• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভেরিকোজ ভেইন : শিরাজনিত এক কষ্টের অনুভূতি

  মাহমুদা আক্তার রোজী, ফিজিওথেরাপিস্ট

২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৩৯
ভেরিকোজ ভেইন
ছবি : প্রতীকী

আঞ্জুমান আরা একজন গার্মেন্টস কর্মী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে দাঁড়িয়ে কাজ করে। অনেকদিন ধরেই তার হাঁটুর পেছন দিকটায় ব্যথা করে, মাঝে মাঝে ফুলেও যায়। ডাক্তার দেখাবে দেখাবে করেও আর দেখানো হয়নি। বেশি ব্যথা করলে সে তেল মালিশ করে, এতে করে খানিকটা আরাম পায়। কিন্তু দিন দিন ব্যথার পরিমান বেড়েই চলেছে। সেদিন তার মা তেল মালিশ করার সময় দেখে হাঁটুর পিছনের শিরাগুলো প্যাঁচিয়ে নীল হয়ে ফুলে আছে। তিনি ভয় পেয়ে যান।

এবার আর আঞ্জুমান দেরী করে না, পরের দিনই ডাক্তারের কাছে আসে। কিন্তু দেরি যা হবার এতদিনে হয়ে গেছে। ডাক্তার তাকে জানায়, সুস্থতা ফিরে পেতে তার সার্জারি করতে হবে। অথচ রোগের প্রথম দিকেই যদি সে চিকিৎসা নিতো, তাহলে শুধু কিছু নিয়ম মেনে চললেই সে সুস্থ হয়ে যেতো। তার রোগটির নাম ভেরিকোজ ভেইন (Varicose vein) বা বর্ধিত শিরা। আমার আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ভেরিকোজ ভেইন বা বর্ধিত শিরা-

ভেরিকোজ ভেইন কী?

মানব দেহে শিরার মাধ্যমে রক্ত হৃদপিণ্ডে প্রবাহিত হয়। পায়ের শিরাগুলো নিচ থেকে উপরের দিকে রক্ত পরিবহন করে। কোনো কারণে পায়ের রক্তনালির প্রেশার বেড়ে গেলে শিরায় চাপ পড়ে, দীর্ঘদিন পায়ের শিরা এই অবস্থায় থাকলে ভেরিকোজ ভেইন বা বর্ধিত শিরা হয়।

কী কারণে ভেরিকোজ ভেইন হয়?

কোনো কারণে শিরা যখন তার নির্ধারিত কাজ (হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন) করতে পারে না। তখন পায়ের শিরায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে, এতে করে শিরার দেয়াল দূর্বল হয়ে যায়। ভেরিকোজ ভেইন সাধারণত পায়ের গোড়ালি হতে হাঁটুর মাঝখানের অংশে বেশি হতে দেখা যায়।

কারণসমূহ :

• জন্মগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ হৃদপিণ্ড থাকলে। • অনেকক্ষণ একনাগারে দাঁড়িয়ে/ বসে কাজ করলে। • পায়ের ওপর পা তুলে অনেকক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস থাকলে। • অতিরিক্ত ওজন। • গর্ভবতী মায়েদের এ রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

উপসর্গগুলো কী কী?

ভেরিকোজ ভেইন হলে শিরা গাঢ় নীল/বেগুনী রংয়ের হয়ে বেশ ফুলে মোটা হয়ে যায়। এটা চামড়ার ওপর থেকেই দেখা যায় । এছাড়া–

• পায়ে হাল্কা অথবা বেশি ব্যথা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যথার অনুভূতি নাও হতে পারে। • পা ভারী হয়ে যায়। • ভেইন বা বর্ধিত শিরায় অনেক সময় চুলকানি হতে পারে। • চামড়ার রঙ বদলে যায়। • চামড়া শুকনো, পাতলা হয়ে যায়। • ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

কীভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব?

ভেরিকোজ ভেইন চামড়ার ওপর সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। তারপরও প্রয়োজনবোধে ডাক্তার নিচের পরীক্ষাগুলো করাতে পারেন–

ডুপ্লেক্স আল্ট্রাসাউন্ড এগজাম অব এক্সট্রিমিটি এনজিওগ্রাম অব দ্য লেগস

চিকিৎসা :

ভেরিকোজ ভেইন হলে অবেক রোগীর কোনো চিকিৎসাই লাগে না। শুধু কিছু নিয়ম মেনে চললেই সুস্থ হয়ে যায়।

যেমন–

• বিশ্রাম নেবার সময়/ঘুমানোর সময় দুটি বালিশ পায়ের নিচে দিয়ে পা উপরে তুলে রাখতে হবে। • একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা/বসে থাকা পরিহার করতে হবে। • প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর একটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে। • পায়ের ব্যায়াম করতে হবে। • আক্রান্ত স্থান হাল্কাভাবে ম্যাসাজ করতে হবে।

রোগীর অবস্থা জটিল হলে সার্জারি করতে হবে।

যেমন–

• স্কেলেরো থেরাপি • লেজার চিকিৎসা • রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি চিকিৎসা • রিমুভ ভেইন

আসুন আমরা সবাই সচেতন হই। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে/ বসে না থেকে একটু হাঁটা চলাফেরা করি, সুস্থ থাকি।

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড