সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
সম্প্রতি হাসপাতালে এক শিশুর কাপড়ে মাল্টিড্রাগ-রেসিস্টেন্ট প্যাথোজেন খুঁজে পাওয়া যায়। কোথা থেকে এসেছে এই প্যাথোজেন? অনেক খুঁজে প্যাথোজেনের উৎস পাওয়া যায় হাসপাতালের ওয়াশিং মেশিনে। সেখান থেকে এই সংক্রামক জীবাণু এসেছে বলে জানা যায়। শুধু হাসপাতালের এই ওয়াশিং মেশিনই নয়, বর্তমানে কাপড় ধোয়ার জন্য আমরা যে যন্ত্র ব্যবহার করছি তার বেশিরভাগই জীবাণু দূরীকরণে খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে না। আপনার ওয়াশিং মেশিনটি নিরাপদ তো? চলুন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
সব ওয়াশিং মেশিনই কি বিপদজনক?
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, হাসপাতালের ওয়াশিং মেশিন হয়তো এমন জীবাণু ধারণ করতেই পারে। কিন্তু তার মানে কি এই যে, ঘরে ব্যবহৃত ওয়াশিং মেশিনও নিরাপদ নয়? হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, হাসপাতালে ব্যবহৃত ওয়াশিং মেশিন সাধারণ ওয়াশিং মেশিনের চাইতে বেশি ব্যাকটেরিয়া ধারণ করবে, এই সম্ভাবনা থেকেই যায়।
তারপরেও, আগে আমরা যে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করতাম, সেগুলোতে যতটা তাপমাত্রা ব্যবহার করা হতো তারচাইতে অনেক কম তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয় বর্তমান সময়ের ওয়াশিং মেশিনে। তাই, এই যন্ত্রে জীবাণু তুলনামূলকভাবে কম মারা যায়। আগের ওয়াশিং মেশিনগুলোতে যে তাপমাত্রা ব্যবহার করা হতো সেটা শক্তি সঞ্চয়ী ছিল না। যথাযথ শক্তি সঞ্চয় করতে এবং কাপড়কে আরও ভালোভাবে পরিষ্কার করতেই নতুন সব প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন ওয়াশিং মেশিন তৈরি করা হয়েছে।
এতে তাপমাত্রা ১৪০ ডিগ্রির কম রাখা হয়। যেটি বেশিরভাগ জীবাণুকেই দূর করতে পারে না। এছাড়া এতে করে জীবাণু ওয়াশিং মেশিনের ভেতরে জমে যায় এবং বাড়ার সুযোগ পায়। প্রতিবার কাপড় পরিষ্কারের সময় এই জীবাণুর পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং কাপড়ের সাথে মিশে যায়।
এই জীবাণু কতটা বিপদজনক?
ভালো ব্যাপারটি হচ্ছে, ওয়াশিং মেশিনের এই জীবাণুগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ক্ষতিকর নয়। বিশেষ করে, প্রতিনিয়ত নানারকম ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হই আমরা। আমাদের শরীর এসব ব্যাকটেরিয়া সহ্য করার এবং প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। তাই ওয়াশিং মেশিনের এই ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের শরীরে খুব বেশি ক্ষতিকর প্রভাব রাখবে না। তবে, হাসপাতাল বা অনেক বেশি মানুষের কাপড় ধোঁয়া হয় এমন কোনো ওয়াশিং মেশিনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হলেও হতে পারে। তবে একটা পর্যায়ে এসে এই জীবাণুর ক্ষতিকর হয়ে ওঠারও যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।
কেন সতর্ক হওয়া প্রয়োজন?
আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন যে, আমাদের শরীরের জন্য দৈনন্দিন জীবনে ওয়াশিং মেশিন থেকে আসা এই জীবাণু ক্ষতিকর না হলে কেন এর ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন? উত্তরটি খুব সহজ। আর সেটি হলো এই যে, আমাদের সবার শরীর একইরকম নয়। একটি পরিবারে যেমন তরুণবয়সী একজন সদস্য থাকতে পারেন, তেমনি একজন বয়স্ক মানুষ কিংবা শিশুও থাকতে পারেন। আর অন্যদের চাইতে কিছু মানুষের রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তাদের জন্য এক্ষেত্রে ওয়াশিং মেশিন থেকে আসা এই জীবাণু ক্ষতিকর হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, একই জীবাণু ধীরে ধীরে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে একই জীবাণু প্রাথমিকভাবে যতটা নেতিবাচক ভূমিকা আপনার শরীরে রাখতে পারত, তার চাইতে কয়েকগুণ বেশি প্রভাব পরবর্তীতে আপনার শরীরে সেই একই জীবাণু রাখতে পারে। তাই, জীবাণুকে শক্তিশালী হয়ে ওঠা থেকে থামাতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
তাই চেষ্টা করুন এ ব্যাপারে যত বেশি সম্ভব সতর্ক থাকার। আপনার ওয়াশিং মেশিনকে আলো-বাতাস আছে এমন একটি স্থানে রাখুন। এছাড়া, প্রতি সপ্তাহে মেশিনটিকে পরিষ্কার করুন। ঠিক কোন পদ্ধতিতে, কতটা তাপমাত্রায় কাপড় পরিষ্কার করলে মেশিনে জীবাণুর পরিমাণ কমে আসবে সেটা নির্ধারণ করার চেষ্টা করুন। সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন ছোট ছোট সব ব্যাপারেই খেয়াল রাখা। তাই, এবার থেকে ঘরের আসবাবের পাশাপাশি ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কারের দিকেও খেয়াল রাখুন। সুস্থ থাকুন।
সূত্র- হেলথলাইন
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড