• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ কী?

  সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

০৫ মার্চ ২০২০, ০৮:৫৩
কোষ্ঠকাঠিন্য
কোষ্ঠকাঠিন্য নানা কারণে এবং নানা রকমভাবে হয়ে থাকে (ছবি : প্রতীকী)

কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে আমরা অনেকেই খুব অবহেলা দেখিয়ে থাকি। হ্যাঁ, মাঝে-মধ্যে এমন সমস্যা হওয়াটা খুব বড় ভয়ের কোনো ঘটনা নয়। তবে, কোষ্ঠকাঠিন্য যদি অনেকটা সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে সেটি কিন্তু বেশ চিন্তার বিষয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকসময় কোনো সমস্যা নয়, কোনো সমস্যার লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। তাই, এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে বড় কোনো শারীরিক অসুস্থতাও। আপনারও কি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে?

কোষ্ঠকাঠিন্য কী?

সাধারণত, একজন স্বাভাবিক ও সুস্থ মানুষ তিন দিনে তিন থেকে একবার পর্যন্ত মলত্যাগ করে থাকেন। আপনার যদি এমন নিয়মের ব্যত্যয় হয় এবং টয়লেটে দরকারের চাইতে বেশি সময় দিতে হয়, সে ক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে।

তিন দিনের বেশি মলত্যাগ না করলে একজন ব্যক্তির পাকস্থলীতে নানাবিধ সমস্যা, বমিভাব ইত্যাদি দেখা দেয়। তাই এমন অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এই সমস্যার ভুক্তভোগীরা সপ্তাহে দুইবার মলত্যাগ করতে সমর্থ হন। আপনার যদি-

> মলত্যাগ করতে অসম্ভব কষ্ট হয় > মল স্বাভাবিকের চাইতে ২৫ শতাংশ বেশি কাঠিন্য ধারণ করে এবং > মলত্যাগ কোনোভাবেই পুরোপুরি সম্পন্ন না হয় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলুন।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ কী?

সারা বিশ্বে প্রচুর পরিমাণ মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগে থাকেন। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করে-

> পানি কম পান করা, আঁশ কম খাওয়া ইত্যাদি খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা > অতিরিক্ত মানসিক চাপ > হরমোনের বড় রকমের পরিবর্তন > হতাশা, পারকিন্সন, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ইত্যাদি কোনো অসুস্থতা > গর্ভধারণ > ওষুধ সেবন করা এবং > কোলোরেক্টাল ক্যানসার

কোষ্ঠকাঠিন্যের ধরনগুলো কী?

কোষ্ঠকাঠিন্য নানা কারণে এবং নানা রকমভাবে হয়ে থাকে। অনেকসময় উপরের বর্ণিত লক্ষণ বা কারণগুলো নির্ধারিতভাবে কাজ না করলেও একজন মানুষের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। আর এই কোষ্ঠকাঠিন্যকে ‘ফাংশনাল কন্সটিপেশন’ বলা হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন এমন প্রায় ৩০ শতাংশ রোগী এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। এই কোষ্ঠকাঠিন্যকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হলো-

কোলোনিক ইনারশিয়া

মলত্যাগের জন্য কোনোরকম শারীরিক অবস্থার মুখোমুখি না হলে সে ক্ষেত্রে এটিকে কোলনিক ইনারশিয়া বলা হয়।

অবস্ট্রাক্টেড ডিফেকশন

অনেকসময় একজন মানুষের মলত্যাগের প্রয়োজন পড়লেও সে ক্ষেত্রে প্রচুর কষ্ট করতে হয় তাকে, চাপ প্রয়োগ করতে হয়। এই ব্যাপারটিকেই অবস্ট্রাক্টেড ডিফেকশন বলা হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগীদের অবস্থা কখনোই চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছায় না। ফলে সারাজীবন সমস্যাটিকে সঙ্গে নিয়ে, কখনো ল্যাক্সাটিভ ব্যবহারের মাধ্যমে সুস্থ থাকেন তারা।

চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করবেন কখন?

কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ঠিক কখন আপনি বুঝবেন যে এবার এই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাটি নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন? আপনার যদি-

১। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য চলতে থাকে এবং এমনটা আগে কখনো না হয় ২। মলে যদি রক্ত মিশ্রিত থাকে ৩। মলত্যাগের সময় অসম্ভব ব্যথা অনুভূত হয় ৪। খাদ্যাভ্যাসের কোনো পরিবর্তন ছাড়াই আপনার ওজন কমতে থাকে ৫। আপনার পরিবারে আগে কখনো কারও কোলোরেক্টাল ক্যানসার হয়েছে এবং আপনি কিছুদিন আগেই ৫০ বছর পার করেছেন

উপরোক্ত ব্যাপারগুলো আপনার সঙ্গে মিলে গেলে তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন এবং যথাযথ পরামর্শ নিন।

কোষ্ঠকাঠিন্য পরীক্ষা করা হয় কীভাবে?

রক্ত পরীক্ষা, স্ক্যান করা, কোলোনোস্কোপি, ট্রানজিট মার্কার স্টাডি, ডেফেকোগ্রাফি, অ্যানোমেট্রাল মেনো মেট্রি ইত্যাদি পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে কি না তা দেখা হয়।

আরও পড়ুন : কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে আমলকি

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকার উপায় কী?

সাধারণত কিছু খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তনই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। তবে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে যদি অন্য কোনো কারণ থাকে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক নানারকম পরীক্ষার পর আপনাকে অসমোটিক ল্যাক্সাটিভস, স্টিমুলেট ল্যাক্সাটিভস ইত্যাদি প্রদান করতে পারেন। আর কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে সার্জারি এবং অন্যান্য ওষুধের ব্যবস্থা তো আছেই।

কোষ্ঠকাঠিন্য কখনো স্বাভাবিক, কখনোই এটা ভাবা ঠিক নয়। ঠিক কখন একে অস্বাভাবিক হিসেবে মনে করতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে সেটা নির্ধারণ করাটাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার অবস্থাও উপরের লক্ষণগুলোর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে? তাহলে আর দেরি না করে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং নিয়ম মেনে চলুন।

ওডি/এনএম

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড