• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমার স্বপ্নদ্রষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  মায়িশা মালিহা

০১ জুলাই ২০২০, ১৯:৫২
কার্জন হল
ছবি : সংগৃহীত

প্রায় প্রতিদিন ই কার্জনের কথা মনে পড়ে। ক্লাস শেষে যখন ৫ মিনিটের জন্য হলেও কার্জনে বসতাম, বাতাসটা মৃদুমন্দ, শান্ত। আমার প্রাত্যহিক ব্যস্ত জীবনে যেন একমাত্র স্বস্তির নিঃশ্বাস, এইটুকু প্রশান্তি যেন ছিল। আজকাল প্রতিটা অলস বিকেলে কার্জনের ঘাসে বসে থাকা একাকী আমিময় দিনগুলির কথা ভাবি। ক্যাম্পাসে যাওয়া হয় নি প্রায় সাড়ে তিন মাস। এনেক্স এর ভূগোলের ক্লাসরুম, জিআইএস ল্যাব অথবা আমাদের ওভাল শেইপের মাঠ- সবকিছুই কেমন করে যেন আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমাকে।

সকাল বেলার জার্নিটা শুরু হয় ‘বসন্ত’ তে চড়ে। কিঞ্চিৎ অথবা তীব্র বিরক্তিকর অনুভূতি নিয়ে প্রতিদিনই বাসের জানালার পাশের সিটটাকে নিজের সঙ্গী করে নেই। হেডফোন কানে গুজে ঘুম ঘুম চোখে সকাল ৮টা ৩০ বা ৩২ এ শহীদ মিনারের সামনে এসে কখন নামি মাঝেমাঝে হুঁশ পাই না। রাস্তার অপর পাশে আমাদের এনেক্স। সকালের স্নিগ্ধ নরম আলোয় প্রথম চোখ পরে শহীদ মিনারের সবচেয়ে উঁচু মিনারটায়, কেমন যেন একটা শিহরণ কাজ করে ভেতরে। অদ্ভুত একটা উদ্দামতা আছে ওইটার মাঝে, কারণে-অকারণে হঠাৎই ভীষণ জীবন্ত করে তোলে আমাকে, কি জানি!

ক্লাসে যাওয়ার আগে এক কাপ মালাই চা এ চুমুক আমার চাই ই চাই। সকাল বেলায় ক্যাম্পাসে এসে চা খাওয়াটা আমার মিষ্টি বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। চা ওয়ালা মামাও আমাকে চিনে গেছেন এই অল্প কয়দিনে, দেখলেই কড়া লিকার কম চিনি লাগায় দিচ্ছি দাঁড়াও মামা বলে উঠেন! কি বিচিত্র!

দিনের অধিকাংশ সময় কাটে ২০৩ নম্বর কক্ষের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাসরুমে। বেঞ্চের চক্কর, ক্লাসরুমের আড্ডা, খুনসুটি থেকে আমার কেন জানি না দিনশেষে কার্জনে বসে থাকা অথবা কলাভবন -ভিসি চত্বর পর্যন্ত একা একা হেঁটে গিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করা তেই বেশি আনন্দ। টিএসসি, হাকিম চত্বর অথবা আইবিএর ওইদিকটা, কখনও মধুর ক্যান্টিন, ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া টুকটাক ঘুরাঘুরিতে দিন চলে যায়। অবসর যে টুকুই পাই ক্যাম্পাসে হাঁটতেই ভালো লাগে-আড্ডায় মুখরিত থাকতে নয়।

কতো লক্ষ কোটি কিংবদন্তীর সাক্ষী শতবর্ষী বটবৃক্ষ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। লাখো তরুণের স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, আমাদের পথদ্রষ্টা। জানি না বিধির কি বিধান, কেন ই বা শত বিপর্যয়ের মধ্যেও তিনি আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে পা রাখার। যদিও স্বপ্নের হাতছানি সঙ্গত কারণেই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল!

আরও পড়ুন : কোথায় গেল ৬০০ একর?

জানি না বিশ্ববিদ্যালয়কে কতটুকু কি দিতে পারব, অথচ প্রতিনিয়ত তার থেকে শুধু নিয়েই চলেছি। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে যেন জড়িয়ে গেছে স্বপ্নের এ নগরী। যদি কোনো দিন আমার দৃপ্ত পদধ্বনিতে মুখরিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, আমার সফলতার স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পারি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহাত্ম্য তবেই আমার সার্থকতা। জানি একদিন স্বপ্নের ভোর আসবেই, যেদিন আমিও আমার বিশ্ববিদ্যালয় কে কিছু দিতে পারব! আশা রাখছি, আবারও শীঘ্রই ফিরব ক্যাম্পাসে-পরিচিত কোনো এক সকালে, এনেক্সের মাঠে অথবা কার্জনে উদাস বিকেলে একাকী নির্জনতায়। আবারও হাঁটব প্রতিনিয়ত চেনা পথে কোনো এক সুন্দর দিনে, সুস্থ পরিবেশে। আবারও ফিরে পাব প্রাণচাঞ্চল্য, অসাধারণ সুন্দর মুহূর্তগুলো। আমি আসছি আবার ফিরে আমার ক্যাম্পাস, অপেক্ষা করো। ভালোবাসার ক্যাম্পাস আমার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক : শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ (১ম বর্ষ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড