সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
শিশুর মানসিক বৃদ্ধির জন্য নানারকম উপায় রয়েছে। আর এই উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো সঠিক খাবার গ্রহণ। পুষ্টিকর খাবার শিশুদের মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো সরবরাহ করে। এতে করে তাদের মস্তিষ্কের গঠন পরিপূর্ণতা পায় এবং বুদ্ধিবৃত্তি বাড়ে। আপনার শিশুকেও মানসিক বৃদ্ধিতে সাহায্যকারী এই খাবারগুলো দিতে চান? চলুন, আজ তাহলে জেনে নেওয়া যাক শিশুদের মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্যকারী এমন কিছু খাবারের নাম-
তৈলাক্ত মাছ-
ডিএইচএ ও ইপিএ-এর মতো ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিডে পূর্ণ তৈলাক্ত মাছ শিশুর মস্তিষ্ককে গড়ে উঠতে ও পরিচালনায় সাহায্য করে। আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৬০ শতাংশই ফ্যাট দিয়ে তৈরি। আর তাই ফ্যাট আমাদের আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুর গঠনে এবং স্মৃতিশক্তি রক্ষায়ও সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা যায় যে, যারা নিয়মিত ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন তাদের স্মৃতিশক্তি অন্যদের চাইতে তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে এবং মানসিক যেকোনো দক্ষতায় তারা পারদর্শী হয়।
ডিম-
ডিমে প্রোটিন থেকে শুরু করে আরও নানারকম পুষ্টিকর উপাদান থাকে যেটি আমাদের মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে গড়ে উঠতে ও সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তবে শুধু তাই নয়, ডিমে থাকে কোলাইন নামক একটি উপাদান, যেটি কিনা আমাদের মস্তিষ্কের একটি কোষের সাথে অন্য কোষের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রাত্যাহিক নানা কার্যক্রম পরিচালনাতেও ডিম আমাদের মস্তিষ্ককে সাহায্য করে। এটি তাই আপনার শিশুর মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাম-
কালোজাম, ব্লুবেরি ও স্ট্রবেরির মতো ফলগুলোতে থাকে অ্যান্থসায়ানিন এবং নানারকম ফ্ল্যাভোনয়েডস, যেগুলো শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি আমাদের মানসিক নানারকম চাপ থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। মানসিক চাপ মস্তিষ্কের উপরে বড় ও নেতিবাচক প্রভাব রাখে। সেটি কমানোর ক্ষেত্রে জাম অসম্ভব কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বাদাম ও বীজ-
বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার শিশুদেরকে খাওয়ানো বেশ সহজ একটি কাজ। আর এই খাবারগুলো শিশুর মস্তিষ্কের জন্যও অত্যন্ত কার্যকরী। প্রোটিনের সাথে সাথে এই খাবারগুলোতে আয়রন, জিঙ্ক ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এছাড়াও বাদাম ও বীজে ভিটামিন ই থাকে।
ভিটামিন ই মস্তিষ্কে হওয়া যেকোনো সমস্যাকে খানিকটা হলেও কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এই যেমন, কুমড়ার বীজে কপার, ম্যাগনেশিয়াম এবং জিঙ্ক থাকে। যেগুলোর কোনো একটির কমতি ঘটলেই মস্তিষ্কে বড় রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ফল-
যেসব ফলে ভিটামিন সি থাকে, সেগুলো আপনার শিশুর দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখুন। ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদান করবে মস্তিষ্ককে। এছাড়া, ভিটামিন সি শিশুর মানসিক যেকোনো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। মানসিক কোনো বিপর্যয় থেকেও এটি মস্তিষ্ককে দূরে রাখে।
সবজি-
উজ্জ্বল রঙের যেকোনো শাক-সবজি ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ থাকে। একটু গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ থাকে। পাতাসহ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ ফোলেট পাওয়া যায়। যেটি কিনা মস্তিষ্কের ডিএনএ গঠনে ও কোষের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর শাকসবজি খাওয়া যে আসলেও অনেক বেশি ভালো, তা তো আপনি জানেনই, তাই না?
মাংস-
লাল মাংস আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এটি থেকে আয়রনও অনেক বেশি পাওয়া যায়, যেটি কিনা মস্তিষ্কের নানাবিধ কার্যক্রমে প্রখর হতে এবং যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। মাংসে প্রচুর পরিমাণ জিঙ্ক থাকে। এতে করে মস্তিষ্কের স্নায়ুর ভেতরে সংযোগ স্থাপন করাও অনেক বেশি সহজ হয়। মাংসে আপনি ভিটামিন পাবেন প্রচুর পরিমাণে। যেটি আপনার শিশুর মানসিক দক্ষতাকেও বাড়িয়ে তুলবে।
আপনার শিশুটি নিয়মিত নানারকম খাবার খাচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর কতটা ইতিবাচক প্রভাব তার মস্তিষ্কের উপরে পড়ছে সেই খোঁজ কি আপনি রাখছেন? শিশুদের মস্তিষ্ক গঠন করার ক্ষেত্রে খাবার অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
তাদের মস্তিষ্কে খাবারের প্রভাব বড়দের চাইতেও বেশি পড়ে। তাই আপনার শিশুর খাদ্যতালিকায় এমন সব খাবার রাখুন যেগুলো তার শারীরিক ও মানসিক- উভয় বিকাশেই সাহায্য করবে।
মূল লেখক- লী জি মিয়েন, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড