এই ছোট্ট টিপসগুলো-

গর্ভধারণের জন্য যদি আপনি ইতোমধ্যেই চেষ্টা করে থাকেন, তাহলে এই টিপসগুলো মেনে চলুন। ব্যাপারটি আপনার জন্য আরও সহজ হয়ে যাবে।

দম্পতিদের জন্য-

১। যতটা দ্রুত সম্ভব সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করুন। ২। ওজন স্বাভাবিক রাখুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। ৩। ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।

নারীদের জন্য-

১। কফি পান থেকে বিরত থাকুন। খুব বেশি প্রয়োজন হলে দিনে এক কাপ কফি পান করুন। কারণ, অত্যাধিক কফি পান সন্তান ধারণের ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। ২। এ সংক্রান্ত সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য ফলিক এসিড গ্রহণ করুন।

পুরুষের জন্য-

১। খুব আঁটসাঁট অন্তর্বাস পরবেন না। ২। অত্যধিক গরম পানিতে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। ৩। এমন কিছু গ্রহণ বা ব্যবহার করবেন না যেটা পরবর্তীতে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে আপনার বুঝতে হবে যে, আসলেই আপনার কোনো সমস্যা আছে কিনা। এজন্য অন্তত এক বছর কোনো প্রতিরোধক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এরপরেও যদি গর্ভধারণ না করতে পারেন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।

প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক গাইনি চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। পুরুষের কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটাও দেখার চেষ্টা করা হবে। তবে আপনার পূর্বের কোনো অসুস্থতার কারণেও যেহেতু এমনটি হতে পারে, তাই তেমনটা হলে চিকিৎসক সে ব্যাপারেও সমাধান বের করার চেষ্টা করবেন।

জরায়ুর কোনো সমস্যা হলে সেটা বোঝা ও সমস্যার চিকিৎসা করাটা সহজ হয়ে যাবে। পুরুষের শুক্রাণুর পরিমাণ কমে এলে সেটাও ঠিকঠাক অবস্থানে আনা সম্ভব। তবে কোনোভাবেই কাজ না হলে আর্টিফিশিয়াল রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজির মাধ্যমে সন্তান ধারণ করা সম্ভব হবে।

এই পদ্ধতিকে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বলা হয়। এতে করে, কৃত্রিমভাবে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুকে ল্যাবরেটরিতে একসাথে এনে এরপর সেটা নারীর জরায়ুতে স্থাপন করা হয়।

তাই, সমস্যা যেটাই হোক না কেন, একেবারেই হাল ছাড়বেন না। চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। তার কথানুসারে চলুন। দেখবেন, খুব দ্রুতই সন্তান চলে এসেছে আপনার ঘরেও।

মূল লেখক- লোই শেন-ই কেলি, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।

ওডি/এনএম