সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
আপনার সামনের মানুষগুলো আপনার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তবু আপনার বারবার ভীড়ের মধ্যে মনে হয় যে, আপনি যেন একেবারেই একা। খুব কাছের মানুষটি যথেষ্ট চেষ্টা করছেন আপনার জন্য। সময় দিচ্ছেন আপনাকে। তবুও, সে একদিন দেখা না করলেই তার আগের করা সব চেষ্টার কথা ভুলে যাচ্ছেন আপনি। মনে হচ্ছে, এই মানুষটা কখনোই আপনার জন্য কিছুই করেনি।
প্রচণ্ড হতাশা, রাগ, আনন্দ- আপনার সব আবেগের প্রকাশ হচ্ছে প্রচণ্ড। হুট করে কিছু খেতে ইচ্ছে করলে মোটেও নিজেকে সামলাতে পারছেন না, ওজন বেড়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে হতাশা থেকে আত্মহত্যা এবং নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা কাজ করছে। এই সবকিছুই কি আপনার সাথে হচ্ছে? তাহলে হয়তো সময় এসেছে আপনার কোনো বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলার।
বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার :
বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার মূলত এক রকমের মানসিক সমস্যা। এর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে ভীষণ একা মনে করেন। এই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির অন্যতম বিশেষ দিকটি হচ্ছে, এদের মুড অনেক বেশি পরিবর্তিত হয়। এই ধরুন, কখনো তাদের মনে হলো চা পান করতে যাওয়া উচিত। আবার চা হাতে নিয়ে মনে হলো, আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।
এই মুড সুইং অবশ্য অন্য কারণেও হতে পারে। তবে খুব বেশি পরিমাণে ব্যাপারটি আপনার মধ্যে দেখা গেলে সেটি চিন্তার বিষয়। অন্যদিকে, ভুক্তভোগীরা প্রচণ্ড পরিমাণ রাগ, হতাশা, অবসাদ বোধ করেন। আর এই আবেগ ঘন্টাখানিক থেকে শুরু করে ২-৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
লক্ষণগুলো কী?
এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন যে, বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঠিক কী কী লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। খুব বিশেষভাবে বলতে গেলে এক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো মানুষের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়-
১। অত্যাধিক পরিমাণ নেতিবাচক আবেগ দেখা যাওয়া। এই আবেগ অবশ্য খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না।
২। প্রচণ্ড পরিমাণ হতাশায় ভোগা।
৩। কোনো মতামত স্থায়ী না হওয়া। খুব দ্রুত আবেগ, মতামত, চিন্তা- সবকিছুই বদলে যাওয়া। এই যেমন- এই ব্যক্তিরা আজকে যাকে খুব ভালো বন্ধু ভাবছেন, পরের মিনিটেই তাকে খুব ছোট কারণেই দূরের কেউ মনে করেন।
৪। কোনো সম্পর্কের ভেতরে প্রবেশ করতে কিছুটা দ্বিধাবোধ করা। আর একবার কাউকে খুব কাছের ভেবে নিলে সেই সম্পর্ক থেকে দূরে যাওয়ার কথা কল্পনাও না করতে পারা।
৫। পরিবার, বন্ধু, ভালোবাসার মানুষ- সবার সাথে খুব বাজে সম্পর্ক তৈরি হওয়া।
৬। নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা থাকা।
৭। আত্মহত্যা করা বা নেতিবাচক নানা চিন্তা মাথায় ক্রমান্বয়ে ঘুরপাক খাওয়া।
৮। সবসময় নিজেকে একা ভাবা। চারপাশে মানুষ থাকা স্বত্বেও শূন্যতা কাজ করা।
৯। কাউকে সহজে বিশ্বাস না করতে পারা।
১০। প্রচণ্ড রাগ হওয়া এবং এই রাগকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারা। এমন না যে উপরে বর্ণিত সবগুলো লক্ষণ আপনার মধ্যে থাকবে। তবে এর অনেকটা দেখতে পেলে আপনার এ ব্যাপারে খানিকটা গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।
সমস্যার সমাধান কী?
সাধারণত, বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের লক্ষণগুলো একজন মানুষকে হতাশ করে দেয় এবং সবার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যায়। যেহেতু তারা কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না, তাই চিকিৎসকের উপরেও বিশ্বাস হারান তারা। তবে কাছের মানুষেরা যদি এই সময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিক সাহায্য করেন, তাকে সময় দেন এবং একলা বোধ না করতে দেন, তাহলেই এই রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
চিকিৎসক উদ্বিগ্নতা ও অন্যান্য আবেগের প্রচণ্ডতা কমানোর জন্য অল্প ডোজের ওষুধ দিতে পারেন। তবে যেহেতু সমস্যাটি মানসিক, তাই এর সমাধানটাও মানসিক সাহায্যের মাধ্যমেই করা সম্ভব।
মানসিক কোনো সমস্যাকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে এমনটা হলে রোগী সিজোফ্রেনিক হতে পারে বা আত্মহত্যার মতো বড় পদক্ষেপ নিতে পারেন। তাই, আপনি আক্রান্ত ব্যক্তি হলে চিকিৎসকের কাছে যান। আর চারপাশে পরিচিত কারো এমন সমস্যা থাকলে তাকেও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও সুস্থ থাকুন!
সূত্র : ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড