• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ক্রোমিয়ামের এ স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো জানেন তো?

  ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম

২৭ জুলাই ২০১৮, ০৮:৩৩
cromium
ক্রোমিয়ামসমৃদ্ধ খাবার

মানব শরীর সুস্থ রাখতে নানাবিধ ধাতব উপাদান এবং খনিজ পদার্থের প্রয়োজন হয়। এই উপাদানগুলো বিপাকীয় কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নানা ধরনের খনিজ উপাদানগুলোর মধ্যে যে খনিজ উপাদানগুলো মানব শরীরের জন্য প্রয়োজন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্রোমিয়াম।

১৭৯০ সালের শেষের দিকে ক্রোমিয়াম আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু মানব শরীরে ক্রোমিয়ামের অবদান সম্পর্কে জানা যায় ১৯৫০ সালের দিকে। ইঁদুরের শরীরের রক্তে শর্করা সংরক্ষিত করে একটি গবেষণা করার সময় মদ উৎপাদনে ব্যবহৃত ছত্রাক থেকে ক্রোমিয়াম আবিষ্কৃত হয়।

ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস, হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখা, ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ, মস্তিষ্ক সুস্থ রাখা, সুস্থ ত্বক ও ব্রণ প্রতিরোধ, শরীরে পুষ্টি উপাদান শোষণ, বিপাকীয় ক্রিয়া উন্নতকরণ, চোখ, হাড়, লিভার বা কলিজা ইত্যাদি সুস্থ রাখতে ক্রোমিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে জানা যায়।

তথাপিও আমাদের দেশে ক্রোমিয়াম সম্পর্কে ভীতি রয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত কোনকিছুই যেমন শরীরের জন্য ভাল নয় তেমনই হয়ত ভাল নয় ক্রোমিয়ামও। অতিরিক্ত ক্রোমিয়াম গ্রহণ ক্যান্সারের কারণ হতে পারে বলেও অনেক গবেষক মনে করেন। তবে নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ক্রোমিয়াম গ্রহণ করা শরীরের জন্য উপকারী।

ক্রোমিয়ামের উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জানানোর পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের National Institutes of Health (NIH) এর সুপারিশকৃত ক্রোমিয়ামের দৈনিক স্বাভাবিক মাত্রা সম্পর্কে জেনে নিন: • পুরুষ (১৯-৫০ বছর) - ৩৫ মাইক্রোগ্রাম এবং ৫০ বছরের অধিক হলে ৩০ মাইক্রোগ্রাম • মহিলা (১৯-৫০ বছর) - ২৫ মাইক্রোগ্রাম এবং ৫০ বছরের অধিক হলে ২০ মাইক্রোগ্রাম • গর্ভবতী মহিলা (১৯ বছরের অধিক) - ৩০ মাইক্রোগ্রাম আর • স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য (১৮ বছরের অধিক বয়সী) ৪৫ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম প্রয়োজন।

এই ক্রোমিয়াম ০-৬ মাস বয়সী শিশুদের জন্যও প্রতিদিন ০.২ মাইক্রোগ্রাম প্রয়োজন। এভাবে বিভিন্ন বয়সী কিশোর-কিশোরীদেরও বিভিন্ন মাত্রায় ক্রোমিয়াম গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। আমেরিকার প্রখ্যাত ডাক্তার এন্ড্রিউ ওয়েল, যিনি চিকিৎসাবিদ্যায় গুরু বলে পরিচিত তিনি মাল্টি-ভিটামিন মাল্টি-মিনারেল হিসাবে প্রতিদিন ২০০ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অপরদিকে যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সমস্যা অথবা বিপাকীয় সমস্যা রয়েছে তাদেরকে গ্লুকোজ টলারেন্স ফ্যাক্টর ক্রোমিয়াম ১ হাজার মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ক্রোমিয়ামের উৎস :

আমরা নানা ধরনের খাবার থেকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ক্রোমিয়াম পেয়ে থাকি। মদ উৎপাদনে ব্যবহৃত ছত্রাক, ব্রোকলি, আঙ্গুরের জুস, মাংস এবং শস্যদানাতে প্রচুর ক্রোমিয়াম পাওয়া যায়। কিছু ফলমূল, শাক-সবজি, মশলা, লেটুস, কাঁচা পেঁয়াজ, পাকা টমেটো, যব, মটরশুটি, গোল মরিচ, শুকনো রসুন, কমলার জুস, আলুবোখারা, ডিমের কুসুম ইত্যাদি হচ্ছে ক্রোমিয়ামের ভাল উৎস।

মনে রাখা দরকার, দেশে বিভিন্ন সময় মাংস ও ডিমে প্রাপ্ত ক্রোমিয়াম নিয়ে ভীতি ছড়ানো হয়। কিন্তু মাংস ও ডিমে স্বাভাবিকভাবেই ক্রোমিয়াম পাওয়া যায়। সুতরাং মুরগির খাদ্যের দ্বারা ক্রোমিয়াম ছড়াচ্ছে এমন ভীতি ছড়ানো উচিৎ নয়।

ক্রোমিয়ামের উপকারিতা :

মানব শরীরে ক্রোমিয়ামের যে সকল উপকারিতার কথা জানা যায় এখন সেগুলোর উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা জানব।

১। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ : ক্রোমিয়াম গ্লুকোজ, ইনসুলিন ও রক্তের চর্বির বিপাকে সহায়তা করে। এরা ইনসুলিনকে কোষের সাথে বন্ধনযুক্ত হতে সহায়তা করে ও বিভিন্ন ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। সুতরাং ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্রোমিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া উচিৎ।

২। কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস : ক্রোমিয়াম কোলেস্টেরল ভেঙ্গে শরীরে কোলেস্টেরল জমতে বাধা প্রদান করে। কোলেস্টেরল জমতে না পারায় হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমলে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ক্রোমিয়ামযুক্ত ওষুধ সেবন করার প্রয়োজন পড়তে পারে।

৩। ওজন বৃদ্ধিতে বাধা : ক্রোমিয়াম রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করে, চর্বি ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা দূর করে। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাধা দিয়ে ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।

৪। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি : ক্রোমিয়াম মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। এছাড়া বয়স বাড়লেও মস্তিষ্কের ক্রিয়া ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পেতে দেয় না।

৫। হাড়ের ক্ষয়রোধ : ক্রোমিয়াম প্রস্রাবের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম বের হয়ে যেতে বাধা দেয়। এছাড়াও কোলাজেন তন্তু উৎপন্ন করে ও হাড়ে ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সহায়তা করে। ফলে হাড়ের ক্ষয়রোধ হয় ও হাড় সুস্থ থাকে।

৬। লিভার সুস্থ রাখা : অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাধা দিয়ে ক্রোমিয়াম লিভার বা কলিজা সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তবে লিভারের কোনো প্রকার সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ক্রোমিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অথবা ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত মাত্রায় বা লিভারের রোগে ক্রোমিয়াম ক্ষতিকর হতে পারে।

ক্রোমিয়ামের প্রধান প্রধান কয়েকটি উপকারিতা জানা হল। এসব উপকারিতা জানার পর নিশ্চয়ই ক্রোমিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণে ভীতি থাকবে না। সুতরাং সুস্থ থাকতে ক্রোমিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিৎ।

তথ্যসূত্র : ড. ওয়েল ডট কম, ফুড সিরিজ ডট কম, ডায়াবেটিস.কো.ইউকে ও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক জার্নাল।

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড