ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ ও প্রাণী সহাবস্থান করছে। এই প্রাণীগুলো নানাভাবে মানুষের উপকার করে থাকে। তবে প্রাণী ও পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান কম থাকায় শুধুমাত্র খাওয়া যায় ও স্বাভাবিক দৃষ্টিতে অবদান বোঝা যায় এমন প্রাণীর প্রতিই ভালবাসা জন্মে। আর অন্যান্য প্রাণী যাদের অবদান জ্ঞানের অভাবে বোঝা যায় না সেগুলোকে ঘৃণা করা যেন নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেউ যদি একটি কুকুরকে খাবার দেয় অনেকেই তিরষ্কার করতে থাকে। অনেকে হয়তো বলে বসে যেখানে মানুষই খাবার পায় না সেখানে এরা কুকুর-বিড়ালকে নিয়ে ভক্তি করছে! আসলে যদি জানা যায়, প্রাণীগুলো কীভাবে মানুষের উপকার করছে কিংবা মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রাণীগুলোর অবদান রয়েছে তবেই প্রাণীর প্রতি ভালবাসা জন্মাবে।
প্রাণীরা মানুষের নানা উপায়ে উপকার করছে। মানুষ পরিধেয় বস্ত্র, খাদ্যের চাহিদা, সৌখিন জীবনমান, ওষুধ ইত্যাদির অনেক কিছুই প্রাণী থেকে পেয়ে আসছে। আজকের লেখায় জানাবো বিভিন্ন ধরনের প্রাণী থেকে মানুষ কি ধরনের ওষুধ পাচ্ছে সেই সম্পর্কে :
শূকর : আমাদের দেশে যতগুলো ঘৃণিত প্রাণী রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে শূকর। অথচ এই শূকর থেকে মানুষের জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তৈরি হয়। যেমন মানুষের হাইপো-থাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড গ্লান্ডের সমস্যা হলে শূকরের শুকানো থাইরয়েড গ্লান্ড ব্যবহার করা হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হেপারিন তৈরি হত শূকরের নাড়িভুড়ি থেকে। তবে বর্তমানে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করার উপায় জানায়, শূকরের নাড়িভুড়ি থেকে হেপারিন উৎপাদন কমে গেছে। শূকর ছাড়াও টার্কি, তিমি, উট, ইঁদুর, মানুষ, লবস্টার, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি থেকেও হেপারিন তৈরি করা যায়।
মানুষের অগ্নাশয়ের এনজাইমের ঘাটতি পূরণ বা অগ্নাশয়ের কোন সমস্যা হলে শূকরের অগ্নাশয় নিঃসৃত এনজাইম ব্যবহার করা হয়।
ঘোড়া : আপনি জানেন কি, নারীদের মেনোপজ বা রজঃ বন্ধ হলে প্রিমারিন নামক ওষুধ ব্যবহার করা হয়? এই প্রিমারিন তৈরি করা হয় ঘোড়ার প্রস্রাব থেকে! ঘোড়ার প্রস্রাবে প্রচুর পরিমাণ ইস্ট্রোজেন হরমোন থাকায় এই প্রস্রাব ব্যবহার করা হয়। প্রিমারিন ওষুধ তৈরির জন্য প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার ঘোড়ার প্রস্রাব ব্যবহার করা হয়।
প্রাণীর তরুণাস্থি : আমরা জানি, ক্যাপসুলে একটি আবরণ থাকে যা জেলাটিন নির্মিত। এই জেলাটিন নির্মিত আবরণ ও চিবিয়ে খাওয়ার উপযোগী বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন তৈরি করতে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর তরুণাস্থি, হাড়, লিগামেন্ট, টেনডন বা রগ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত এজন্য গরু, শূকর, গবাদি পশু ইত্যাদি থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো সংগ্রহ করা হয়।
প্রাণীর হাড় ও ডিমের খোলস : বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর হাড়ে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। ক্যালসিয়ামযুক্ত ওষুধ তৈরিতে প্রাণীর হাড় ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে ক্যালসিয়ামের সম্পূরক উৎস হিসেবে ডিমের খোলস ব্যবহার করা হয়।
ভেড়া : ভেড়ার সেবাসিয়াস গ্লান্ড বা তৈলাক্ত পদার্থ নিঃস্রাবী গ্রন্থি থেকে তৈরি করা হয় ল্যানোলিন নামক গুরুত্বপূর্ণ একটি ওষুধ। এই ওষুধ মানুষের শুষ্ক ও খসখসে ত্বক আর্দ্র করার চিকিৎসায় ও বিভিন্ন ধরনের চুলকানি প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের ফলে পোড়া ত্বকের চিকিৎসায়ও ল্যানোলিন ব্যবহার করা হয়। ল্যানোলিন ছাড়াও ভেড়ার উল বা পশম থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করা হয়।
গবেষণা থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৭৪ ভাগ ব্যবহৃত ওষুধ আসে গরু, শূকর এবং মাছ থেকে। যদিও গবেষণা থেকে জানা যায়, ডাক্তার এবং রোগীরাও এ বিষয়ে সামান্যও ভাবেন না যে তাদের ওষুধগুলোর অধিকাংশই প্রাণী থেকে এসেছে।
ওমিপ্রাজল, সিমভাস্টাটিন, লিভোথাইরক্সিন, ওয়ারফারিন, সিটালোপ্রাম, কোডেইন, অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রোফেন, হাইড্রোকর্টিসন ইত্যাদি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তৈরিতে প্রাণীর উপজাত বা বাই-প্রোডাক্ট ব্যবহৃত হচ্ছে।
তথাপিও না জেনে আমরা প্রতিনিয়ত এসব প্রাণীদের অবজ্ঞার চোখে দেখি। জানার পরও কি প্রাণীদের অবহেলা করবেন?
তথ্যসূত্র : লাইভস্ট্রং ডট কম, হলিজটিক ভেট ডট কম, ওয়েবমেড ডট কম।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড