স্পোর্টস ইনজুরি : ভবিষ্যতে কতটা প্রভাব রাখতে পারে?

খেলাধুলায় অংশ নেওয়া অনেক ভালো একটি ব্যাপার। আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। তবে, এই খেলাধুলার কারণেই অনেক সময় বড় রকমের আঘাত পেতে পারি আমরা। এমন সব স্পোর্টস ইনজুরিকে অনেকেই অবহেলা করে থাকেন। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না নেওায় অনেক সময় ভবিষ্যতে বড় রকমের সমস্যা তৈরি করে ছোটখাটো অনেক আঘাতও।

গবেষণায় দেখা যায় যে, একটি আঘাত পাওয়ার পর সেটাকে সহজেই ঠিক করে ফেলা সম্ভব হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। তবে বারবার একই সাথে আঘাত পেতে থাকলে এবং সেটার কোনো চিকিৎসা না করা হলে, পরবর্তীতে সেটি একেবারেই নিরাময়ের বাইরে চলে যায়। নিচে এমন কিছু স্পোর্টস ইনজুরি, যেগুলো অবহেলা করলে ভবিষ্যতে ঝুঁকি বাড়াতে পারে, সেগুলোর কথা বলা হলো-

কনুইয়ের আঘাত-

ফুটবল, রাগবি, বাস্কেটবলের মতো খেলার ক্ষেত্রে কনুইয়ে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়া স্কিইংয়েও এমন আঘাত পায় মানুষ। এসব খেলায় শরীরের নিম্নভাগ উপরিভাগের ওপরে প্রচুর শক্তি প্রয়োগ করে থাকে। এই চাপ সহ্য না করতে পারলে কনুই বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কনুইয়ের হাড় ভেঙে যাওয়া, স্থানচ্যুত হওয়া এবং পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি এক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দূর করতে যা করবেন-

কনুইয়ের সংযোগস্থলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেশি হলো ক্রুশিয়েট পেশি। এতে কোনোরকম বাজে প্রভাব পড়লে কনুই স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না। এমনটা হলে তাই দ্রুত স্ক্যান করানো প্রয়োজন। তেমন দরকার পড়লে চিকিৎসক সার্জারির মাধ্যমে সমস্যাটি দূর করে দিতে পারবেন।

গোড়ালির আঘাত-

গোড়ালির আঘাত পাওয়ার জন্য কোনো খেলাধুলা করার দরকার পড়ে না। আপনি একটু উল্টোপাল্টা পা ফেললেও এমনটা হতে পারে। এক্ষেত্রে গোড়ালির পেশি ছিঁড়ে যাওয়া, টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো ব্যাপারগুলো দেখা দিতে পারে। আর অবশ্যই, এই ব্যাপারটি পরবর্তীতে ভোগান্তিকে আরো বাড়িয়ে তুলতেই পারে।

দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দূর করতে যা করবেন-

গোড়ালির এই সমস্যার সমাধান দ্রুত না করা হলে পা পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরবর্তীতে গোড়ালির এই সমস্যা শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। শরীরের ভারসাম্য রাখার ক্ষেত্রে গোড়ালি যেহেতু বেশ বড় ভূমিকা রাখে, এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে সেখানেও। দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলা এবং এমআরআই করে আসলেও কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা তা চিহ্নিত করা এক্ষেত্রে বেশ জরুরি। খুব সহজেই এতে করে অস্টিওকন্ড্রিয়াল ইনজুরিকে এড়িয়ে চলা যাবে।

কাঁধের আঘাত-

আমাদের শরীর পরিচালনায় এবং নানারকম কার্যক্রমে কাঁধ বড় ভূমিকা রাখে। কাঁধে টিস্যু বাদেও কাফ মাসল, টেন্ডন, ল্যাব্রাম ও নানারকম পেশি থাকে। খেলাধুলার সময় এগুলোর কোনো একটি ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারে। বিশেষ করে মার্শাল আর্ট, রাগবি, বক্সিং ইত্যাদি খেলায় এই আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি থাকে।

দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দূর করতে যা করবেন-

আপনার কাঁধের সমস্যাটি কতটা গুরুতর তা জানার জন্য এক্সরের পাশাপাশি এমআরআই করাটাও প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সাইসিওথেরাপি আপনাকে সাহায্য করবে। তবে কাফ মাসল, টেন্ডন ও নরম টিস্যুতে আঘাত পেলে সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে। সমস্যার সমাধান দ্রুত না করলে পরবর্তীতে এটি খুব বাজেভাবে আপনাকে প্রভাবিত করতে পারে। শরীর পরিচালনায় কাঁধ যেহেতু খুব বড় ভূমিকা রাখে, এর উপরে পড়া নেতিবাচক প্রভাবও পুরো শরীরের উপরে পড়ে।

খেলাধুলার সময় আঘাত শরীরে লাগতেই পারে। তবে, এই আঘাতকে একটু হলেও কমিয়ে আনতে চাইলে খেলার আগে কিছুটা সময় ছোটখাটো কিছু শরীরচর্চা করুন। এতে করে পরবর্তীতে শরীরের পেশি ও সংযোগস্থল বাড়তি চাপ বোধ করবে না। আর আঘাতটাও কম পড়বে।

মূল লেখক- ডক্টর রমেশ সুব্রামানিয়াম, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।