শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
ফল বিপর্যয়ের প্রতিবাদে ও পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুনের নিকটে বিভাগের ১৮০ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
প্রতিনিয়ত ফল বিপর্যয়ের কারণে কর্মজীবনে মূল্যায়ন না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিন দফা দাবি পেশ করে শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো- বিভাগের সার্বিক ফল তদন্ত করা, সম্প্রতি প্রকাশিত সকল শিক্ষাবর্ষের ফল পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন করে প্রকাশ ও দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর থাকা সমাজবিজ্ঞান সমিতিকে কার্যকর করা।
লিখিত স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ধারাবাহিকভাবে এ ফল বিপর্যয় চলমান রয়েছে, যা খুবই হতাশাজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ফল দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তুলনায় খুবই নগণ্য। এছাড়া পাঠ্য বহির্ভূত কাজেও বিভাগ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘদিন ধরে ফল বিপর্যয়ের ধারাবাহিকতায় রবিবার (১৫ মার্চ) বিভাগের নোটিশ বোর্ডে ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ফল প্রকাশিত হলে এ ক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে।
নোটিশ বোর্ডে প্রকাশিত এ তিনটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সিজিপিএ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনার্স ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ৫৫ শিক্ষার্থীর একজনও এ মাইনাস (৩.৫০) বা এর উপরে পায়নি। এছাড়া নয় শিক্ষার্থী বি প্লাস, ৩৫ শিক্ষার্থী বি, ৯ শিক্ষার্থী বি মাইনাস এবং ২ শিক্ষার্থী সি প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়া এ ব্যাচে একজন শিক্ষার্থী অকৃতকার্যও হয়েছেন।
এছাড়া ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ৫২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯ শিক্ষার্থী বি প্লাস, ২৯ শিক্ষার্থী বি, ৮ শিক্ষার্থী বি মাইনাস, ৪ শিক্ষার্থী সি প্লাস ও ১ শিক্ষার্থী সি গ্রেড পেয়েছেন। এ ব্যাচেও কোনো শিক্ষার্থী এ মাইনাস (৩.৫০) বা এর উপরে পাননি।
এ দিকে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ৬৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ শিক্ষার্থী বি প্লাস, ২২ শিক্ষার্থী বি, ২৩ শিক্ষার্থী বি মাইনাস, ১২ শিক্ষার্থী সি প্লাস ও ৩ শিক্ষার্থী সি গ্রেড পেয়েছেন। এ ব্যাচের কোনো শিক্ষার্থী এ মাইনাস (৩.৫০) বা এর উপরে পাননি।
সার্বিকভাবে বিভাগের তিনটি ব্যাচের মোট ১৭২ জন শিক্ষার্থীর সর্বশেষ প্রকাশিত ফলে কেউই সিজিপিএ ‘এ গ্রেড’ (৩.৭৫) কিংবা এর উপরে পাননি। শুধুমাত্র এক শিক্ষার্থী সিজিপিএ ‘এ মাইনাস’ ৩.৫৩ পেয়েছেন।
এতে সিজিপিএ ৩.২৫ কিংবা এর উপরে পেয়েছেন মাত্র ২২ জন। বাকি ১৪৮ শিক্ষার্থীর সিজিপিএ ‘বি প্লাস’ অর্থাৎ ৩.২৫ বা এর নিচে। এর প্রেক্ষিতেই শিক্ষার্থীরা ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
কর্মক্ষেত্রে যোগদানে এ ধরনের ফলের প্রভাব পড়ে বলে জানিয়েছেন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন : চবি সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
শিক্ষার্থীদের দাবি, কতিপয় শিক্ষার্থীর রেজাল্ট খারাপ হলেও বিষয়টি মানা যায়। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে সবগুলো ব্যাচের সবার রেজাল্ট খারাপ মানা যায় না। এ জন্য ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছি। এছাড়া বিভাগের শিক্ষকদের ফল খারাপ হওয়ার কারণ খুঁজে বের করা উচিত। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিজিপিএ ৩.৫০ এর নিচে পেলে শিক্ষকতা করার কোনো সুযোগ থাকে না।
এছাড়া এ বিষয়ে আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যে বিভাগীয় সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য স্মারকলিপিতে সময় বেঁধে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন বলেন, ‘রেজাল্টের সঙ্গে বিভাগের শিক্ষকরা সবাই সম্পৃক্ত। সব খাতা আমি একা দেখি না, আবার সব কমিটিও আমার না। এখানে আমার একার হাত নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিয়েছে, এ নিয়ে বিভাগের সকল শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিং ডেকেছি। স্মারকলিপি সেখানে তোলা হবে। সেখানে শিক্ষকরা যা বলবেন তাই সিদ্ধান্ত হবে।’
ওডি/এমআরকে
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড